somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ভিশন ২০২১ - এর প্রতিবন্ধকতা

২৯ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভিশন ২০২১ -এর প্রতিবন্ধকতা
ফকির ইলিয়াস
==============================

শেষ পর্যন্ত যেতেই হলো তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। তার পদত্যাগ না করে কোনো উপায় ছিল না। মাঝে মাঝে এ রকম যেতে হয়। না গেলে রাজনীতির সমান্তরাল পটভূমি তৈরি হয় না। আমরা যারা বিবর্তনের কথা বলি। তারা জানি মন্ত্রিত্ব কোনো স্থায়ী পদ নয়। মন্ত্রিত্ব আসে মন্ত্রিত্ব যায়। উন্নত বিশ্বে এমন উদাহরণ আমরা অনেক দেখেছি। বাংলাদেশে জবাবদিহির রাজনীতির খুব অভাব। আর সেই অভাবের কারণে দলগুলোর মাঝে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আর হয়নি বলেই বারবার সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

বাংলাদেশে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় নিয়ে বেশ একটি জটলা তৈরি হয়েছিল। এই জটলার অন্যতম কারণ ছিল, পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশ বনাম বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের টানাপড়েন। এই টানাপড়েন এতো দীর্ঘ হয়ে উঠেছিল, এর তল্লাশি হয়েছে বিদেশী পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃকও। এটা ছিল একটি হতাশাজনক অধ্যায়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপক্ষ বারবারই বলেছে, টাকাই যেখানে বরাদ্দ হয়নি, সেখানে দুর্নীতি হলো কিভাবে? পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থ নিয়ে দুর্নীতি কিংবা স্বজনপ্রীতি হয়েছে কী হয়নি, তা নিয়ে আমি বিতর্কে যেতে চাই না। কিন্তু এটা দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সে অবস্থা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

মনে পড়ছে বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী, মি. ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব নেয়ার পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমি শেষ সময়ের মন্ত্রী, যা করার দ্রুত করবো এবং সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করবো নিষ্ঠার সঙ্গে।

প্রাজ্ঞ রাজনীতিক ওবায়দুল কাদের সে চেষ্টা করেছেন বলে আমরা মনে করি। কিন্তু তার পুরো টিম কী সেই চৈতন্য ধারণ করে কাজ করছেন? একটি জাতির উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে তার আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। দেশের ইন্টারসিটি ট্রেন সার্ভিসগুলোর প্রধান সমস্যা হচ্ছে সময়ের অনিশ্চয়তা। ‘নয়টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে’, এমন কথা আমরা আগেও শুনেছি। এখনো শুনছি। আর ট্রেনের ছাদে মানুষের সংখ্যা! তা কেবল বেড়েই চলেছে। মানুষ লাফ দিয়ে পার হচ্ছে ট্রেনের কম্পার্টমেন্টের ছাদ। তেমন আলোকচিত্র আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছে! বাহ, আমাদের দেশ তো এগিয়েছেই! না এগোলে তো চলন্ত ট্রেনে আমরা লাফ দিতে পারতাম না।

চলতি সপ্তাহে আমি ঢাকায় ছিলাম। ছয়দিন ঢাকা ঘুরা হলো। সিলেট থেকে বাসযোগে। ঢাকার যাত্রাপথ ছয়ঘণ্টার। এটা প্রস্তাবিত সময়। কিন্তু হাইওয়ে ধরে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আসার পরই থেমে যায় বাসের গতি। মহাসড়কের দুরবস্থার কথা লিখে শেষ করার মতো নয়। এমন দশা প্রায় চার মাইল রাস্তার। আমার কথা হচ্ছে এই রাস্তাটি দিয়ে কী দেশের ভিআইপিরা মোটেও চলাচল করেন না? এই রাস্তাটি চলাচলের উপযুক্ত করতে পনেরো কোটি টাকা লাগতে পারে বড়জোর। রাষ্ট্র কেন যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি এমন তাচ্ছিল্য দেখাচ্ছে? এই উদাসীনতার কারণ কী?

প্রকাশিত সংবাদে আমরা জেনেছি, সেতু বিভাগের সাবেক সচিবকেও ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। লক্ষ্য, পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংকের চাওয়ার ফর্দ পূরণ করা। এই বিষয়ে কিছু কথা আমার কাছে দ্বিমুখী, আত্মঘাতী বলেই মনে হচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আর বিদেশী সাহায্য নয়, নিজেদের অর্থেই পদ্মা সেতু হবে। এ সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর দেশের আপামর মানুষ এগিয়ে এসেছেন। তারা বলেছেন, যার যা সাধ্য অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতুর কাজে সহায়তা দেবেন।

অন্যদিকে মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিদায়ের মাধ্যমে আমরা অনুমান করছি বাংলাদেশ এখনো বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের আশা কিংবা সাহায্যের প্রত্যাশা ভুলতে পারছে না। জানতে ইচ্ছে করে, যদি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অর্থায়নেই পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব হয়, তবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের এতো ধার ধারছে কেন? কী কারণে বারবার বিশ্বব্যাংকের মন জোগানোর চেষ্টা করছেন আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী।

