somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহাবীদের সামনে স্বর্গীয় দূত মহান জিবরাঈল (আ) এর আত্মপ্রকাশ

২৫ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা তো সবাই জানি যে, স্বর্গীয় দূত জিবরাঈল (আ) রাসূলুল্লাহ্ (সা) -র কাছে ওহী নিয়ে আসতেন, কখনোবা স্বরূপে, কখনোবা মানবাকৃতিতে। কিন্তু আমরা কি এই ঘটনা জানি যে, জিবরাঈল (আ) সাহাবীদের সামনেও আত্মপ্রকাশিত হয়েছিলেন। একজন নয়, একাধিক সাহাবীর সামনে। আর এ ঘটনাটা বর্ণনা করেছেন সাহাবী আবু হুরায়রা (রা) এবং ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা স্বয়ং ওমর (রা)।

খলিফা ওমর (রা) -এর বর্ণনামতে, একদিন ওমর (রা) সহ আরো কয়েকজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা) -র সাহায্যে নিয়োজিত ছিলেন। এমন সময় একজন আগন্তুক তাদের কাছে এলেন। তার পরিধেয় পোশাকটি ছিল ধবধবে সাদা, মাথার চুল ছিল কুচকুচে কালো। তার মধ্যে ভ্রমণজনিত কোন ক্লান্তির ছাপ ছিল না। সাহাবীদের কাছেও তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন ব্যক্তি।

সেই অপরিচিত ব্যক্তিটি নিজের দুই হাঁটু রাসূলুল্লাহ (সা) -র দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর নিজের দুই হাত রাসূলুল্লাহ (সা) -র দুই উরুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে মুহাম্মাদ (সা) আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ইসলাম হলো তুমি এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্ -র রাসূল। সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে, রামাদান মাসে রোযা রাখবে এবং বায়তুল্লাহ্ পৌছার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ্ব পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। আগন্তুকের কথা শুনে সাহাবীরা বিস্মিত হলেন, কে এই অপরিচিত লোক? যে রাসূলুল্লাহ্ -কে প্রশ্ন করছে আবার তা সত্যায়িতও করছে।

আগন্তুক আবারো প্রশ্ন করলেন, হে মুহাম্মাদ (সা) আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ঈমান হলো আল্লাহ্ -র প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার অবতীর্ণ ঐশী গ্রন্হগুলোর প্রতি, তার রাসূলগণের প্রতি, পরকালের প্রতি এবং তাকদীরের ভালো মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আগন্তুক আবারো বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন।

এরপর সেই আগন্তুক আরেকটি প্রশ্ন করলেন, আমাকে ইহ্সান সম্পর্কে বলুন। রাসূল (সা) বললেন, ইহসান হলো, এমনভাবে ইবাদতে মনোনিবেশ করা, যেন মনে হয়, তুমি আল্লাহ্ -কে দেখছো। যদি তুমি তাকে নাও দেখো, তাহলে ভাববে তিনি তো তোমাকে দেখছেন।

আগন্তুক আবারো বললেন, আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ (সা) নিজের অপারগতা প্রকাশ করে বললেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চেয়ে যাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন। তখন আগন্তুক বললেন, আমাকে এর কিছু নিদর্শন সম্পর্কে বলুন। উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, যখন দাসী তার মনিবের জননী হবে, যখন দেখতে পাবে, নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ, দরিদ্র মেষপালকেরা গর্বের সাথে বিরাট বিরাট অট্টালিকা তৈরীর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

ওমর (রা) -এর বর্ণনামতে এরপরেই আগন্তুক চলে গেলেন। কোন কোন উৎসমতে রাসূলুল্লাহ্ সাহাবীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই আগন্তুককে পুনরায় ডেকে আনার জন্য, কিন্তু সাহাবীরা সেই আগন্তুককে আর খুজে পেলেন না। যা হোক, আগন্তুক চলে যাবার পর, ওমর (রা) সহ অন্যান্য সাহাবীরা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। রাসূল (সা) উনাকে বললেন, হে ওমর! তুমি জানো এই প্রশ্নকারী কে? ওমর (রা) বললেন, আল্লাহ্ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তিনি জিবরাঈল। তিনি এসেছিলেন তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে।

উপরোক্ত ঘটনাটি একটি ঐতিহাসিক হাদীস যা হাদীসে জিবরাঈল নামে অধিক পরিচিত। হাদীসটি বিশুদ্ধ। এই একটি হাদীসই যেন ইসলামের সারাংশ, মুহাম্মাদ (সা) -এর কথা ও কাজের উপর লিপিবদ্ধ হাদীসগুলোর মধ্যে অন্যতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুসলিম শরীফের ১ম বই কিতাবুল ঈমানের ১ম হাদীস। মুসলিম শরীফ শুরুই হয়েছে এই হাদীসটি দিয়ে। এ হাদীসটি বুখারী শরীফেও রয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ
Sahih Muslim, The Book of Faith (Kitab Al-Iman)
Sahih al-Bukhari, Belief, Volume 1, Book 2, Number 48
Hadith of Gabriel
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৫৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×