somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশ্চিমবঙ্গের কাগজে আমি মরলেও খবর হবে না : সুনীল

২৪ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পশ্চিমবঙ্গের পত্রপত্রিকায় দুই বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর খবর তেমন গুরুত্বসহ প্রচার না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও ক্ষাণিকটা হতাশ কণ্ঠে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেছেন, 'আমাদের কাগজগুলো সাহিত্যবর্জিত। তাই আমি মরলেও সেখানে খবর বেরোবে না। রাজনীতির অনুপ্রবেশ হওয়ার কারণে সাহিত্য এখানে ব্রাত্য।'
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে শতভাগ একমত পোষণ করেন গত তিন দশকের জনপ্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদারও। তাঁর ভাষায়, "আজকাল 'সাহিত্য আকাদেমি' কিংবা জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেলেও এখানকার বড় পত্রিকাগুলোয় খবর বের হয় না। যদি সংশ্লিষ্ট কাগজের তরফ থেকে কাউকে কোনো পুরস্কার দেওয়া হয়, তবে সেই পুরস্কারের খবর প্রথম পাতায় ছাপা হয়। আসলে তারা আদৌ জানে না ওই পুরস্কার মূল্য 'সাহিত্য আকাদেমি' কিংবা 'জ্ঞানপীঠ' পুরস্কারের তুলনায় কিছুই না।"
মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে মৃত হুমায়ূনকে দেখার ভয়ে শেষ পর্যন্ত ঢাকায় যাননি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করে বললেন, 'যে জীবন্ত হুমায়ূন আমার অন্তরে ঘোরাফেরা করছে, তাঁকে স্মরণ করে বাঁচতে চাই।' তবে সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার অবশ্য ঢাকায় গিয়ে তাঁর প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে চান। গতকাল কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় তিনি দ্রুত রওনা দেওয়ার ব্যাপারেও আভাস দেন।
গত ১৯ জুলাই ভারতীয় সময় সাড়ে ১০টা নাগাদ নিউ ইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশের এই কথাসাহিত্যিকের মৃত্যু হয়। সেই খবর সেদিনই কলকাতার সংবাদভিত্তিক কয়েকটি চ্যানেল ব্রেকিং নিউজ হিসেবে প্রচার করে। তবে পাঠকরা আশ্চর্য হন, পরদিন কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রথম সারির কাগজগুলোয় সেভাবে এ খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ না করতে দেখে। বড় কাগজগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দৈনিক পত্রিকা ছোট্ট করে খবরটি ছাপে। এ বিষয়টিও পাঠকদের বিস্মিত করে। কারণ দুই বাংলার ওই পত্রিকাটির জনপ্রিয় একটি সাহিত্যনির্ভর পাক্ষিক প্রকাশনায় পরপর সাতবার হুমায়ূন আহমেদের লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তবে প্রচারসংখ্যায় কম এমন বহু দৈনিক পত্রিকায় হুমায়ূনের মৃত্যু খবর প্রকাশ করা হয় গুরুত্বের সঙ্গে। খবর প্রকাশের দৌড়ে অবশ্য সবার চেয়ে এগিয়ে নব্য দৈনিক 'খবর ৩৬৫ দিন'। পত্রিকাটি প্রথম দিন থেকে প্রতিদিনই ধারাবাহিকভাবে গুরুত্ব দিয়ে খবর করছে।
শুধু মৃত্যু সংবাদ নয়, পরবর্তী সময়ে তাঁর ঢাকায় ফেরা এবং দাফনসংক্রান্ত খবর নিয়েও পশ্চিমবঙ্গের প্রচারবহুল কাগজগুলোর অধিকাংশ উদাসীন বলে মনে করছেন স্থানীয় পাঠক থেকে বিশিষ্ট দুই সাহিত্যিক।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, 'এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বাণিজ্যিকীকরণ। সাহিত্য নিয়ে লিখলে বাণিজ্য হয় না। রাজনীতি নিয়ে লিখলে কাগজ বেশি বিক্রি হয়। আমি মনে করি, এখানের কাগজগুলো সাহিত্যবর্জিত হয়ে গিয়েছে। যে কারণে হয়তো আমি মরলেও খবর বের হবে না। এতে আমার পাঠকরাও আশ্চর্য হবে না। কারণ রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে।'
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় হায়দ্রাবাদ থেকে কলকাতায় ফিরেছেন সমরেশ মজুমদার। আজ হুমায়ূন আহমেদের দাফন অনুষ্ঠানের আগেই ঢাকায় সশরীরের উপস্থিত থাকতে চান এই লেখক। 'কালপুরুষ'খ্যাত এই লেখক বললেন, 'আমি জানি না শেষ পর্যন্ত ঢাকায় গিয়ে আমি হুমায়ূন আহমেদকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে পারব কি না। তবে শতভাগ চেষ্টা করছি ঢাকায় যাওয়া।' তিনি হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তার কথা বলতে গিয়ে বললেন, "আসলে আমাদের (পশ্চিমবঙ্গের পাঠক) পাঠকরা অনেক বেশি মৌলবাদী। কারণ বাংলাদেশের লেখকদের লেখায়, 'পানি', 'চাচা', 'ইমাম', 'খালু', 'খালা' কিংবা 'নামাজ' এই সব শব্দ উল্লেখ থাকে। সেই লেখা পড়লে আমাদের পাঠকরা ভাবেন সেটি তাঁদের মধ্যে প্রবেশ করবে। তাই সেই ভয়ে আমাদের পাঠকরাও বাংলাদেশের লেখকদের বই পড়তে চান না। কিন্তু আমি মনে করি, হুমায়ূন আহমেদের মতো লেখকের কারণেই পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের লেখা পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে। তাঁরা কিন্তু আমাদের লেখার মধ্যে 'নিমন্ত্রণ', 'পুজো', 'তুলসী তলা', 'মন্দির' শব্দগুলো পড়েও কোনো সংকীর্ণতায় ভোগেন না। তাঁরা আমাদের পাঠক থেকে বেশি উদার।"
এদিকে আজ বিকেলে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে আয়োজন করা এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং মণিশঙ্কর প্রমুখ বর্ষীয়ান সাহিত্যিক-কবি। কলকাতার উপ-দূতাবাস এই স্মরণসভার আয়োজন করেছে।
সুত্র:কালের কণ্ঠ
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামীলীগে শুধুমাত্র একটি পদ আছে, উহা সভাপতি পদ!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৪ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১


বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

দোয়া ও ক্রিকেট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৪


দোয়া যদি আমরাই করি
তোমরা তাইলে করবা কি?
বোর্ডের চেয়ারম্যান, নির্বাচকের
দুইপায়েতে মাখাও ঘি।

খেলা হচ্ছে খেলার জায়গা
দোয়ায় যদি হইত কাম।
সৌদিআরব সব খেলাতে
জিতে দেখাইত তাদের নাম।

শাহাবুদ্দিন শুভ ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!!

লিখেছেন অন্তর্জাল পরিব্রাজক, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:২১



দয়া করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!! X( এরা ছাগলের দলই ছিল, তাই আছে, তাই থাকবে :-B !! এরা যেমন ধারার খেলা খেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×