somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশেষায়িত ছেড়ে সাধারণ হাসপাতালে কেন অপারেশন হলো হুমায়ূন আহমেদের?

২৪ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শহীদুল ইসলাম, নিউইয়র্ক থেকে
বিশ্বখ্যাত ক্যান্সার হাসপাতাল নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ন কেটারিং সেন্টার। এই হাসপাতালেই ক্যান্সারের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। ১২টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল তার শরীরে। এরপর চিকিৎসকেরা তার বৃহদান্ত্রে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এই বিশেয়ায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল ছেড়ে অপারেশনের জন্য কেন সাধারণ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর সেই প্রশ্ন ধীরে ধীরে সামনে আসছে। এমনকি অসুস্থতা নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং পারিবারিক বন্ধু ও প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাযহারুল ইসলামের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতেও তার ভক্তরা এসব প্রশ্ন তুলেছেন।
বিশেয়ায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল ছেড়ে অপারেশনের জন্য হুমায়ূন আহমেদকে কেন সাধারণ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল এই প্রশ্নের জবাবে প্রথম দিকে তার চিকিৎসা তদরকিতে নিয়োজিত নিউইয়র্কের পুস্তুক বিক্রেতা ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মুক্তধারার কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা জানান, অর্থ সাশ্রয়ের জন্য পরিবারের সদস্যরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, মেমোরিয়াল স্লোয়ন কেটারিং সেন্টারে ক্যান্সারের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। এ ব্যাপারে বিশ্বজিৎ সাহা আর কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে বিশ্বজিৎ সাহার এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নাম প্রকাশে কয়েকজন প্রবাসী বলেন, মার্কিন মুল্লুকে যে কোনো হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি হলে আগে তার চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়। এটা যতই ব্যয়বহুল হোক না কেন। পরে চিকিৎসা বাবদ বিল রোগীর ঠিকানায় পাঠানো হয়। পরবর্তীতে ওই চিকিৎসার ব্যয় মওকুফ করারও সুযোগ রয়েছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরিবারের সদস্যরা অর্থ সাশ্রয়ের কথা বলে হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা নিয়ে তারা অবহেলা করেছেন। তারা বলেন, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তার চিকিৎসায় প্রয়োজনে দেশবাসী সহযোগিতার হাত বাড়াতো।
একটি সূত্র জানায়, হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসায় ত্রুটি ছিল, যা প্রথম অস্ত্রোপচারের ১০ দিনের মাথায় ধরা পড়ে। গত ১২ জুন বেলভ্যু হাসপাতালে প্রথম অস্ত্রোপচারের পর ১৯ জুন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জরুরিভাবে তাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, জ্যামাইকা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে হুমায়ূন আহমেদের অপারেশনে ত্রুটি আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ মজা করে বলেছিলেন যে তিনি মামলা ঠুকে দেবেন। ড. মোমেন এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘জ্যামাইকা হাসপাতালে গেলে কেউ আর ফিরে আসেন না। আপনি তো ফিরে এসেছেন।’
হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় বার জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি এবং অপারেশন হওয়া প্রসঙ্গে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রথম অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু ৭ দিন পর বাসার চেয়ার থেকে অসাবধনাবশতঃ পড়ে যান হুমায়ূন আহমেদ। এরপর প্রচ- ব্যাথা অনুভব করেন তিনি। জরুরিভাবে তাকে নেওয়া হয়েছিল জ্যামাইকা হাসপাতালে। কিন্তু অপারেশনে ত্রুটি আছে একথা বলে জ্যামাইকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরবর্তী চিকিৎসা না দিয়ে আগের হাসপাতালে স্থানান্তর করে। অথচ চিকিৎসকের কাছে মেহের আফরোজ শাওন কখনো বলেননি তার স্বামী চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলেন এবং অপারেশনের ক্ষত স্থানে আঘাত পেয়েছিলেন। চিকিৎসকের কাছে কোনো কথা গোপন করতে নেই।
