১
পুলক ভাইয়ের না বলা কথাগুলো
পুলক ভাই কবি মানুষ । কবি কবি ভাব আনার জন্য উনি বাপের দেয়া নাম আহসানুল হাকীম বাদ দিয়ে পুলক আহসান বানিয়েছেন । আকিকা হিসেবে আমাদের কাউয়া বিরিয়ানি দিয়ে ভূরিভোজের ব্যবস্থাও করেছেন । হঠাৎ করে তিনি উদাও হয়ে যান আবার হুট করে ফিরেও আসেন । এসেই আমাদের জরুরী তলব করেন । আমি বাবলু আসিফ উনার সভাসদ । পুলক ভাই এবার বেশ হন্তদন্ত হয়েই তলব করেছেন । “তোরা কিছু একটা কর” পুলক ভাই বেশ শান্ত গলায় বললেন । আসিফ অতি উৎসাহী হয়ে জিজ্ঞেস করলো “ভাই কি হইছে ?” এবার পুলক ভাইকে বেশ হতাশ মনে হল । “বোঝস না কেন । ভাবি তো তোদের দরকার । ওই যে মেয়েটার কথা বলেছিলাম ।” “পুলক ভাই,এই শেষ বয়সেও !” ব্যঙ্গ করেই বলরো বাবলু ।আমি সবাইকে থামিয়ে বললাম “পুলক ভাই,ডিটেইলস বলেন” । আর এতেই পুলক ভাই চলে গেলেন ফ্লাশব্যাকে ।
“কেউ বুঝলো না,আমার না বলা কথাগুলো।আমি তখন মাত্র ক্লাস এইটে।আমাদের পাশের বাড়িতে থাকতো রিমিরা।রিমি সবে মাত্র ক্লাস সিক্সে।ওর জন্য পাড়ার সবাই তাদের রুটিন বদলে ফেলেছিলো।যেই আমি স্কুল পালিয়ে খেলার মাঠে পড়ে থাকতাম,সেই আমিও খেলার মাঠের বদলে বিকেলে বাড়িতে থাকতাম।বারান্দায় বসে বই পডার ছলে ওকে দেখতাম।এতে আমার গুড বয় ইমেজ সৃষ্টি হয়েছিলো তার বাবার কাছে।আহ সেই দিনগুলো…………” একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন পুলক ভাই।খানিক নিরবতা।আবার শুরু করলেন “আমি বেশ আশাবাদী হয়ে উঠলাম।একদিন বিকেলে পাড়ার বন্ধুরা এসে বললো,চল পুলক,এক জায়গায় যাব।আমিও রাজী।গিয়ে দেখি রিমির স্কুল বাসের অপেক্ষায় দাড়ালো সব রোমিও।কিছুক্ষনের মধ্যে স্কুল বাস তো এলো,সাথে রিমির বাবাও।টের পেয়ে সবাই পালালো,আমি ছাড়া। বোঝ অবস্থা” বলে আবার চুপ হয়ে গেলেন। “আমার মনে হয় কি, রিমি বুঝতো……………………….”
