গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুবাগানের নিচে মাটির ঘরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন হুমায়ূন আহমেদ। এতে জয় শুধু পল্লী নুহাশের নয়, হুমায়ূন-পুত্র নুহাশেরও বটে। পুত্র নুহাশতো চেয়েছিলেন রাজধানী ঢাকার মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কিংবা বনানী কবরস্থানে হুমায়ূনের শেষ শয়নের ব্যবস্থা করতে, তবে তার জয় কিভাবে? এর উত্তর দেয়ার আগে প্রিয় পাঠক, আপনাদের সমীপে একটা প্রাচীন কাহিনি পেশ করি:
মহামতি দাউদের রাজত্ব। দুই নারী তাঁর দরবারে বিচার নিয়ে এসেছেন। দুজনই এক শিশুর মাতৃত্ব দাবি করছেন। দাউদ তখন পুত্র সোলেমানকে ভবিষ্যত রাজকার্য অর্পণের স্বপ্ন দেখছিলেন। তাই সোলেমানের বিচক্ষণতার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন নানা উপায়ে। দুই মা, এক শিশু-এর মিমাংসার ভার দেয়া হলো সোলেমানের কাঁধে। তিনি নানা ভাবে যাচাই করেও প্রকৃত মা কোন-জনা, তা বের করতে পারলেন না। তাই তার সিদ্ধান্ত: যেহেতু দুজনই শিশুর দাবিদার, তাই শিশুটিকে দুই ভাগ করলেই ল্যাঠ্যা চুকে যায়। ডাক পড়লো জল্লাদের, তলোয়ার নিয়ে শিশুটিকে দ্বিখন্ডিত করার জন্য প্রস্তুত তিনি। শিশুটিকে কেটে ভাগ করতে যখন তলোয়ার উঁচু করলেন জল্লাদ, তখনি এক নারীর চিৎকার, ‘আমি মিথ্যা বলেছি, বাচ্চাটি আমার নয়, ওই মহিলার। উনাকেই বাচ্চাটা দিয়ে দেন। ছোট্ট বাচ্চাটির উপর এই তলোয়ার চালাবেন না, আমাকে শাস্তি দিন।’ মহামতি সোলেমানের ইশারায় তলোয়ার নামিয়ে খাপে ভরলেন জল্লাদ। আর তখন সোলেমানের রায়, ‘শিশুটিকে বাঁচাতে যিনি স্বীকার করলেন তিনি শিশুটির মা নন, তিনিই প্রকৃত মা। কারণ শিশুটির করুণ মৃত্যু ঠেকাতে এছাড়া আর কোনো পথ ছিলো না তাঁর কাছে। তার এই মিথ্যা মমতাময়ী মায়ের জয়-জয়কারই যেন ঘোষণা করলো।’
মৃত হুমায়ূনের লাশ কোথায় শায়িত হবে, এ নিয়ে যখন দ্বন্দ্ব, দেশজোড়া সমালোচনার ঝড়, এসব থামাতে আর হুমায়ূনের আত্মার শান্তির জন্য দ্রুত শেষ শয়নের মাটির ঘর বড় দরকারি হয়ে পড়েছিল। তাই নুহাশরা রাত গভীরে হলেও নিজ অবস্থান থেকে সরে আসায়, দ্বন্দ্ব-যুদ্ধের প্রকৃত জয়ী তারাই। সব পরাজয়ে হার হয় না, কোনো কোনো পরাজয়ে লুকিয়ে থাকে বিজয়!