somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ুনের মৃত্যু একটি রহস্যের নাম

২৫ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ুনের মৃত্যু নিয়ে অনেক ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে।
আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে অবহেলার আর অযত্নের কারনেই তার এই অকাল প্রয়ান।
শাওন যেভাবে গত দুইদিন ছড়ি ঘোরাল তাতে রহস্য আরো ঘনিভুত হয়েছে মনে হয়।
এ ব্যাপারে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস আরা বলেছেন, যে মানুষ রিকভারি করছেন দেখে এলাম, মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যুর বিষয়টি রহস্যজনক। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে কবরে শায়িত হওয়া পর্যন্ত অনেক ঘটনাই ঘটেছে। ঘটনার পরিক্রমায় তার মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য আরও দানা বেঁধে উঠেছে। গতকাল মানবজমিন-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ফেরদৌস আরা বলেন, চিকিৎসক আমাকে বলেছেন, হুমায়ূন আহমেদের দেহে ১০০ ভাগ সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তারপরও তার দেহে ইনফেকশন হলো কেমন করে? কেন তাকে অপারেশনের ১০ দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো? কেনই বা হঠাৎ করে বাসা পরিবর্তন করলেন শাওন? তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আমি ২৩শে জুন বিদেশে যাই। শিল্পী হিসেবে বঙ্গমেলার আমন্ত্রণে সেখানকার বিভিন্ন রাজ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। অনুষ্ঠানের মধ্যে জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদের একটি অনুষ্ঠানও ছিল। সেখানকার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ঠিক করলাম- বেলভ্যু হাসপাতালে হুমায়ূন আহমেদকে দেখতে যাবো। ১৭ই জুলাই বেলভ্যু হাসপাতালে সেখানকার সময় সন্ধ্যা ৭টায় তাকে দেখতে গেলাম। হাসপাতালে প্রায় এক ঘণ্টার মতো ছিলাম। এ সময় তার খোঁজখবর নিচ্ছিলাম। অনেক কথাই শুনলাম। আমি যখন সেখানে যাই তখন তার ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শাওনের মা, শাওন ও অন্যপ্রকাশের মাজহার ছিলেন। আমি হাসপাতালে তার রুমে গিয়ে তাকে দেখে আসি। নিথর একটি দেহ পড়ে আছে ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। শরীরজুড়ে লাগানো লাইফ সাপোর্টের সব যন্ত্রপাতি। শাওন আমাকে বললো, সকাল পর্যন্ত অবস্থা আরও খারাপ ছিল। যেখানে আগে এক শ’ ভাগ লাইফ সাপোর্ট লাগছিল, এখন তা চল্লিশে নেমে এসেছে। আমি আশান্বিত হলাম- যাক তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। শাওনের কথাই বুঝলাম তিনি ভাল হয়ে উঠবেন। আমার প্রশ্ন যিনি ভাল হয়ে উঠছিলেন কেমন করে হঠাৎ করে তার মৃত্যু হলো। তিনি বলেন, হাসপাতালে গিয়ে জেনেছিলাম তার হয়েছিল সফল অপারেশন। ১০০ ভাগ সফল অপারেশন। এতটা সফল চিকিৎসকরাও বিস্মিত হয়েছিলেন। তিনি ১০ দিনের মধ্যেই অনেক ভাল হয়ে ওঠেন। তার চিকিৎসকও আমাকে বলেন, এত ভাল অপারেশন হয়েছে এবং এত সফল একটি অপারেশন হয়েছে যে আমরা হ্যাপি। তার কথায় আশ্বস্ত হলাম শাওনের কাছে জানতে চাইলাম, কি এমন হলো যে অপারেশন সাকসেসফুল হওয়ার পরও তার অবস্থা খারাপ হলো? শাওন বললো, অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছিল এটা ঠিক। কিন্তু পরে তার ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল। কেমন করে ইনফেকশন হয়েছিল জানতে চাইলে, শাওন এর তেমন কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। ফেরদৌস আরা বলেন, আমি শুনেছি তার অপারেশন সফল হওয়ার কারণে তিনি সুস্থ বোধ করায় তাকে ১০ দিনের মাথায় বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাসায় নাকি তার কাছে অনেক মানুষ যেতো। বাসায় কি ঘটনা ঘটলো যে তার ইনফেকশন হলো? তাছাড়াও এত তাড়াহুড়া করে কেনই বা বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল?
