somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৬৬

২৬ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্রনাথের গানের লিরিক ও সুরের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে মানুষের মৌলিক অনুভূতির যোগসূত্র। ঠিক মত প্রচার প্রসার হলে রবীন্দ্রনাথের গান গুলো হতে পারে পৃথিবীর সঙ্গীত। রবীন্দ্রনাথের লেখা নিয়ে বলার মত জ্ঞান গভীরতা ব্যাক্তিগত ভাবে আমার নাই। তবে খোলা চোখে তার লেখার মধ্যে সুদূর ভবিষ্যত নিয়ে ইংঙ্গিত গুলো চোখে পড়ার মত। যেমন...""আজি হতে শতবর্ষ পরে/ কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/ কৌতূহলভরে--আজি হতে শতবর্ষ পরে "।যদিও রবীন্দ্রনাথের সময়ে কল্পবিজ্ঞান লেখার চর্চা তেমন হত না। হলে হয়ত রবীন্দ্রনাথের কোন সাইয়েন্স ফিকশন পেয়ে যেতাম। তার পরেও তার কবিতার দর্শন আর বর্তমানে প্রচলিত কল্পবিজ্ঞানের দর্শনের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নাই।

সুনীল চন্দ্র সরকারকে একটি চিঠির উত্তরে রবীন্দ্রনাথের লেখা কিছু অদ্ভুত তথ্য আছে..."....আমাদের বাইরে বিশ্বপ্রকৃতির একটি চিরন্তনী ধারা আছে, সে আপন সূর্য-চন্দ্র আলো-আধাঁর নিয়ে সর্বজনের সর্বকালের। জ্যোতিষ্ক-লোকের ছায়া দোলে তার ঝর্ণার ছন্দে। জীবনে কোন বিপুল প্রেমের আনন্দে এমন একটা পরম মুহূর্তে আসতে পারে যখন আমার চৈত্যন্যের নিবিড়তা আপনাকে অসীমের মধ্যে উপলব্ধি করে-তখন বিশ্বের নিত্য উৎসবের সঙ্গে মানবচিত্তের উৎসব মিলিত হয়ে যায়, তখন বিশ্বের বানী তারই বানী হয়ে উঠে......। ব্যক্তিজীবনে রবীন্দ্রনাথের ভাল মন্দ দিক তার সাহিত্যপ্রতিভার ব্যাপারে অপ্রাসঙ্গিক তাই ব্যক্তিজীবনে রবীন্দ্রনাথের মন্দ দিক নিয়ে কেউ লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে সে সাহত্যিক রবীন্দ্রনাথকে ছোট করছে বলে দাবী করলে সেটা অযৌক্তিক হবে।

কর্ম বা আচরণের ন্যায় অন্যায় বা দোষগুণ বিচারের জন্য আইনগত বা ঘোষিত কোন সার্বজনীন মানদণ্ড নেই সেই ব্যাপারে যে কোন ব্যক্তিগত মত বা অনুভূতি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ তো একজন শিল্পী মাত্র। এবং একজন উদার ও সার্বজনীন শিল্পী। তাঁর ভক্তরা যদি তাঁকে ত্রুটিমুক্ত কোন মহামানব মনেও করে তাতেও খুব বিরাট কোন ক্ষতি বা ঝুঁকি নেই সাধারণ মানুষের। ঠাকুরবাড়ির সব ছেলেকেই ছোট বেলায় পালোয়ানের কাছে কুস্তি শিখতে হতো৷ এতে গায়ে বেশ মাটি মাখামাখি হতো৷ রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘‘সকাল বেলায় রোজ এত করে মাটি ঘেঁটে আসা ভালো লাগত না মায়ের, তাঁর ভয় হত ছেলের গায়ের রঙ মেটে হয়ে যায় পাছে৷ তার ফল হয়েছিল, ছুটির দিনে তিনি লেগে যেতেন শোধন করতে৷ শোধনক্রিয়ার সামগ্রী হিসেবে থাকতো ‘বাদাম-বাটা, সর, কমলালেবুর খোসা, আরো কতো কী...৷''

"আমার মন মানে না – দিন রজনী।
আমি কী কথা স্মরিয়া এ তনু ভরিয়া পুলক রাখিতে নারি।
ওগো কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি –
ওগো সজনি।।"

