somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাগতম

২৩ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গভীর রাত। বাইরে অনেক বৃষ্টি। জেগে থাকতে থাকতে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। চা খেতে পারলে ভালো হত। রান্নাঘরে গিয়ে গরম পানি দিলাম চুলায়। হঠাত কেমন সরসর শব্দ পেলাম। ভাবলাম ইঁদুর হবে হয়ত। কালকেই ইঁদুর মারার বিষ কিনতে হবে। বিষ কী দিয়ে যেন বানায় সালফার না ফসফরাস। কোথায় যেন পড়েছিলাম, মনে আসছে না। চা পাতা খুঁজছি, পাচ্ছি না। এবার পেয়ে নেই এরপর থেকে সব গুছিয়ে রাখতে হবে। আবার পেলাম সেই সরসর শব্দ। মনে মনে গালি দিলাম ইঁদুরের বাচ্চা ইঁদুর। হঠাত মনে পড়ল গতকাল চা পাতা কিনেছিলাম, সেটা মনে হয় পড়ার টেবিলেই পড়ে আছে। পড়ার টেবিলের কাছে এসে দেখি সামনের খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টি এসে সব কিছু ভিজিয়ে দিয়েছে। মনে মনে নিজেকে গালি দিলাম গাধার বাচ্চা গাধা। জানালা বন্ধ করতেই আবার সেই সরসর শব্দ। হাতের কাছে ছিল ক্রিকেট ব্যাট। সেটা নিয়ে দৌড়ে গেলাম ইঁদুর মারতে। গিয়ে কিছুই পেলাম না। নিজের গাধামিতে নিজেই অবাক হলাম। চায়ের কথা মনে পড়ল। গিয়ে দেখি গরম পানি দেওয়া, চাপাতা দিতে হবে। ধুর চা পাতা আনতেই না গিয়েছিলাম। মনে মনে ঠিক করলাম এবার একটা একটা করে কাজ ধরব। যেটা ধরব সেটা না করে অন্য কাজ করব না। মনে পড়ল এই সিদ্ধান্ত এর আগে অনেক বার নিয়েছি, কোন লাভ হয় না। ধুর চিন্তা আবার অন্য দিকে চলে যাচ্ছে।চা পাতা আনতে গিয়ে আবার সরসর শব্দ পেলাম, না এবার আগে চা পাতা আনব তারপর অন্য চিন্তা।

নিজের রুমে এসে চা পাতা হাতে নিতেই দেখি বাইরের দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হচ্ছে। এত রাতে কারো আসার কথা না। আব্বু আম্মু গেছে সুনামগঞ্জ। এত রাতে আসার কোন সম্ভাবনা নেই। তাহলে? নাকি মনের ভুল। বিড়ালও হতে পারে। পাশের বাসার বিড়ালটা আজকাল বেশ ঝামেলা করে। বুকটা ধুক করে উঠল। একটু সময় নিলাম। কিন্তু আবার সেই ঠকঠক আওয়াজ। আরও সময় নেওয়ার দরকার। ঠকঠক শব্দটা থামছে না। প্রতিবার তিনটা করে আওয়াজ হয় ঠকঠকঠক, তারপর আবার কিছুক্ষণ স্তব্ধ তারপর আবার ঠকঠকঠক। আস্তে আস্তে গেটের কাছে গেলাম। হাতে সেই ব্যাটটা নিয়ে নিলাম, যদি কোন কাজে লাগে। দরজার কাছে আসতেই খুব ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম কে? ওপাশ থেকে বেশ ভরাট কন্ঠে আওয়াজ এল আমি, চিঠি নিয়ে এসেছি। আমি বেশ জোরে বললাম, এত রাতে চিঠি আনার মানে কী? ও পাশ থেকে উত্তর এল, এই চিঠি আজকের মধ্যে না দিলে আমার চাকরী থাকবে না, আমি অনেক কষ্ট করে এসেছি, চিঠিটা একটু নিন। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম দরজা খুলতে পারব না, নিচের ফাঁক দিয়ে চিঠি দিয়ে চলে যান। যেভাবে বললাম সেভাবেই কাজ হল কিন্তু কেন যেন মনে হতে লাগল লোকটা এখনও যায়নি, দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। দরজার ফুটো দিয়ে বাইরে দেখার চেষ্টা করলাম, কিছুই পেলাম না। যাক, বাঁচা গেল, চিঠিটা হাতে নিলাম, খাম দেখে খুব অবাক হলাম। একদম টকটকে লাল রঙের খাম। আরও অবাক হলাম প্রেরকের নাম দেখে। চিঠির প্রেরকের জায়গায় আমার নাম, প্রাপকের জায়গায়ও আমার নাম। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল হাতের লেখা একদম আমার মত তবে একটু কাঁপা কাঁপা।