ফেরদৌস আরা বলেন, আমি হাসপাতালে যাওয়ার পর একজন আমার পাশেই ছিলেন। তিনি শাওনকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা তো আর আগের বাসায় থাকছেন না নতুন বাসায় গেছেন। শাওন বললো, হ্যাঁ। আমি ভেবেছিলাম, যেহেতু পুরনো বাসা থেকে অপারেশন করানো হয়েছে এজন্য বাসা পরিবর্তন করা হয়েছে। যাতে ভাইরাস তাকে আক্রমণ না করতে পারে। ব্যাপারটা সহজভাবেই নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তারা হঠাৎ করেই বাসা পাল্টালেন- এর পেছনে কি কোন রহস্য ছিল? কারণ যিনি তাদের আগের বাসা ঠিক করে দিয়েছিলেন তিনি বলছিলেন, আমি তো আগের বাসাটি ঠিক করে দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা বাসা পরিবর্তন করেন। কেন করলো এটা জানি না। কারণ, বাসা বদলানোর সময় আমাকে জানানো হয়নি। ফেরদৌস আরা বলেন, এ বাসা বদলের পেছনের রহস্য কি জানা দরকার।
ফেরদৌস আরা বলেন, হুমায়ূন আহমেদ যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন তার কাছে অনেক মানুষ আসতো। অথচ তার ওখানে মানুষ যেতে দেয়া ঠিক হয়নি। আমিও তার রুমে ঢুকে তাকে দেখেছি। কিন্তু এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। আর এ সতর্কতার জন্য তাদের কোন ব্যবস্থা ছিল না। কারণ ওখানকার হাসপাতালের চিকিৎসক আমাকে বলেছিলেন- তার কাছে এত বেশি ভিজিটর আসছে এটা তারা পছন্দ করছেন না। এ নিয়ে তারা বিরক্ত ছিলেন। এক পর্যায়ে তারা লোকের ভিড় কমানোর জন্য পুলিশ ডাকতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, হুমায়ূন আহমেদের অপারেশন হওয়ার পর যে ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার ছিল, অপারেশনের ১০ দিন পর বাসায় নিয়ে তার যে যত্নের দরকার ছিল তা হয়নি। এমনও শুনেছি তার ব্যান্ডেজ নাকি বাসাতেও ইচ্ছামতো পরিবর্তন করা হতো আর লাগানো হতো। এটা শুনে আমি অবাক হয়েছি। এটা কেমন কথা? এত বড় অপারেশনের রোগীকে নিয়ে এসব কি করা হয়েছে! অপারেশনের পর রোগীকে বাসায় নিয়ে যেসব নিয়ম কানুন মানা দরকার তার কিছুই করা হয়নি। এ কারণেই তার ইনফেকশন হতে পারে। ফেরদৌস আরা বলেন, আমার সময় খুব কম ছিল এ জন্য আমি আর আমেরিকায় থাকিনি। হুমায়ূন আহমেদকে দেখে সে রাতেই আমি নিউ ইয়র্ক থেকে ঢাকা রওনা হই। ১৯শে জুলাই সকালে ঢাকায় পৌঁছাই। বিমানপথে একটানা ভ্রমণ করেছি। বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিই। রাতে টেলিভিশন দেখছি- এ সময় খবর পেলাম হুমায়ূন আহমেদ আর নেই। তখন নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে হলো কি এমন হলো যে যাকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টাও হয়নি দেখে এলাম- তিনি মারা গেলেন। যেখানে শুনে এলাম তিনি ভাল হয়ে উঠছেন- এরপরও এটা কেমন করে হলো? তিনি বলেন, মারা যাওয়ার পর তাকে দেশে নিয়ে আসা ও কবর দেয়া নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটলো এগুলোই কি ঠিক হলো? তার কবর কোথায় হবে এ সিদ্ধান্ত আরও দ্রুত নেয়া যেতো। তার মায়ের সিদ্ধান্ত নিলেই হতো। কিংবা তার পরিবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা-ই ঠিক ছিল। কিন্তু পরিবারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার জন্য যে চাপ প্রয়োগ করা হলো তা কি ঠিক হলো? আর যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বসে একজন বলেছেন বলে শুনেছি যে, হুমায়ূন আহমেদের কবর কোথায় হবে দেশে গিয়ে ঠিক করবেন, সেখানে দেশে ফিরেই বললেন অন্য কথা। এখানেও প্রশ্ন। তার শেষ ইচ্ছার কথা বলে এবং তার কবর কোথায় হবে এ নিয়ে কথা বলার পেছনেও কি কোন রহস্য আছে? ফেরদৌস আরা বলেন, তাকে সমাহিত করার জন্য যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া যেতো ততই ভাল ছিল। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতার কারণে একদিন তাকে বারডেমে রাখতে হলো- এটাও ঠিক হলো না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার ভাই জাফর ইকবাল একদিন আগে চলে এলেন। তিনি তো লাশ নিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু কি এমন হয়েছিল যে তাকে লাশ আনতে দেয়া হলো না?

সুত্রঃ দৈনিক মানবজমিন
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×