somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টি এবং ম্যাক্সিম গোর্কির বাবা, নুহাশের বাবা (হুমায়ূন আহমেদ) ও আমার বাবার শেষকৃত্য।

২৫ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হুমায়ূন আহমেদ এর যখন দাফন হচ্ছিল আমি তখন শান্তিনগর, অফিসে। একবার অফিসে ঢুকে গেলে বাইরে কি হয় আর বোঝার উপায় নাই। না ঢাকায় বৃষ্টি হয় নি। বের হতে একটু দেরীই হলো। বাসায় ফিরলাম। কোনো খবর দেখিনি। জানি খবরে হুমায়ূন আহমেদের দাফনের কথাই আসবে। তাই ব্লগে, ফেসবুক, ইয়াহু, ইউটিউব এ ডুবে থাকার চেষ্টা করেছি। খবর পাচ্ছিলাম, গতকাল গাজীপরে নাকি খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। ছবি দেখলাম, পলিথিন মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে সকলে মাটি দেয়ার পর শেষ মোনাজাত করছে। একটা ছবি দেখলাম নুহাশ তার বাবার লাশ কবরে নামাচ্ছেন।

আম্মা বললেন, মানুষের নাকি ঢল নেমেছিলো। টিভিতে দেখিয়েছে। আর ঢল নেমেছিলো প্রকৃতির। তারাও মেতেছিলো ক্রন্দনে। এই মাত্র কোথায় জানি পড়লাম বৃষ্টি পাগল হুমায়ূন যার শেষ যাত্রাও হলো বৃষ্টির মধ্যে।

বেশ অনেক আগে ম্যাক্সিম গোর্কির 'আমার ছোটবেলা' পড়েছিলাম। কি যে অদ্ভুত সেই কাহিনী, কি যে বিচিত্র সেই জীবন। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়েছিলাম। ম্যাক্সিম গোর্কির বাবা মারা যাওয়ার পর তার শেষ কৃত্যের দৃশ্যটা যেনো আমার চোখে ভাসে। গোর্কি ছয়-সাত বছরের বালকের চোখে দেখা সেই শেষ কৃত্য, দাফন এর দৃশ্য এঁকেছেন। বাবা মারা যাওয়া কি তিনি বোঝেন না। সকলে একটা কফিন নিয়ে এলো কবস্থানে। তাকেও নিয়ে আসা হলো। ঝুম বৃষ্টি। পানিতে ভরে যাচ্ছে কবরের জায়গা। তাই তাড়াতাড়ি করে কফিন নামানো হলো। একটা ব্যাঙ এর পাশে লাফাচ্ছে। গোর্কির চোখ ব্যাঙের দিকে। কফিন তার চিন্তার বিষয় না। বাবা আর আসবেন না, এই সব তিনি খুব একটা বুঝতেও পারছেন না। সেই বৃষ্টির মধ্যে বাবা কে কবর দিয়ে চলে এলেন বাড়িতে। নানার বাড়ি। সেই থেকে তার ছোটবেলার গল্প শুরু।

আমার বাবা মারা গেলেন কাঠ ফাটা এক দুপুরে। অনেকে বললেন হিট স্টোক করেছেন। কি জানি। আমি তো বাসায় ছিলাম না। পড়াতে গেছি এক ছাত্রের বাসায়। আমাকে ডেকে আনা হলো। আমার আব্বুর শরীর নাকি ভালো না। এসে দেখি, ঘরে লোকে লোকারন্য। কি হয়েছে কিছু বুঝতে পারছিনা। (...........................................) আব্বু মারা গেলেন। ঘটনা অনেকটা এমন, আম্মু গোসল সেরে এসে দেখেন আব্বু ঘরে খাটের উপর বসে আছেন, আর একটু একটু করে ঢলে পরছেন। যেন মাটিতে পরে যাবেন। আম্মু এসে তাকে শুইয়ে দিলেন। সেই শেষ শোয়া। আব্বু আর উঠেন নি। কত হবে তখন সময় ৩.৩০টা থেকে ৪.৩০ এর মধ্যে। আব্বু মারা গেলেন তখন যেন আর সেই রোদ নেই। হালকা বাতাসের সাথে ফোটা ফোটা বৃষ্টি। আমাকে ছুটতে হলো আমার আত্মীয় স্বজনকে খবর দিতে, আমার আব্বু আর নেই। মোবাইল যন্ত্রটা তখনো এতো সহজলভ্য হয়নি। সেই দিন আমার ও কবর হতে পারতো (আচ্ছা সেই গল্পটা থাক)।

এর মধ্যে শুরু হয়েছে, বৃষ্টি। ঝিরঝির বৃষ্টি। হালকা তালে বৃষ্টি। কোথা থেকে এলো? একটু আগেও যে প্রকৃতি ছিলো চরম, সেই প্রকৃতি এখন এতো ক্রন্দন রত কেন?

সন্ধ্যার পর লাশ নিয়ে যাওয়া হলো জুড়াইন কবরস্থানে। বৃষ্টির মধ্যেই। ধীরে ধীরে যেন বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগলো। আব্বুকে কবর দেয়ার সংরক্ষিত জায়গা গেলো পানিতে ভরে। সেঁচা হলো। তিন বার। কতক্ষন আর শুকনা থাকবে? চারদিক থেকে পানি এসে ভরে যায়। একটু একটু পানির মধ্যেই নামিয়ে দেয়া হলো আব্বুকে। আমি জানি না, আমার ছোট ভাই তখন যার বয়স, এগারো কি বারো, সেও ব্যাঙ দেখেছিলো কিনা? বাবা মারা গেলে কি হয় সেতো কিছুই বোঝে না।

হুমায়ূন আহমেদ এর লাশ যখন নুহাশ নামাচ্ছিলো, আমি জানি না, নিষাদ ছিলো কিনা আশে-পাশে। সেও কি ব্যাঙ দেখছিলো? যেটা লাফায়, পানির মধ্যে, আবার পানির উপরেও।

পৃথিবীটা বরই বিচিত্র। আমার কেন যেন মনে হয়- 'পৃথিবীর তাবত ভালো মানুষগুলোর জন্য প্রকৃতি অনুভব করে। তাই তাদের শেষ কৃত্যর সময় বৃষ্টি অবধারিত। হুমায়ূন আহমেদের লাশ যদি ঢাকাতে গতকাল দাফন করা হতো, আমি নিশ্চিত ঢাকাও ডুবে যেতো, শুধু মানুষের চোখের জলে নয়, প্রকৃতির কন্নার জলেও।'
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×