পুলক ভাই একটা বৈশিষ্ঠ্য উনি গল্প শুরু করলে শেষ করেই থামেন। আর আমাদের মনযোগ দিয়ে শোনা বাধ্যতামুলক।গল্পের মাঝে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা নিষেদ।তাই আমরা চুপ হয়ে বসে আছি।উনি আবার শুরু করলেন “মেট্রিকে ভালো রেজাল্ট করায় ভর্তি হলাম শহরের কলেজে।চারিদিকে ভালো ছাত্রের ছড়াছড়ি।এই ক্লাস,ওই ক্লাস এই স্যারের বাসা তো ওই স্যারের বাসা।আর আমার দু’চোখ শুধু কারে জানি খোজে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেটে গেলো দুইটা মাস।কলেজে তখন বেশ ঘটা করে নবীনবরন করা হত।আবৃত্তি করতাম,তাই আমারও ডাক পড়লো।জানানো হল ১১টায় রিহার্সেল।আমি খানিক পরেই গেলাম।রুমে ঢুকতেই আমার চোখ আটকে গেলো একটা মেয়ের দিকে।খোজ নিয়ে জানলাম তার নাম সোমা।এ সেকশানে পড়ে,আর আমি বি সেকশানে।উঠেপড়ে লাগলাম সেকশান পাল্টাতে।অল্প ক’দিনেই বেশ খাতির জমিয়ে ফেললাম তার সাথে।দাড়ি উঠি উঠি করা গালে নিয়মিত শেভ করে,দু’দিন ধরে রিহার্স করা ডায়ালগ মনে রেখে তার সামনে যেতাম।কিন্তু হায়,তার সামনে গেলেই সব ওলটপালট হয়ে যেত।না,এভাবে কাজ হবে না।ভাবলাম বিকল্প পদ্বতিতে বলতে হবে।” পুলক ভাই আবার চুপ।“ভাই বলেছিলেন” আসিফ বললো।“সে এক বিরাট ইতিহাস। ইটস এ লং স্টোরি।নিত্যনতুন ছড়া লেখা শুরু করলাম।একটাও আমার মনে ধরেনা।তারমাঝেও কিছু দেখালাম ওকে।একদিন দেখি সোমা তার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে হাজির।আর আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো,“ ও পুলক খুব ভালো ছড়া লিখে যদিও আমি ওসবের মাথামুন্ডু কিছুই বুঝিনা”। হায়রে,অভাগা যেদিকে যায় সাগরের জল শুকিয়ে যায়।”
“ভাই লং স্টোরি কি সর্ট্ করা যায়” বাবলু কিছুটা রেগেই বললো।পুলক ভাই আক্ষেপ করেই বললেন “কি আর বলবো।আমার এক বন্ধু বললো ‘আজকাল মেয়েরা কবি নয়,ব্যবসায়ী দেখে প্রেম করে’।এতক্ষন চুপ থাকার পর আমি বললাম “তারপর কি করলেন ’’
“ভার্সিটি উঠলাম।ভাবলাম ব্যবসাপাতি ধরতেই হবে।যেই ভাবা সেই কাজ।MLM পার্টিতে যোগ দিলাম।সাথে খোঁজও চলতে থাকলো।হাউ ফাউ কোম্পানীতে টাইমও ভালো চলছিলো।বৃহস্পতি তখন তুঙ্গে।লীনার সাথে ভাবটাও গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছিলো।শুধু এই বলি এই বলি বলে বলা হচ্ছিলো না আমার না বলা কথাগুলো।কত কথাই তাকে বলতাম কিন্তু কাজের কথায় এলেই কেমন জানি চুপসে যেতাম।হঠাৎ একদিন আমার হাউ ফাউ কোম্পানি উধাও”।বলেই পুলক ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।আসিফ বেশ কৌতুহলি দৃষ্টিতে তাকিয়ে “তারপর পুলক ভাই”। “সপ্তাখানেক লীনাও উধাও।তারপর একদিন এলো তার বর নিয়ে।আফসোস থেকে গেল।কাউকে বলা হলো না আমার না বলা কথাগুলো।”
প্রিয় পাঠক,আপনারা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন,পুলক ভাই এর না বলা কথাগুলো।সেই বালিকারাও হয়তো জানতো,না বলা কথাগুলো।আধুনিক ঈশপ এর মতো গল্পের শেষে বলতে চাই “দরজায় দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই।দোরঘন্টি বাজান”
২
হইতে পুলক,প্রতি শাহরিয়ার
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং,ফোন বাজতে থাকলো।তিন চারবার রিং হবার পর ফোন তুললাম।“হ্যালো,স্লামালিকুম”।“হারামজাদা,এই করে বেড়াস।’’ অপর প্রান্তে অগ্নিশর্মা পুলক ভাই।
“ভাই, কি হইছে।”
“সারাদিন পরে পরে ঘুমাস,বুঝবি কেমনে কি হইছে।লেটার বক্স চেক কর।বহুদিন পর একটা চিঠি লিখলাম।”
“জি ভাই,দেখি।”
“দেখ,দেখ।জীবনে কোনদিন প্রেমপত্র লিখিনাই,সেই আমি বাধ্য হয়ে তোকে এই চিঠি লিখছি।আমার মান ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে ছাড়লি।আমাকে এভাবে অপমান করার মানে কি?”
