somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পটকা ভাই ম্যানহোলে

৩০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের আড্ডার মধ্যমণি হচ্ছেন পটকা ভাই। এলাকার অনেক বড় ভাইয়ের আড্ডারও মধ্যমনি ছিলেন পটকা ভাই। নিজের প্রেমিকার বিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ফ্রেন্ড সার্কেল এর বিবর্তন পটকা ভাইয়ের জীবনের একটা বড় অংশ দখল করে আছে। বিলকিসের বিয়ে হয়ে যাবার পর থেকে পটকা ভাই কেমন যেন উদাস উদাস ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ান। নিজের সরকারি চাকরি করা বাবার ঘুষের টাকার প্রতি তার অনেক রাগ থাকায় উনি সেগুলো দিয়ে সিগারেট কিনে ধোয়া বানিয়ে উড়িয়ে দেন। পটকা ভাইয়ের এমন উদাস উদাস ভাব আমাদের বুকে ভীষণভাবে বাজিল। আমরা চিন্তিত হয়ে পড়লাম। আড্ডায় আর প্রান নেই। সেদিন আমাকে হঠাৎ এসে বললও,
-নোমান আমার জন্য একটা চাকরি দেখতে পারবি?
-কেন? আঙ্কেল কি ঘুষ খাওয়া ছেড়ে দিছে?
আমার এমন উত্তরে পটকা ভাই আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন, নিশিও হার মানবে এই দৃষ্টির কাছে। আমি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করলাম,
-কি ধরনের চাকরি দরকার আপনার?
-পিজা ডেলিভারির।
শুনে খটকা লাগলো প্রানে। ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। শুধু কালা না, বহুত খুবসুরুত কালা হ্যায়। আমাদের এই এলাকায় রিমি আপার পিজা প্রীতির ব্যাপারে জানেনা, এমন কোন মানুষ নেই। এমনকি বাচ্চাদের মায়েরাও নাকি তাদের ঘুম পাড়ান এই বলে, না ঘুমালে, রিমি তোমাকে পিজা বানিয়ে খেয়ে ফেলবে। বাচ্চারাও পিজা হয়ে যাবার ভয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তবে কি পটকা ভাই রিমি আপুর প্রেমে পড়লেন? সর্বনাশ! রিমি আপুকে দেখলে মনে হয় আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলন এ স্বর্নপদক পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমাদের মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস আছে, উনি অলিম্পিকে গেলে স্বর্ন পদক মিস গেলেও ব্রোঞ্জ মিস যাবেনা। আমাদের মধ্যে জলিল একটু বেশি ত্যাদড়। সেও দেখি আমার মনের ভেতর ঢুকে বসে আছে!
সে বত্রিশ দাঁত (মতান্তরে ৩১) বের করে বলল,
-ঘটনা কি ভাই? রিমি আপার প্রেমে পড়লেন নাকি?
জবাবে পটকা ভাইয়ের লাজুক হাসি দেখে আমরা আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। সর্বনাশ তাহলে ঘটে গেছে! আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-রিমি আপার প্রেমে পড়ার সাথে পিজার ডেলিভারি ম্যান হওয়ার সম্পর্ক কি?
পটকা ভাইয়ের বরাতে জানা গেল, একমাত্র পিজা ডেলিভারি ম্যানকেই নাকি রিমি আপার ম্যান মনে হয়। এছাড়া আর কারো নাকি ম্যানলি ভাব নেই। আমরা আরো বেশি চিন্তিত হলাম, ঘটনা শুনে। আমরা কোন সমাধান খুঁজে পেলাম না। পটকা ভাই আর উদাস হয়ে গেলেন। আমাদের আড্ডা আর মরে গেল। পটকা ভাইয়ের মন খারাপটা আমাদের আর সহ্য হচ্ছিলোনা।
একদিন দুপুরে পটকা ভাই রিমি আপাদের বাসার সামনে উদাস হয়ে হাঁটাহাঁটি করতে গিয়ে বাসার সামনের ম্যানহোলে পড়ে গেলেন। যে ম্যানহোল রিমি আপার মত হস্তিনীকে গেলার সাহস করলোনা, সেই ম্যানহোল পটকা ভাইকে অর্ধেক গিলে ফেলল। আর সেইসময় পটকা ভাই রিমি আপার বারান্দা হতে ভেসে আসা হাসির শব্দে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। ভাবলেন, রিমি আপা হাসছে। তিনি ভাব মেরে তাকিয়ে দেখেন রিমি আপাদের কাজের মেয়ে সখিনা হাসছে। পটকা ভাই রেগে গেলেন। ম্যানহোল থেকে উঠে পড়লেন। এমন সময় তার কাছে ফোন এল। রিমি আপা ফোন দিয়েছে! তিনি ফোন রিসিভ করলেন,
-হ্যালো রিমি।
-তুমি নাকি ম্যানহোলে পরে গেছ?
রিমি আপা খিলখিল করে হেসে উঠলেন। হাসি শুনে পটকা ভাইয়ের মন ভরে গেল। রিমিকে বিয়ের পর বেয়াদপ সখিনাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। পটকা ভাইয়ের মাথা হটাৎ শ্রাবণের আকাশের মত ক্লিয়ার হয়ে গেল।
-রিমি শোন, আমি ভেবে দেখলাম ম্যানহোলে পড়াটা ভালো হয়েছে। ম্যানহোলে মানুষ পরে বলে এটার নাম ম্যানহোল। তারমানে এটাতে যারা পরে তাদের মধ্যে ম্যানলি ভাব আছে।
রিমি আপা এই কথা শুনে হাসি থামিয়ে বললেন,
-ঠিক বলছো। এখন থেকে তুমি তাহলে ম্যানহোলেই থাকো। ম্যানলি ভাব আরো বাড়ুক।
সেই থেকে বেশকিছুদিন ধরে পটকা ভাই ম্যানহোলে বসত গড়েছেন। আর আমরা সবাই উদাস হয়ে ম্যানহোলের চারপাশে ঘুরছি।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×