প্রিয় মেহের আফরোজ শাওন
প্রিয় লেখক, হুমায়ূন আহমেদের জীবনের শেষ কিছুটা সময় আপনি তাকে সেবা দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে তার জীবনকে আনন্দময় করে তুলেছিলেন। তার জন্য আপনার প্রতি শ্রদ্ধা।
আপনার পরিচর্যায়, ভালবাসায় হুমায়ূন আহমেদ হয়তো খুঁজে পেয়েছিলেন জীবনের নতুন কোন উপলব্ধি। হয়তো তার জীবনের কোন সুপ্ত না পাওয়ার হাহাকার তাকে আপনার কাছে টেনেছিল। আপনার মাধ্যমে তিনি জীবনের শেষ সময়ে এসে সেটা পেতে চেয়েছিলেন। হয়তো পেয়েছিলেন ও সেটা আপনার কাছে।
প্রিয় লেখকের জন্য এটুকু করে আপনি আমাদের মত অনেকের কাছে শ্রদ্ধেয়।
লেখকের জীবনে আপনার এই অবদান রাখার সুযোগ কিন্তু সামান্য মূল্যে আসেনি। অনেকগুলো হৃদয়ের গভীরতম কান্না আর হাহাকারের বিনিময়ে আপনি পেয়েছিলেন অথবা নিয়েছিলেন সেই সুযোগ। গুলতেকিনের ৩২ বছরের আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নায় গড়া সাজানো সংসার , এক নিমিষের ঝড়ে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়েছিল। নোভা-শিলা-বিপাশা-নুহাশের রক্তের বাঁধন আলগা হয়েছিল বুকফাটা অভিমানের আগুনে। সেই আগুন রক্তের বাঁধনকে আলগা করতে পেরেছিল ঠিকই, কিন্তু সে বাঁধনকে ছিন্ন করতে পারেনি। কারণ রক্তের বাঁধন কে ছিন্ন করা যায় না। চেপে রাখা অভিমান গুলো আজ গলে গলে অশ্ম্রু হয়ে গড়িয়ে পড়ছে তাদের দুচোখ দিয়ে। এই কষ্ট অনুভব করার ক্ষমতা কারো নেই।
আপনি আপনার ভালবাসার জন্য যা করেছেন তার বিনিময়ে আপনি ও কিন্তু কম পাননি। বস্তুগত জিনিষের কথা নাই বা তুললাম।আপনি পেয়েছেন পাহাড়সম পরিচিতি, নিজের যোগ্যতার অতিরিক্ত খ্যাতি (আপনি অস্বীকার করবেন না আশা করি)।
আরো পেয়েছেন লেখকের সান্নিধ্য-ভালবাসা, মনে রাখার মত অনেক অনেক আনন্দময় মুহূর্ত আর পেয়েছেন বিখ্যাত লেখকের দুইজন উত্তরসুরী যা নিঃসন্দেহে আপনাকে বানাবে ইতিহাসের একজন। কিন্তু সত্যি কথা হলো এত কিছু পাওয়ার জন্য আপনাকে কিন্তু তেমন কিছু হারাতে হয়নি। কিছু ত্যাগ আপনি হয়তো স্বীকার করেছেন। সেটুকু ত্যাগ অনেকই করতে রাজী হতো হয়ত এত কিছু প্রতিদান পাবার আশা থাকলে।
আজ লেখকের মৃত্যুতে আপনি তার সব, সব কিছুর অধিকার চাইছেন। তার লাশের অধিকার সহ। আপনার এই চাওয়া টা অত্যধিক অন্যায় বলে মনে হচ্ছে।
হুমায়ূন আহমেদ বৃক্ষ পছন্দ করতেন। অনেক লেখায় তিনি বৃক্ষ হতে চেয়েছেন। তিনি নিজে যদি বৃক্ষ হন, আপনি সর্বোচ্চ সেই বৃক্ষের একগুচ্ছ ফুল হতে পারেন যা বৃক্ষকে দিয়েছিল অনাবিল প্রশান্তি কিছু সময়ের জন্য। কিন্তু সেই বৃক্ষের শেকড় কিন্তু পড়ে আছে নোভা-শীলা-বিপাশা-নুহাশের কাছে। গুলতেকিনের কাছে। লেখকের মায়ের কাছে।
বৃক্ষের অন্তিমকালে বৃক্ষকে তার শেকড়ের কাছে ফিরিয়ে দিন। তাহলেই ইতিহাস আপনাকে শ্রদ্ধা করবে আপনার প্রাপ্য মর্যাদা দিয়ে।
না হলে ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৩:১৪