বেলভ্যু হাসপাতালে অপারেশনের পর নিউইয়র্কের জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশন এবং কন্সুলেট থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করা হত হাসপাতালে। স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোমেনসহ স্থায়ী মিশনের কেউ না কেউ প্রায় প্রতিদিনই হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসার খোঁজ নিতেন। বিশেয়ায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল ছেড়ে অপারেশনের জন্য হুমায়ূন আহমেদকে কেন সাধারণ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল এ প্রশ্নের জবাবে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এ বিষয়টি একান্তই পরিবারের সিদ্ধান্তে হয়েছে। এ ব্যাপারে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও তিনি বলেন, মেমোরিয়াল স্লোয়ন কেটারিং সেন্টার ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য সর্বোত্তম ও বিশ্বখ্যাত। তার পরিচিত অনেক রোগী দীর্ঘদিন ধরে এখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ আছেন বলে জানান তিনি।
বেলভিউ হাসপাতালে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের পর থেকে হুমাযূন আহমেদের চিকিৎসা নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করতে চাননি তার স্ত্রী ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং চিকিৎসা তদারকিতে নিয়োজিত অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাযহারুল ইসলাম। হুমায়ূন আহমেদ যেদিন মারা যান এর কয়েকঘণ্টা আগে বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তারা দাবি করেন যে হুমায়ূন আহমেদ ভালো আছেন এবং তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এর কয়েকদিন আগে থেকে সংবাদমাধ্যমগুলো হুমায়ূন আহমেদের শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা তুলে ধরে খবর প্রকাশ করলে মাযহারুল ইসলাম ক্ষুব্ধ হন। তিনি এ ধরনের সংবাদকে অপসাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকতার কলঙ্ক বলে আখ্যায়িত করেন। এমনকি মৃত্যুর আগের দিন সংবাদপত্রে বিবৃতি পাঠিয়ে তারা দাবি করেন যে হুমায়ূন আহমেদের অবস্থা যতটা খারাপ বলা হচ্ছে ততটা নয়। হুমায়ূন আহমেদকে দেখে এসে তার বন্ধু নাট্য ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর সাংবাদিকদের যেসব তথ্য জানিয়েছিলেন তাও সঠিক নয় বলে দাবি করেন মাযহারুল ইসলাম। জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে হুমাযূন আহমেদের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। এ প্রসঙ্গে মাযহারুল ইসলাম বলেছিলেন, আমেরিকায় রোগীর প্রাইভেসি রক্ষা করা হয়। স্ত্রী এবং কাছের স্বজন ছাড়া কারো কাছে চিকিৎসকরা কোনো তথ্য প্রকাশ করেন না। সাংবাদিকরা বিভিন্ন ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে যা লিখছেন তা সঠিক নয়।
একটি সূত্র জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জ্যামাইকার বাসায় হুমাযূন আহমেদকে দেখতে গিয়েছিলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসায় ১০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন। পরিবারেরর পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, ক্যান্সারের চিকিৎসায় হুমাযূন আহমেদ নিজেই ২ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারবেন। এর বেশী প্রয়োজন হলে তিনি প্রয়োজনে সরকারকে জানাবেন।
হুমায়ূন আহমেদ আর্থিকভাবে সবসময় স্বচ্ছল ছিলেন। তার একটি বই বাজারে এলে রয়্যালটি কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। দেশে অনেক স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের। অথচ অর্থ সাশ্রয়ের জন্য কেন তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়া হল তা কারো কাছে বোধগম্য নয়। হুমায়ুন আহমেদের চিকিৎসার সঠিক খবরটিও দেশবাসীকে জানানো হয়নি। অথচ তিনি একটি পরিবারের নয়, দেশের সম্পদ ছিলেন।

শহীদুল ইসলাম - দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি, যুক্তরাষ্ট্র
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×