কোন বন্ধু দুষ্টামি করেছে ভেবে নিলাম। ঠিক করলাম চা খেতে খেতে চিঠি পড়ব। চিঠিটা টেবিলের উপর রেখে আবার চা বানাতে গেলাম। মনে মনে চাপা উত্তেজনা কাজ করছে কার চিঠি হবে তা ভেবে। চা বানানো শেষ করে টেবিলের উপর থেকে হাতে নিলাম চিঠিটা। বারান্দায় গেলাম, অল্প অল্প বৃষ্টি আসছে, সুন্দর মায়াকাড়া বাতাস। চিঠিটা খুলতেই কয়েকটা গোলাপের পাপড়ি খসে পড়ল আমার হাতের উপর। কেমন একটা বেলী ফুলের গন্ধ আসতে থাকল। ভিতরে গোলাপের পাপড়ি কিন্তু গন্ধ আসছে বেলী ফুলের। কেমন অদ্ভুত লাগল ব্যাপারটা। চিঠি খুলতে আরও অবাক হলাম। ভিতরে ছাপার অক্ষরে লিখা আমাদের ভুবনে তোমায় স্বগতম। স্বাগতম বানান ভুল কেন। ভুলটা যে ইচ্ছাকৃত তা সহজেই বুঝা যাচ্ছে। বেলী ফুলের গন্ধ আসছে কোথা থেকে। বাইরে থেকে হুহু করে বাতাস আসছে, প্রচন্ড শীত লাগছে আমার। চায়ের কাপটা মুখে দিতে চাইলাম, পারলাম না, উল্টো হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেল তা। প্রচন্ড বাথরুম পেয়ে বসল। অবাক করা বিষয়, একটু আগেই বাথরুম করেছিলাম। দৌড়ে গেলাম বাথরুমে। প্যানে বসতেই বিশাল একটা ইঁদুর বেরিয়ে এল ভিতর থেকে, আমি লাফ দিয়ে উঠলাম, দৌড়ে চলে আসলাম এক কোণায়। ইঁদুরটা কী যেন খাচ্ছে, ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলাম ইঁদুরটা খুবলে খুবলে একটা মানুষের আঙ্গুল খাচ্ছে। পাশেই পড়ে আছে মানুষের একটা চোখ। ইঁদুরটা এক কামড় দিচ্ছে আঙ্গুলে আরেক কামড় দিচ্ছে মানুষটার চোখে। কেমন একটা অদ্ভুত ঘুম চলে আসছে আমার, বেলী ফুলের তীব্র গন্ধে গা কেমন গুলিয়ে উঠছে। খুব বাতাস বইতে লাগল, উথাল পাতাল বাতাস। লাইট নিভে গেল সবকটি। অন্ধকার, খুব অন্ধকার।

প্রচন্ড আলো, চোখ খুলতে পারছি না এমন। কে যেন বলে উঠল চোখ না খুলতে। বলে উঠল এ জগতে চোখ খোলার দরকার নেই, সব কিছু হবে অনভূতিতে। অনভূতিতে আমি দেখতে পেলাম তাকে যে ডেকে এনেছে আমাকে, একদম অবিকল আমার মত দেখতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×