বর্তমান সরকারের হাতে সময় দেড় বছরেরও কম। নির্বাচন সামনে। যারা প্রার্থী হবেন তারা এখন থেকেই চষে বেড়াতে শুরু করেছেন নিজ নিজ অঞ্চলে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে দেখা যাচ্ছে নানা রকম খুঁড়াখুঁড়ি। ভুক্তভোগীরা বলছেন সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের উদরপূর্তি উৎসব চলছে নানারকম টেন্ডার ঠিকাদারির নামে। ঢাকায় শুধু নয় গোটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ দেখছেন, চাঁদাবাজির পসরা কতো দুঃখজনকভাবে গ্রাস করছে এই দেশের মানুষের স্বপ্ন! কতো নির্মমভাবে প্রতারিত হচ্ছে এ দেশের মানুষের ভোটের প্রতি দেয়া অঙ্গীকার।

ডিজিটাল বাংলাদেশ এর অর্জন কী, এই প্রশ্নটি যদি করা যায় তবে দেখা যাবে হাতে হাতে দু তিনটি মোবাইল এখন মানুষে মানুষে যোগাযোগের দূরত্ব কমিয়ে এনেছে ঠিকই কিন্তু সামাজিক এবং মানবিক পরিবর্তনের যতোটা কথা ছিল তা দুঃখজনকভাবে মোটেই এগোয়নি। কেন এগোয়নি? তার কারণ বুর্জোয়া করপোরেট বাণিজ্য হরণ করেছে ক্রমশ প্রজন্মের স্বপ্ন। এই প্রজন্মের তরুণরা অর্থের প্রয়োজনের পেছনে যতোটা ছুটছে, পরিশুদ্ধ মনন নির্মাণের পেছনে ততোটা ছুটছে না। ঢাকা শহরে যানজটের ব্যাপকতা যেমন বেড়েছে, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। যে ঢাকা শহরে মাছির ভন ভন দৃশ্যের ভেতরে ফুটপাতে ইফতারি বিক্রি হয়, সেই ইফতারির ক্রেতাসাধারণ মানুষরা এ দেশের অন্যতম শ্রমশক্তি বলেই দেশটির কর্মগতি চলছে। উচ্চবিত্তরা ঢাকা শহরের মতো বড় বড় শহরগুলোতে উঁচু দালানের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ঠিকই। কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশ বাঁচাতে তাদের যতোটা এগিয়ে আসার কথা ছিল তারা ততোটা এগিয়ে আসেননি। কেন তাদের এই দীনতা? অথচ আমরা জানি পরিবেশ না বাঁচলে এই সুন্দর ইমারত এবং এর বাসিন্দা উত্তর প্রজন্ম মুক্ত নিঃশ্বাসের নিরাপত্তা পাবে না।

স্বপ্নের সঙ্গে যদি প্রতারণার বসবাস দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে রাষ্ট্রের মানুষকে স্বঘোষিত দেউলিয়া জীবনই বেছে নিতে হয়। আমরা চাই না পরিবেশ দূষণের কারণে এ দেশের মানুষ রোগ-শোকগ্রস্ত জীবন-যাপন করুক। ঢাকাসহ প্রধান প্রধান শহরগুলোতে যারা মুখে মাস্ক পরে চলাফেরা করেন কিংবা যারা রাস্তায় ব্যস্ত কোলাহলে বিড়ি ফুঁকে আরেকজন অধূমপায়ী মানুষের যন্ত্রণার কারণ হন, উভয়ের দায়ী কিন্তু সমান। কারণ নিজ মুখে মাস্ক পরে আত্মরক্ষা করা যাবে না যদি না এই রাষ্ট্র গোটা সমাজকে রক্ষায় এগিয়ে না আসে। আর ধূমপান করে কিংবা রাস্তায় ময়লা আবর্জনা ফেলে যারা অন্যের মনোপীড়ার কারণ হচ্ছে তারা যদি নিজেরা সংশোধিত না হয় তবে এদেরকে সংশোধন করবে কে?

বাংলাদেশে ভিশন ২০২১-এর স্বপ্নের সিকিভাগ পূরণ করতে হলে রাষ্ট্রপক্ষকে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি পরিহারে এগিয়ে আসতেই হবে। এর পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন এবং চেতনার পুনরুদ্ধার ঘটাতে হবে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায়, মহল্লায়। ঢাকা শহরের মতো ব্যস্ততম নগরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বর্জ্য নিষ্কাশনের গাড়ি থাকবে না, তা এই সময়ে এসে বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে বৈকি! দেখেছি, বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বপ্নের চল্লিশ শতাংশ পূরণ হলেই সুখী হন। কেন জানি মনে হচ্ছে বর্তমান মহাজোট সরকার নানা কারণে তা পূরণ করতে পারেনি। এই প্রতিবন্ধকতাগুলো সহজে পার হওয়া যেতো। কেন পারছে না, তা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধাকরাই ভালো বলতে পারবেন।
ঢাকা, ২৬ জুলাই ২০১২
--------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ/ ঢাকা/ ২৮ জুলাই ২০১২ প্রকাশিত
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×