somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজে বহুল প্রচলিত জাল হাদিস ও বানোয়াট কথা

২৯ শে জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এমন অনেক কিছু আছে যা আমরা না জেনে নবীর সুন্নাত হিসেবে মানছি। কিন্তু আমরা কোরআন ও সহিহ হাদিসগ্রন্থ না পড়ে শুধু কিছু ইসলামী বই (নেক আমল, মকছুদোল ম’মেনীন, কাসাসুল আম্বিয়া, নেয়ামুল কোরআন ইত্যাদি) পড়ে অনেক ভুল জিনিস শিখছি ও তা মানছি। এসব বইয়ের অনেক কিছুই ভিত্তিহীন।
রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ
“যে আমার নামে এমন কোন কথা বলবে যা আমি বলিনি তাহলে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।” (সহীহ বুখারী)
অন্যত্র বলেছেন,
“যে আমাদের ধর্মে এমন নতুন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করবে যা ধর্মে ছিল না তা প্রত্যাখাত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
সমাজে বহুল প্রচলিত জাল হাদিস ও বানোয়াট কথা
(উত্স: বই-হাদিসের নামে জালিয়াতি, লেখক- ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, সহযোগী অধ্যাপক, হাদিস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া)
► দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ।
এই হাদীসটি যে কেবল জাল তাই নয় উপরন্তু জাল হাদীসের বই ছাড়া অন্য কোনো গ্রন্থে সেটির উল্লেখ নেই। ইমাম সুয়ুতীর ‘আল আহাদীস আল মুনতাছিরাতে’ বলেছেন- আমি এটা খুজে পায়নি। একই কথা ইমাম সাখাবী বলেছেন। ইমাম সগানী বলেছেন হাদীসটি জাল। শায়খ আলবানী জাল বলেছেন।
► খাওয়ার আগে ও পরে লবন খাওয়া কারন এটা ৭০ প্রকার রোগের প্রতিষেধক।
এটা সম্পুর্ন বানোয়াট কথা। বরং উচ্চরক্তচাপ রোগীদের জন্য লবন খাওয়া বিপদজনক।
► লাল দস্তরখানে খাওয়া একটি সুন্নাত। যে ব্যক্তি লাল দস্তরখানে খাবে, প্রতি লোকমার বিনিময়ে প্রতিদানে একশ করে নেকি পাবে ও বেহেস্তের ১০০টি দরজা তার জন্য নির্ধারিত হবে… ইত্যাদি।
এটা একটা বানোয়াট কথা। প্রক্রিতপক্ষে রাসুল (সঃ) দস্তরখান ব্যবহার করতেন কিন্তু তিনি কখনো লাল দস্তরখান ব্যবহার করেছেন কিংবা এইরুপ দস্তরখান ব্যবহার করতে উৎসাহ দিয়েছেন তার কোন সহিহ হাদিস নাই। দস্তরখান ছাড়া খাদ্যগ্রহণ বিষয়ে তিনি কখনো আপত্তিও করেননি।
রাসুল (সঃ) এর দস্তরখান ব্যবহার বলতে আমরা বুঝি তিনি এর উপর প্লেট, থালা, বাটি রেখে খেতেন। কিন্তু ধারণাটি সঠিক নয়। তাঁর সময় চামড়ার দস্তরখানা বা “সুফরা” ব্যবহার করা হত ও তার উপরই থালা বাটি ছাড়াই সরাসরি খেজুর, পনির, ঘি ইত্যাদি খাবার রেখে খাওয়া হত।
► খাওয়ার সময় কথা বলা যাবেনা।
বরং সহিহ হাদিস অনুযায়ী রাসুল (সঃ) ও সাহাবিগন খাবার গ্রহনের সময় বিভিন্ন কথাবার্তা বলতেন ও গল্প করতেন।
► শহীদের রক্তের চেয়ে কলমের কালি উত্তম।
কথাটি সুন্দর শুনালেও এটা রাসুল (সঃ) এর কথা না। ইসলামে জিহাদ ও শহীদের গুরুত্ব অনেক বেশি।
