somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লুকোচুরি

২৬ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক চোর চুরি করতে একজনের ঘরে ঢুকেছে। ঘরে চোর ঢুকেছে, মালিক সেটা টের পেয়ে গেলেন। চোরকে ধরতে মালিক সারাবাড়ির মানুষকে ডেকে জড়ো করলেন। চোর ধরতে হবে। সবাই মিলে খোঁজাখুজি শুরু করতে থাকলেন। চোর সেটা টের পেয়ে ঘাঁপটি মেরে একজায়গায় লুকিয়ে পড়ল। কেউ তাকে খুঁজে পেল না। কিন্তু ঝামেলা হলো, চোর বের হয়ে পালাতেও তো পারছে না। কিভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে পালানো যায়, চোর সেই চিন্তায় ব্যস্ত। সুযোগ পেলেই সে পালাবে। চোর সেই সুযোগ খুঁজতে থাকল।
কিন্তু ততসময়ে না খেয়ে কি থাকা যায়? সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন সে লুকিয়ে লুকিয়ে ঠিকই খাবার খায়। এরকম লুকোচুরি খেলা তার কয়েকদিন ধরে চলতেই থাকে। এদিকে তার দিন যায় মাস যায় তবু পালাবার সুযোগ আসে না।
বাড়ির মালিকও শেষপর্যন্ত অনেক খোঁজাখুজি করে চোরকে ধরতে পারলেন না। একপর্যায়ে মালিক সিদ্ধান্ত নিলেন, ঘরের দরজায় পাহারা বসাবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘরের সব দরজায় পাহারা বসিয়ে দেওয়া হলো। ব্যাটা চোর পালাবে কোথায়? ধরা তাকে পড়তেই হবে।
চোরও নাছোড় বান্দা সে লুকিয়ে থাকলো। তাকে ধরার সুযোগ সে কিছুতেই দিলো না। ঘর থেকে সে বের হলো না, কিন্তু সুযোগের অপেক্ষায় থাকলো। সুযোগ পেলে তবেই সে ঘর বেরিয়ে পালাবে।
অবশেষে একদিন সে সুযোগ আসল। বাড়িতে সেদিন আরেকটি ভয়ংকর কান্ড ঘটে গেল। পাহারাদারসহ বাড়ির সবাই তখন সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠল। চোরের কথা সবাই ভুলে গেল। চোর সে সুযোগে ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা ভূঁদৌড় দিয়ে পালালো। চোর স্বসম্মানে তাঁর জীবন বাঁচালো।

এবার আসি সাম্প্রতিক প্রসংগে। আমাদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ মারা গেছেন। সারাদেশের মানুষ সেজন্যে শোকাহত, বেদনাহত। কয়েকদিন ধরে তাকে নিয়ে সবাই বেশ মাতামাতি করছে। দেশের মিডিয়াসহ সবাই এখন তাকে নিয়েই ব্যস্ত। তাকে নিয়ে প্রায় সব মিডিয়ায় আলোচনা অনুষ্ঠান হচ্ছে, টক শো হচ্ছে। হুমায়ুন আহমেদ আমাদের দেশের এতো জনপ্রিয় লেখক যে, তাকে নিয়ে সব মিডিয়া জুড়ে সারাক্ষণ খবর আর খবর। এসময় অন্য কোন খবর মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি এখন তার দিকে। এদিকে তার দাফন নিয়েও তুলকালাম কান্ড ঘটে যাচ্ছে। সেটা সারাদেশের মানুষ খুব আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। শেষ পর্যন্ত কোথায় তার দাফন হয়, গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে নাকি ঢাকার কোন জায়গায়। সারাদেশের মানুষ সে খবর জানার জন্যে টেলিভিশন চ্যানেলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছে, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত, গভীর রাত পর্যন্ত মানুষ অপেক্ষা করছে, কিন্তু সুরাহা হচ্ছে না। এরই মধ্যে টেলিভিশন স্ক্রীণে ভেসে উঠলো- আমাদের সাবেক মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছেন। যাক, অবশেষে দূর্ণীতির অভিযোগে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী বর্তমানে অন্য একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আবুল হোসেন পদত্যাগ করলেন! কিন্তু এ খবরটি দেশবাসীর কাছে তেমন গুরুত্ব পেল না। আর পাবে কি করে, সবার দৃষ্টি যে এখন প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের দাফন কোথায় হবে, সেদিকে। অন্য সময় হলে কী হতো? সবাই সেটা জানেন। আমি বলছি না।

যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ বিষয়ে হুমায়ুন আহমেদ এর একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক প্রথম আলোয় "যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ"। লিংকটি শেয়ার করলাম-http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-26/news/276764 নিবন্ধটি অবশ্য সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে লেখা।