কেমন ছিলেন রবীন্দ্রনাথের মা? কিন্তু স্বর্ণপ্রসবিনী সারদা দেবীর বিখ্যাত পুত্রদের রচনাতে তাঁর সম্পর্কে কোন কথা বা বিবরণ নেই বললেই চলে৷ রবীন্দ্রনাথের লেখাতে মায়ের কথা কতটুকু পাওয়া যায়?মাত্র ছ'বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়৷ সর্বশেষ সন্তান রবীন্দ্রনাথের জন্মের সময় তাঁর বয়স ৩৪-এর মত৷ রবীন্দ্রনাথ কী ইতিহাসে উপেক্ষিতা সেই মায়ের কথা মনে রেখেছিলেন?রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘জীবনস্মৃতি'-তে তাঁর শিশুজীবনের এক পর্বকে ‘ভৃত্যরাজক তন্ত্র' আখ্যা দিয়েছেন৷ সারাদিন ভৃত্যরাজক তন্ত্রের মধ্যে থাকলেও এক পর্যায়ে রাত্রে শোবার সময়ে মায়ের ঘরে তাঁর আশ্রয় মিলতো৷ বিভিন্ন স্মৃতিকথার সূত্রে জানা যায়, মায়ের ঘরে রবীন্দ্রনাথ স্বতন্ত্র শয্যায় শুতেন৷ মা কোনও দিন গল্প শুনিয়ে বা ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে তাঁকে ঘুম পাড়াতেন কি না এমন তথ্য কোথাও পাওয়া যায় না৷

মাতৃস্নেহ না পেলেও মায়ের স্বাভাবিক সস্নেহ প্রশ্রয় থেকে রবীন্দ্রনাথ বঞ্চিত হননি৷ যাত্রাপালা দেখার ইচ্ছে নিয়ে অসময়ে ঘুমিয়ে পড়া রবীন্দ্রনাথকে ঠিক সময়ে জাগিয়ে দিয়েছেন সারদা দেবী৷ মাস্টার এসেছেন পড়াতে, রবীন্দ্রনাথ পড়া ফাঁকি দিতে চান৷ বানিয়ে মাকে বলতেন পেট কামড়ানির কথা৷ তারপর, রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘‘শুনে মা মনে মনে হাসতেন, একটুও ভাবনা করতেন বলে মনে হয়নি৷ তবু চাকরকে ডেকে বলে দিতেন, ‘আচ্ছা যা মাষ্টারকে জানিয়ে দে, আজ আর পড়াতে হবে না৷''রবীন্দ্রনাথের মা রবীন্দ্রনাথের রচনার মধ্যে না থাকলেও খানিকটা ছিলেন তাঁর স্মৃতির মধ্যে৷ ‘জীবনস্মৃতি'তে লিখেছেন, ‘‘মনে পড়ে বাড়ি-ভিতরের পাঁচিল-ঘেরা ছাদ৷ মা বসেছেন সন্ধেবেলায় মাদুর পেতে, তাঁর সঙ্গিনীরা চারদিকে ঘিরে গল্প করছে৷....এই সভায় আমি মাঝে মাঝে টাটকা পুঁথিপড়া বিদ্যের আমদানি করেছি....ঋজুপাঠ দ্বিতীয়ভাগ থেকে স্বয়ং বাল্মিকী রামায়ণের টুকরো আউড়ে দিয়েছি অনুস্বার-বিসর্গ-সুদ্ধ৷ মা জানতেন না তাঁর ছেলের উচ্চারণ কত খাঁটি, তবু তার বিদ্যের পাল্লা....তাঁকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে৷''

১৯০৮ সালে শান্তিনিকেতন মন্দিরে প্রদত্ত এক উপদেশে৷ রবীন্দ্রনাথ সেখানে তাঁর দেখা এক স্বপ্নের উল্লেখ করেছেন, ‘‘...আমার একটি স্বপ্নের কথা বলি৷ আমি নিতান্ত বালককালে মাতৃহীন৷ আমার বড়ো বয়সের জীবনে মার অধিষ্ঠান ছিল না৷ কাল রাত্রে স্বপ্ন দেখলুম, আমি যেন বাল্যকালেই রয়ে গেছি৷ গঙ্গার ধারের বাগান বাড়িতে মা একটি ঘরে বসে রয়েছেন৷ মা আছেন তো আছেন৷ তাঁর আর্বিভাব তো সকল সময়ে চেতনাকে অধিকার করে থাকে না৷ আমিও মাতার প্রতি মন না দিয়ে তাঁর ঘরের পাশ দিয়ে চলে গেলুম৷ বারান্দায় গিয়ে এক মুহূর্তে আমার কী হল জানি নে৷ আমার মনে এই কথাটা জেগে উঠল যে, মা আছেন৷ তখনই তাঁর ঘরে গিয়ে তাঁর পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করলুম৷ তিনি আমার হাত ধরে আমাকে বললেন, ‘তুমি এসেছ!' এইখানে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল৷ ''।

( চলবে....)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×