somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আস্তিকতা 'বনাম' ইসলাম

২৮ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা তখন মাধ্যমিক লেভেলের স্কুলে পড়ছি। হুমায়ূন আহমেদের গল্প উপন্যাস আমাদের মনোজগতের অনেকখানি জুড়ে দখল নিয়েছে। তারপরও আমাদের সামাজিক আর পারিবারিক বিশ্বাসের বিপরীতে তাঁর নাস্তিকতা ঘেঁষা কিংবা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে বেশ কটাক্ষ করে লেখাগুলো পড়ে অনেকের মনেই ব্যথা লাগতো। মাহফুজ আহমেদের নেয়া একটি দীর্ঘ সাক্ষাতকারে তিনি বললেন, “আমি ভীষণভাবে আস্তিক”। আমার মনে আছে, সে সাক্ষাতকার পড়ে আমরা খুব খুশী হয়েছিলাম আর বন্ধুরা মিলে আলাপ করতাম-“যাক, সে আর যাই হোক শামসুর রাহমান কিংবা শওকত ওসমান ক্যাটাগরির লোক নয়”। নাস্তিকতার প্রসঙ্গ এলেই বাংলাদেশের স্বঘোষিত এসব নাস্তিকদের মনে হতো আবু জাহল-আবু লাহাবদের মতো। আমার ইসলামের জ্ঞান তখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। আল্লাহর কৃপায় যখন ইসলাম সম্বন্ধে কিছুটা জানতে শুরু করেছি তখন একদিন আমি ভীষণ হোঁচট খেলাম যখন জানলাম আবু জাহল, আবু লাহাব, উতবা, শাইবা প্রমুখ ইসলাম ও রাসুলুল্লাহর ঘোরতর শত্রু সকলেই ছিলো ‘ভীষণভাবে আস্তিক’। মক্কার সকল কাফির কঠিনভাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করত। এমনকি তাদের দেব-দেবী বা মূর্তিগুলোকে তারা আল্লাহকে পাবার মাধ্যম হিসেবেই কেবল বিবেচনা করতো, তবে জানত যে চুড়ান্ত ক্ষমতা কেবল আল্লাহরই। তাদের স্বজন-সহকর্মীদের নাম ছিল আব্দুল্লাহ, উবাইদুল্লাহ ইত্যাদি। আল্লাহর উপর এমন ‘পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ থাকার পরও এদেরকেই আল্লাহ মুশরিক বলেছেন। এ কথা কেউ আমাকে মুখে বললে আমি কখনও বিশ্বাস করতাম না। তবে বিশ্বাস না করার আর কোন রাস্তা রইলোনা যখন কুরআনে আল্লাহ এই মুশরিকদের সম্বন্ধেই এভাবে বলেছেন-

“তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস কর কে তাদের সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ, এরপরও তারা কোথায় ফিরে চলেছে?” (সুরা যুখরুফঃ ৮৭)

“যদি তুমি তাদের জিজ্ঞেস কর এ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল কে সৃষ্টি করেছেন, তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ”। (সুরা লুকমানঃ ২৫)

"যদি তুমি তাদের জিজ্ঞেস কর, কে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, এরপর তা দিয়ে মৃত মাটিকে সঞ্জীবিত করেন, তবে তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ। বল, সমস্ত প্রসংশা আল্লাহরই, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বোঝে না”। (সুরা আনকাবুতঃ ৬৩)

আস্তিকতা হলো এমন একটা বিষয় যা মানুষ মাত্রেরই ‘ফিতরাত’ বা সহজাত প্রবৃত্তি। যেকোন মানুষ, তা সে যে ধর্মেরই হোকনা কেন, সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি এবং তাঁর সুবিশাল প্রভাবের বিষয়টি অনুভব না করে পারেনা। এমনকি হাতে গোনা দু-একজন ছাড়া বাকি সব নাস্তিক মনের ভেতরের এক অজানা ভয়ে মৃত্যুর পর তাদের জানাজা না দেয়া, বা ধর্মীয়ভাবে সৎকার না করার কথাও বলে যায়না। সৃষ্টিগত ফিতরাতের জন্য প্রায় সব মানুষ আস্তিক বলেই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ যতবার কুফর আর শির্ক সম্পর্কে বলেছেন, সকল স্থানে তিনি তাদেরকেই উদ্দেশ্য করেছেন যারা আস্তিকতায় বিশ্বাসী, নাস্তিকতায় নয়। সমস্ত কুরআনে কেবলমাত্র একটি আয়াতে তিনি নাস্তিকদের কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং কেউ একজন জোর গলায় নিজেকে আস্তিক দাবী করলে সে আল্লাহর কাছে দাঁড়ানোর পর মুসলিম হিসাবে গন্য হবে এমনটি কখনও হবে না।

ইসলামকে নিজের দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করা বা না করা একান্তই কারো ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে মুসলিম হবার জন্য প্রত্যেককে আল্লাহর বেঁধে দেয়া শর্তগুলো পূরণ করে তবেই মুসলিম হতে হবে। আমি একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছি এবং আমি খুবই আস্তিক- শুধুমাত্র এ ব্যাপারটা আমার মুসলিম পরিচয় বহন করবে আল্লাহর কাছে, তা কখনও হবার নয়। আমরা কখনও একটি কথা ভেবে দেখি না যে, আমাদের পাশের বাড়ীর নন মুসলিম পরিবারে যে শিশুটি জন্ম নিলো সে তো ইচ্ছে করে ওখানে আসেনি, বরং আল্লাহ চাইছেন বলেই এসেছে। অন্যদিকে আমিও ইচ্ছা করে মুসলিম পরিবারে জন্ম নেইনি, এটাও হয়েছে আল্লাহ চাইছেন বলেই। আল্লাহ, যিনি হলেন সর্বোত্তম ইনসাফকারী এবং শ্রেষ্ঠতম বিচারক তিনি কি এজন্যই আমাকে জান্নাত দেবেন আর নন মুসলিম পরিবারে পাঠিয়ে সেই ছেলেটিকে জাহান্নামে দেবেন? নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর ইনসাফ হতে পারে না।

কোন লোক ঈমানদার কিনা তার প্রাথমিক নির্দেশকারী হলো সালাত বা নামাজ। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “ইসলাম এবং কুফর এর পার্থক্যকারী বিষয় হলো সালাত” (সহীহ বুখারী)। তাঁর সাহাবীগন বলেছেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সময় কোন লোক সালাত ছাড়া অন্য কিছু ত্যাগ করলে আমরা তাকে কাফির বলতাম না”। অর্থাৎ, তখন যদি মুসলিম নামধারী কেউ সালাত ত্যাগ করতো, তাহলে সে লোকটি ইসলামের বাইরে বলেই গণ্য হতো।

একজন মানুষের ইসলামী নাম, ইসলামী পরিবারে জন্মগ্রহণ কিংবা ইসলামী আচার অনুষ্ঠানে সামাজিকভাবে অংশগ্রহণের ফলে তার মুসলিম পরিচয় আমাদের চোখে হতে পারে কিন্তু মুসলিমের মতো কর্ম না হলে ইসলামের চোখে সে মুসলিম নয়। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদের মৃত্যু দিন।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×