► আল্লাহর নুরের পর্দা ৭০ হাজার।
এই সংখ্যার কথা বানোয়াট। সহিহ হাদিসে শুধু বর্নিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহর নুরের পর্দা রয়েছে (সহিহ মুসলিম, ১/১৬১)। তবে এর সংখ্যা, প্রকৃতির বিস্তারিত বিবরন পাওয়া যায়না।
► সৃষ্টির সংখ্যা ১৮ হাজার মাখলুকাত। এটা একটা লোকশ্রুতি। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সৃষ্টি অগণিত।
► আদম (আ) ও হাওয়া (আ) গন্দম গাছের ফল খেয়েছিলেন। এটা একদম ভিত্তিহীন কথা। প্রকৃত সত্য হল, আদম ও হাওয়া (আ) কে আল্লাহ একটি বিশেষ বৃক্ষের নিকট গমন করতে নিষেধ করেন। পরে তারা শয়তানের প্ররোচনায় এই বৃক্ষ থেকে ভক্ষন করেন। কিন্তু সেই গাছ বা ফলের নাম কোথাও বলা হয়নি। ইহুদিদের মধ্যে প্রচলিত ছিল আদম (আ) গন্দম নামক গাছের ফল ভক্ষন করেন।
► জান্নাতের অধিবাসীদের দাড়ি থাকবেনা। সবাই দাড়িহীন যুবক হবেন। এটা একটা বানোয়াট কথা।
► অনেক গ্রন্থে নখ কাটার নিয়ম, অমুক নখ থেকে শুরু করা, অমুক নখে শেষ করা, বৃহস্পতিবার বা অমুক দিনে নখ কাটা ইত্যাদির বর্ণনা আছে যা সম্পুর্ন বানোয়াট ও মিথ্যা কথা। রাসুল (সঃ) নখ কাটতে নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু কোন বিশেষ দিন বা নিয়ম শিক্ষা দেননি।
► আসরের পর পড়ালেখা নিষেধ।
এটা একদম ভিত্তিহীন প্রচলিত কথা।
► এক ওয়াক্ত নামাজ কাযা করলে ৮০ হুকবা বা দুই কোটি ৮৮ লক্ষ বছর জাহান্নামের আগুনে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
অনেক প্রচলিত বইয়ে এই মিথ্যা কথা উল্লেখ আছে যার কোন সহিহ হাদিস নাই। এটা সম্পুর্ন ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা।
► জুমু’আর দিনে নির্দিষ্ট সংখ্যক যেমন ৪০ বার, ৫০ বার, ৮০ বার পরলে এত বছরের গুনাহ মাফ হবে বা এমন পুরুস্কার পাওয়া যাবে।
এগুলো কথার কোন ভিত্তি নাই। শুধু জুমু’আর দিনে বেশি বেশি করে দরুদ পাঠ করতে সহিহ হাদিসে উল্লেখ আছে। কিন্তু এর সংখ্যা বা ফজিলতের বর্ণনা নাই। এগুলো মানুষের বানানো।
► দুনিয়া হল আখিরাতের শস্যক্ষেত্র।
কথাটা সত্য হলেও এটা একটা জনশ্রুতি, কোন হাদিস না।
► স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত।
এই কথা একটি ভিত্তিহিন ও বানোয়াট কথা যার কোন সহিহ হাদিস গ্রন্থে বর্ননা নাই। কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা থেকে বুঝা যায় যে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্রতি উভয়ের দায়িত্ব পালন ও অধিকার আদায়ের মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ সম্ভব।
► জ্ঞান অন্বেষণের জন্য সুদূর চীন দেশ পর্যন্ত যাও।
অধিকাংশ মুহাদ্দিস এটাকে জাল হাদিস বলেছেন কারন দুইজন অত্যন্ত দুর্বল রাবী যারা মিথ্যা হাদিস বর্ননা করতেন শুধুমাত্র তারাই এটাকে রাসুল (সঃ) এর কথা হিসেবে প্রচার করেছেন।

৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×