“ভাই মাইন্ড খাইলে সরি।কারন আমরা অপনারে খোচানোর এই বদ স্বভাব ছাড়তে পারবো না।”
“আরে, না রে।মান থাকলেই তো অপমান।হা হা হা হা।বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে।চিঠি পড়,বুঝবি”
কথা শেষ করার আগেই লাইন কেটে গেল।
ঝটপট লেটার বক্স থেকে চিঠি বের করে পড়া শুরু করলাম।প্রিয় পাঠক,আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম সেই ঐতিহাসিক চিঠি।
(ঈষৎ পরিমার্জিত এবং নিজের কিছু মন্তব্যও সাথে জুড়ে দিলাম।)
স্নেহের শাহরিয়ার
কুশলাদি বিনিময় নিষ্প্রয়োজন মনে করিতেছি।আদর দিয়ে তোদের বাদর বানিয়েছি।গত সপ্তাহে তোর লেখা “পুলক ভাইযের না বলা কথাগুলো” তার উজ্জল প্রমান।(আমি কিন্তু সত্য ঘটনাই লিখেছি)।যাই হোক,লেখাটি পাঠকমহলে যে সুনামি তৈরী করেছে তাতে কোন দ্বিমত নাই।কিছু না বলেও আমার না বলা কথাগুলো জানিয়ে দিলি, এটা মানব ইতিহাসে ঠাঁই করে নিবে বলে আশা করা যায়। বিরাট ঘটনা ঘটিয়া গিয়াছে। ম এবং ট গতকাল আমাকে কল করিয়াছিলো।তাহারা বেশ আক্ষেপ করিয়া বলিলো,“পুলক,তুই কি আমার পিছনে ঘুর ঘুর করিস নাই। তুই কি আমাকে কিছু বলতে চাইতি না।ভুলে গেলি এতো সহজে।” (জনৈকাদের নাম সংগত কারনে প্রকাশ করা হলো না।উনাদের আক্ষেপ বাড়তে থাকুক)।কিছুটা মর্মাহত হইয়াছি,কেন তুই লেখাটি অনেক আগে লিখিস নাই।তাহলে কাহিনী অন্যরকম হইতে পারতো।(উহুম উহুম……….বুঝুন অবস্থা)যাহাই হোক,উইনস্টোন চার্চিল বলিয়াছিলেন “look back and step forward”।এক গ্রীক নাট্যকার বলিয়াছেন “পুরানো দুঃখকে নিয়ে নতুন করে কেঁদোনা।”(এই দুই কোটেসান দিয়ে পুলক ভাই উনার জ্ঞানের পদচ্ছাপ রাখলেন।তবে মনে রাখতে হবে,অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী)আইনস্টাইনও বলিয়াছেন “অতীত নয়,বর্তমানটাই আসল”(আদৌ কি এই কথা আইনস্টাইন বলেছেন।নিজে একটা কথা বলে বিখ্যাত কারো নাম দিয়ে চালানো পুলক ভাইয়ের পুরোনো রোগ)যদিও আমি এসব জ্ঞানের কথা শুনাইতে এই পত্র লিখি নাই,তবু জেনে রাখা ভালো।যা বলতে চাই।
আরব বিশ্বে অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমাকে মুগ্ধ করেছে।আমি আনন্দিত,উদ্বেলিত।প্রথমেই জানিয়ে দেই আমি তাদের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করছি।গনতন্ত্রের জন্য তাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকা যায়।আমিও চাই আমার মনের রাজ্যে যে স্বৈরশাসন চলছে তার পতন ঘটুক।