আমাদের সাবেক মাননীয় যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন অবশ্য পদ্মা সেতু প্রকল্পে দূর্ণীতির অভিযোগে পদত্যাগ করেছেন বলে জানা যায়। পদ্মা সেতু বিষয়ে সরকার একবার বলছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতা নেবে না। দেশিয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু করবে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের ঋণ পাবার জন্যেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, নানা পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে। ব্যাপারগুলো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। আসলে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে একধরণের লুকোচুরি চলছে, যেটা আমরা সাধারণ জনগণেরা হয়তো বুঝতে পারছি না।

যাক, আবারো হুমায়ুন প্রসংগে ফিরে আসি। হুমায়ুন আহমেদের দাফন নিয়ে এর মাঝে ঘটে যায় নানা ঘটনা। হুমায়ুন আহমেদের বর্তমান স্ত্রী শাওন চাচ্ছেন দাফন হোক নুহাশপল্লীতে। আর হুমায়ুন আহমেদের প্রথম স্ত্রী'র সন্তানরা চাচ্ছেন হুমায়ুন আহমেদের দাফন হোক ঢাকার কোন স্থানে, যেখানে সর্বস্তরের মানুষ যেতে পারবে। সেটি হুমায়ুন আহমেদের মা, ভাই-বোন, পরিবারসহ দেশবাসীর অধিকাংশ মানুষও চায়। কিন্তু শাওন বাদ সাধলেন হুমায়ুন আহমেদের দাফন নুহাশপল্লীতেই হতে হবে, যেটি হুমায়ুন আহমেদ নাকি তাকে আগেই বলে গেছেন। অথচ মিডিয়ার কল্যাণে খবর জানা যায়, লাশ নিয়ে শাওন আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার পথে আমেরিকার বিমানবন্দরে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, হুমায়ুন আহমেদের দাফন কোথায় হবে সে বিষয়ে তাকে হুমায়ুন আহমেদ কিছুই বলে যাননি, দেশে পৌঁছে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, কোথায় দাফন হবে। কিন্তু আমেরিকা থেকে আসতে আসতেই ঢাকায় পৌঁছেই তিনি তার মত পাল্টে বললেন, হুমায়ুন আহমেদের দাফন হবে নুহাশপল্লীতে, সেটি নাকি হুমায়ুন আহমেদের শেষ ইচ্ছা ছিল এবং হুমায়ুন আহমেদ তাকে সেটি বলে গেছেন।

এ নিয়ে পরিষ্কার দু'টি গ্রুপ হয়ে যায়। শাওন গ্রুপ এবং হুমায়ুন আহমেদের প্রথম স্ত্রী'র সন্তানদের গ্রুপ। এ নিয়ে চলে দীর্ঘ দেন দরবার। শাওন তার অবস্থানে অনড় থাকেন। ঘটনাটি এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় যে, তার কথামতো নুহাশপল্লীতে দাফন না হলে বিষয়টি সুরাহার জন্যে আদালতেও যেতে পারে। এতে লাশ বেশ কয়েকদিন হিমঘরে থাকার সম্ভাবনাই বেশী। সেটি হুমায়ুন আহমেদের প্রথম স্ত্রী'র অতি আদরের সন্তানরাসহ হুমায়ুন আহমেদের মা, ভাই-বোনরা হতে দিতে চাইলেন না। এবং অবশেষে গভীর রাতে সিদ্ধান্ত জানানো হলো, হুমায়ুন আহমেদের দাফন হবে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে।

আর এই ঘটনাটি আমাদেরকে সেই গল্পটি আবারো মনে করিয়ে দেয়- "একটি শিশুর মাতৃত্বের দাবি নিয়ে দুই নারী হাকিমের কাছে গেছেন। দু’জনই নিজেকে শিশুটির মা হিসেবে দাবি করছেন। আসল মাকে চিহ্নিত করতে হাকিম হুকুম দিলেন, শিশুটিকে কেটে দুই ভাগ করে তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হোক। সঙ্গে সঙ্গে পিছু হটলেন এক নারী। বললেন, শিশুটিকে কাটার দরকার নেই। আমি তার মা নই। বিচক্ষণ হাকিম বুঝতে পারলেন, এই নারীই শিশুটির আসল মা। কারণ সত্যিকারের মা যে কোনো মূল্যে তার সন্তানকে বাঁচাতে চায়। অধিকার তার কাছে বড় নয়। হাকিম শিশুটিকে তার আসল মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।"

হুমায়ুন আহমেদের দাফন শেষপর্যন্ত গাজীপুরের নুহাশপল্লীতেই হয়েছে। কিন্তু এখন খবর বেরিয়ে আসছে শাওনকে এরকম কোন কথা হুমায়ুন আহমেদ বলে যাননি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে শাওন কেন এরকম লুকোচুরি খেলাটা খেললেন? এ প্রশ্নের সুরাহা হয়তো ভবিষ্যতে খুঁজে পাওয়া যাবে। সে পর্যন্ত আমরা অপেক্ষায় রইলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১১:৩৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×