প্রিয় আসাদ,
কেমন আছ তুমি?
নিশ্চয়ই আমার এই চিঠি পেয়ে অনেক হাসছ তুমি?
আর হাসবেই বা না কেন?
তুমি চলে যাওয়ার পরে এদেশ যে মূ্র্খই রয়ে গেছে
শুনলে অবাক হবে এদেশে আজ কোন শিশু ডাস্টবিনের পাশে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মরলেও আমরা তাদেরকে
‘যা, ভাগ, ফকিরের দল’ বলে তাড়িয়ে দিই আর গাড়িতে বসে আরাম করে হ্যামবারগার চিবাই।
কোন গুণী লেখক মারা গেলে তার জন্য শোক প্রকাশ না করে তার ব্যক্তিগত জীবনকে
জনগণের রঙ্গমঞ্চের পাঠশালায় পরিণত করি,
আর আমরা পত্রিকা নামের এক কমেডি শোতে সেই খবর দেখতে দেখতে ভুড়িটা এলিয়ে, গাটা দুলিয়ে হাসতে থাকি আর মুড়ি খাই।
কোন স্কুলের ছাত্রীকে নৃশংস ভাবে রেপ করা হলে সেই মেয়ের উদ্দেশে অনেক প্রশ্নের বাণ ছুড়ে দিই
কিন্তু সেই নরখাদক গুলো পৈশাচিক হাসি দিয়ে আরেকটি মেয়েকে শিকার বানানোর জন্য এগিয়ে যায়
আর পুরুষের দল নাক চেপে ধরে বলে,’লজ্জা নারীর ভূষণ,বুঝলে?’
কোন গিন্নিকে তার স্বামী বর্বর ভাবে পিটালে পাড়া প্রতিবেশিরা কান বন্ধ রাখে
পাছে এসব শুনলে যদি তাদের কোন বিপদ হয়
এক সময় সে গিন্নী যদি আত্বসম্মানের গ্লানিতে গলায় ওড়না পেচায়
বা কোন এক ধারাল অস্ত্রে যদি তার স্বামী তার ভোকাল কর্ডটিকে কেটে ফেলে যেন তার নামে কোন কটু কথা না বলে
তখন সেই প্রতিবেশিরা নিজেদের ভোকাল কর্ড চেপে ধরে বলে,’কই, ওই বাসা থেকে এরকম কোন আওয়াজ শুনিনি তো!’
যখন কোন মেধাবী ছেলের তরতাজা শরীরটা টায়ারের নিচে পড়ে লাল রক্ত হয়ে রাস্তায় গা ভাসিয়ে দেয়
তখন আমাদের যোগ্য মন্ত্রীটি বলেন,’ আল্লাহর মাল আল্লাহই নিয়েছে, আমি কি করতে পারি?’
কিংবা ‘এসব ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ আমার এখতিয়ারের বাইরে’।
যখন কোন নিরীহ সাধারণ ছাত্র আমাদের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে পড়তে গিয়ে
কোন এক ছুরির আঘাতে নিজের প্রান খুইয়ে
বাবা মায়ের অর্জিত সকল আশাকে ভন্ডুল করে ফেলতে বাধ্য হয়
তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রীরা হয়ত বলেন, ‘যে মরেছে,সে নিজের দোষেই মরেছে,এসব কি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?’
শুধু কিছু মানুষ হয়ত জানবে যারা হত্যাকারী তারা এই সরকারের ছাত্র রাজনীতির অংশ
তারা নির্মল বিনোদনের খোড়াক পেয়ে হাসবে আর আরও কিছু পাখি শিকারে ব্যস্ত থাকবে।
কোন সুবোধ নামাজী ছেলেও আজ নামাজ পরতে মসজিদে যেতে ভয় পায়,
তুমি হয়ত ভাববে কেন, কিন্তু কিছু ‘আল্লাহর পথের মানুষ’ দ্বীনের দাওয়াত প্রচার করে
তাদেরকে ‘হিউম্যান বম্ব’ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।
কিন্তু এই অবস্থা আটকাতে গেলে কিছু মানুষ হুংকার দিয়ে বলে,
‘আল্লাহর বাণী প্রচার করতে গেসে তো, তাই এসব শয়তান গুলার সহ্য হয় না,
নারী প্রধানমন্ত্রী তো তাই ভয় পায়, আরে হেরা আইলে বুরখা পরতে হইব যে বুঝেন না?’
আমাদের অসংখ্য শিক্ষার্থী আজ বেকার ঘুরে বেরাচ্ছে
কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলেই কেউ বলবে,’ শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন নিয়ম খুলে দেখতে হবে কাজ করে কিনা’,
আবার কোন বুদ্ধিদীপ্ত শিক্ষক চশমার ফাক দিয়ে হেসে বলবেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থার কোন দোষ নেই, আমরাও
তো এই শিক্ষা ব্যবস্থাতেই পরে এসেছি, সবই এখনকার ছেলেমেয়েদের ইন্টারনেট আর অমনোযোগিতার ফল।‘
বেড়ীবাধে বা আশুলিয়া তে একের পর এক গুম হওয়া লাশ পাওয়া যাচ্ছে
হয়তবা নাম পরিচয়বিহীন এই লাশগুলোকে কোন দয়ালু ব্যক্তি কবর ও দিয়ে দিচ্ছেন
কিন্তু আমাদের দেশের র্যা ব বা পুলিশ নামের মাথামোটা লোকগুলো অফিসে বসে টুথপিক দিয়ে
দাত খুচাচ্ছে আর বলছে, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি, আপনারা নিশ্চিত থাকুন’।
আবার কোথাও হয়তো ডাকাত ভেবে কিছু ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে,
এদের বাবা মায়ের অশ্রু যখন এর প্রতিবাদ করে তখন সন্দেহভাজন কিছু গলা প্রশ্ন করে,
‘শবে বরাতের রাতে নামাজ পড়া বাদ দিয়ে এরা কেন ঐখানে গিয়েছিল,শুনি?
নিশ্চয়ই কোন খারাপ মতলব ছিল।’
কোন নিরীহ টোকাই মিছিলের সামনে পড়ে যখন অবাক চোখ দুটো মেলে নিস্তব্ধ হয়ে রাস্তায় ধুলি ধুসরিত হয়ে পড়ে থাকছে,
তখন গর্বিত পুলিশটি বলছে,’আরে, ওই পার্টির দালাল ছিল, ক্রসফায়ারে মারা গেসে, কিসসু করার নাই’।
এসব সার্কাস দেখেও আমরা চুপ করে বসে আছি
কারণ আমাদের প্রতিবাদের শক্তি,ভাষা,আগ্রহ,স্পৃহা-সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে
আমরা আর তোমাদের মত মানুষ নেই
এজন্যই তো আজ তোমার উদ্দেশ্যে আমার এই চিঠি
সৃষ্টিকর্তাকে একটা অনুরোধ করবে যেন এই দেশে কিছু বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে পাঠান?
ইতি
অদ্ভুত বাংলাদেশের হতভম্ব নাগরিক