একা সেই রাজ্য চালাতে চালাতে আমি ক্লান্তও বটে।আমি চাই কেউ আসুক,আর ক্ষমতার অংশীদার হোক। ক্ষমতার মমতা আমাকে আর টানেনা।আমি বলবো না,আমাকে ভালোবাসতেই হবে।আমি চাই কেউ আমার মনের রাজ্যের ক্ষমতার অংশীদার হোক।তাহরীর স্কয়ার এর মতো তাই আমার বুকের বামপাশে বিশাল জায়গা খালি রেখেছি।ক্ষমতার ভাগ পেতে আগ্রহীদের জানিয়ে দে।
জুয়েল বাবলু আসিফদের আমার শুভেচ্ছা জানাবি।ভালো থাকিস,সুখে থাকিস,যেনো ভূতে কিলায়।
ইতি
অখ্যাত ছড়াকার পুলক
প্রিয় পাঠক, ক্ষমতার টানাপোড়ন চলতে থাক,চলতে থাক অংশীদারিত্ব নিয়ে মারামারি।মনে রাখবেন,অধিকারের মতো ক্ষমতাও কেউ কাউকে দেয়না।ক্ষমতা আদায় করে নিতে হয়।ক্ষমতা ধরে রাখতে হ্য় অন্যথায় সেই কথাটি আবার বলতে হবে “পুরুষ দুই প্রকার-জীবিত এবং বিবাহিত”।আর একটা কথা, অতীত-ভবিষ্যতের পীড়াপীড়িতে বর্তমানে বাচুন।আজকে বাচুন,আজকের জন্য বাচুন। নগিব মাহফুজ এর একটা কবিতা শেয়ার করলাম
“আমার ঘর বলে
আমাকে ত্যাগ করোনা
কারন আমি তোমার অতীত
আমার সম্মুখের রাস্তা বলে
আমাকে অনুসরন করো
কারন আমি তোমার ভবিষ্যত”
৩
পুলক ভাইয়ের বিব্রতকর মুহুর্তগুলো
১
“তানভীর ভালো পারফিউম কতো দামে পাওয়া যাবে ?”
“@PULOK ভাই,আপনি যতো দামে কিনতে চান”
“ফাজিল,সোজা কথায় উত্তর দিতে তোদের কি সমস্যা !”
“ভাই সমস্যা নাইতো।কিন্তু এতো ফিটফাট হয়ে আপনি কই যাইতেছেন ? ভাইভা নাকি ?”
“আরে না।বোঝস না,আমার তো হয়ে গেছে।”
“কি হয়ে গেছে ?”
সুযোগ পেয়ে আমাদের অতি প্রিয়,রোমান্টিক পুলক ভাই বলতে শুরু করলেন
“পথ ঘুরে ঘুরে আমি ক্লান্ত প্রান এক
আমার চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন
আমাকে দু’দন্ড শান্তি দিতে চলে এলো…………….”
“তাই নাকি।কনগ্রেটজ”
আমার পাশে বসে থাকা বাবলু ক্ষিন স্বরে বলে উঠলো
“চুল তার কাউয়ার বাসা
এই বুঝি শেষ,পুলকের বাচা”
@JEWEL তো রীতিমতো কোলাকোলি করে পুলক ভাইকে মাথায তোলার অবস্থা। জুযেল বললো “ ভাই কি ভাবির সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন”
পুলক ভাইয়ের লাজুক উত্তর “হ্যাঁ যাচিছ। দোয়া করিস তোরা”
এবার বাবলু উঠে দাড়ালো আর চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কি জানি পড়লো। পুলক ভাইয়ের গায়ে ফু দিতে দিতে বললো “পুলক ভাই,আজকে কি দুইবার শেভ করেছেন?”
পুলক ভাইয়ের তড়িত জবাব “হ্যাঁ”
বাবলু আবার বললো “কি কি বলবেন,সেগুলো ১৫/১৬ বার রিহার্স করেছেন তো?”
ভাবাবেগ ছাড়াই পুলক ভাইয়ের জবাব “হ্যাঁ,কিন্তু কেমনে বুঝলি?”
“পুলক ভাই বাদ দেন। কোতায দেখা করবেন বলে ঠিক করেছেন?”
“সেটাই তো সমস্যা।কই যে বসি একসাথে”
আমি পুলক ভাইকে আশ্বস্ত করে বললাম “প্রেম যেহেতু হয়ে গেছে place is not ব্যাপার।হোক স্যামারের পাঁচতলায় কিংবা গাছতলায়।কোন সমস্যা নাই।”
“ওকে আমি আসি।দেরী হয়ে যাচ্ছে”
“জি পুলক ভাই।বেস্ট অব লাক।কোন প্রবলেম হইলেই কল দিয়েন।”
পুলক ভাই বিদায় নেয়ার পর বাবলু তো হেসে খুন।“পুলক ভাই তো শেষ। পুলক ভাই তো শেষ।”
এর মাঝেই আমাদের আড্ডায় উপস্থিত হল @RAFI,@JULKERNAIN ও @NISHAT।আমরা সবাই বিনা টেবিল আলোচনায় বসলাম। আমাদের আলোচনার বিষয়, পুলক ভাইয়ের আগামী এক মাসের কর্মকান্ড। স্বঘোসিত মূল আলোচক আমি শুরু করলাম “আমাদের অতি প্রিয় ছড়াকার,মহাসতি পুলক আহচান অবশেষে প্রেমে পড়েছেন।বেচারা। যাই হোক,আমরা ধরে নিতে পারি আগামী কিছুদিন উনি আমাদের মাঝে থাকবেন না।একন উনার দিন শুরু হবে ভাবির ঝাড়ি শুনে।সকালে ভাবি ফোন করে জানতে চাইবে ‘এতো বেলা পরযন্ত কেউ ঘুমায়।জলদি চলে এসো।’ তারপর থেকে দৌড়ের উপর থাকবেন পুলক ভাই। তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করবেন ভাবীর জন্য।সন্ধ্যায় নাশতার টাকা বাচিয়ে মোবাইল ফোন রিচার্জ করবেন রাতে কথা বলার জন্য।আর রাতে অপেক্ষা করবেন কতক্ষনে ভাবীর মিসকল আসে।‘মিসকল পাওয়া মাত্রই কল করা বাধ্যতামুলক’ এই থিওরিতে পুলক ভাই কল করবেন।কল করে দিনের অবশিষ্ট ঝগড়াটুকু শেষ করে নিবেনাআর তাতে রাতও শেষ।”
এবার আলোচনার দ্বিতীয় বক্তা বাবলু বললো “মোবাইল ফোন রিচার্জ করতে করতে পুলক ভাই হাফ ফতুর।আর বাকিটা হবে এদিক ওদিক ঘোরাঘোরি,ভাবরি এই আবদার ওই আবদার মেটাতে,প্রতিমাসে নতুন নতুন শার্ট,অবশ্যই হকার মার্কেট থেকে আর কারনে অকারনে নানা গিফট কিনতে।এই অর্থ বরাদ্দ আসবে বাবর পকেট থেকে,দুইটা টিউশনের টাকা আর বন্ধুবান্ধবের থেকে নেয়া ধার থেকে।আমিতো পুলক বাইয়ের করুন ভবিষ্যত দেখছি। অদুর ভবিষ্যতে কোন বন্ধুকে দেখা মাত্রই পুলক ভাই বলবেন ‘আরে দোস্ত,তোকে আমি মনে মনে খুজতেছি।কিছু ধার দে তো।’
মেহেদী বললো “আগামীতে উনার যাবতীয় ছড়া হবে ভাবীকে নিয়ে”
নিশাত ধুপ করে বোম ফাটানো তথ্য দিলো “পুলক ভাই হিন্দি সিরিয়াল দেখাও শুরু করে দিতে পারেন।জুয়েল ভাইও ভাবীর চাপে একসময় নিয়মিত হিন্দি সিরিয়াল দেখতেন।”
জুয়েল তো রেগে আগুন “নিশাত ,কি কস এসব”
“সরি জুয়েল ভাই”
ঠিক সেই সময় আমার মোবাইল বেজে উঠলো।দেখি পুলক ভাইয়ের কল।
“হ্যালো পুলক ভাই,কোন সমস্যা”
“ওই ব্যাটা,বিশাল সমস্যা।আমার প্যান্ট জিপারের নিচের অংশে ছিড়ে গেছে।কি করি,তাড়াতাড়ি বল।”
“ভাই , ভাবী কই”
“ভাবীর কথা রাখ।আছে সে পাশেই।কি করি বল”
আমি লাউড স্পিকারে কথা বলছি।পাশে বাবলু,জুয়েল,রাফি,মেহেদী নিশাত সবাই হেসে খুন ।
“পুলক ভাই একটা লিস্ট মাথায রাখেন
১. কোন অবস্থাতেই বসা যাবেনা
২. অতি খুশি হওয়া যাবেনা।তাতে লাফিয়ে উঠতে পারেন।রাফ দিলেই সর্বনাশ।
৩. ড্রেন, নালা পার হওয়া যাবেনা।
৪. ভুলেও রিকশায় চড়া যাবেনা।
যাই হোক,প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে কিছুটা পার পেতে পারেন।”
“ওকে”
“পুলক ভাই, সবচেয়ে বড় কথা তো বলাই হয়নি।শার্ট ইন রাখা যাবেনা।কায়দা করে ইন খুলে ফেলেন।”
“দোয়া রাখিস তোরা।বাই” বলেই ফোন রেখে দিলেন ।
২
আমার কথামতো পুলক ভাই শার্টের ইন খুলেছিলেন।আর বিপত্তিটা বাধলো তখনি।ইন খোলা দেখে সোমা আপু মানে আমাদের ভাবী রেগে বললেন “পুলক ইন খুলেছো কেন?”
“এমনিতে,আসার সময় তানভীরদের সাথে দেখা।ওরা ইন নিয়ে হাসাহাসি করছিলো।”
“তুমি তখন খুলে এখন খুলছো। আর কতক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছি।চলো কোথাও বসি”
“চলো হাটিঁ”
“পুলক,চলো রিকশায় ঘুরি”
“এই তোমার জামা তো বেশ সুন্দর”
“কথা ঘোরাবে না। তোমরা সব ছেলেরা এক রকম”
“মানে কি,কয়টা ছেলেকে চেন তুমি?”
“কি বলতে চাও তুমি”
“আচ্ছা বাদ দাও।আজ চলো উঠি।কাল আবার দেখা করি”
“পুলক……………………………………………….” (ঝগড়া চলবে)
যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায়।হুট করে কোথা থেকে একটা রিকশাও এসে গেল।সেই রিকশা দেখে পুলক ভাইয়ের চোখ কপালে ওঠার অবস্থা।সোমা আপু চটজলদি উঠে পড়ল রিকশায়।বেশ কায়দা করে পুলক ভাইও চেপে বসলেন রিকশায়। ইতোমধ্যে পুলক ভাইয়ের জান যায় যায়।খারাপ সময়ের স্থায়িত্ব নাকি অনেক বেশি,তাই বলে এতো!
এবার উনাদের প্রথম বিদায় পর্ব। পুলক ভাইয়ের চোখে যখন রাজ্য হারানোর বেদনা তখন খেয়াল করলেন সোমা আপু মিটিমিটি হাসছে।
পুলক ভাই জিজ্ঞেস করলেন “ হাসছো যে”
“পুলক তোমার প্যান্ট ছিড়ে গেছে তা বললেই পারতা। হা হা হা হা হা”
এসব শুনে পুলক ভাইয়ের ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি অবস্থা ।