somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায় চিনি!

২৩ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোট ছোট সাদা সাদা দানার মিষ্টি এক জিনিস হচ্ছে চিনি। এর ইংরেজি নাম সুগার। তবে বাংলায় চিনি শব্দটি একাধিক অর্থে ব্যবহার হয়। বিশেষ্য হিসেবে ‘চিনি’ বলতে বোঝায় ‘সুগার’; আবার ক্রিয়া হিসেবে ‘চিনি’ বলতে কাউকে চেনা (know)-বোঝায়। শিশু শিক্ষার্থীদের চিনি শব্দটি নিয়ে বিপত্তির মুখে পড়তে হয়। এক শিক্ষার্থী ‘আমি তাকে চিনি’ এই বাক্যটির ইংরেজি লিখতে গিয়ে লিখেছিল, ‘আই সুগার হিম!’
চিনি শব্দটির মানে নিয়েই যে কেবল বিপত্তি ঘটে তাই নয়, চিনি খাওয়া নিয়েও অনেক বিপত্তি দেখা দেয়। চিনির তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি দ্রব্য পছন্দ করেন না, এমন মানুষ বড় বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না; কিন্তু সবাই সব সময় সমানভাবে মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য খেতে পারেন না। অনেকের রক্তে সুগার বা চিনির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা আছে। তখন চিনি বা মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য তার জন্য বিষ বা হারাম হিসেবে বিবেচিত হয়। যারা রক্তে চিনি সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন তাদের আমরা ডায়াবেটিস রোগী হিসেবে চিহ্নিত করি। সাধারণভাবে বড়লোকদের মধ্যেই রক্তে এই ‘চিনি সমস্যা’ বেশি দেখা যায়। তাদের মন চাইলেও শরীর চিনিকে গ্রহণ করতে পারে না। অথচ যারা ভাতের মত কেজি কেজি চিনি খেতে পারে সেই গরিব মানুষের কপালে এক চিমটি চিনিও জুটছে না। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস!
বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবন চিনি ছাড়া চলে না। বাচ্চাদের খাদ্যের অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে চিনি। চা-কফিতে চিনি। সেমাই-সুজি-হালুয়ায় চিনি। আরও বিচিত্রসব আইটেম তৈরি করা হয় চিনি দিয়ে। বাদ্য ছাড়া গান আর চিনি ছাড়া খানা উভয়ই বাঙালির কাছে অপাঙ্ক্তেয়।
এই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান চিনি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক হাহাকার। রমজানকে উপলক্ষ্য করে ব্যবসায়ীরা চিনির দাম ইচ্ছেমত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি চিনির দাম ৬০ টাকা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া বর্তমানের এই গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে এটা ভাবা যায়? দিনবদলের কী নমুনারে রে বাবা!
দিনবদলের এই ধারাবাহিকতায় ঘরে ঘরে সৃষ্টি হয়েছে সঙ্কট। চিনির কথা বললেই গৃহিণীরা তেড়ে উঠছেন, নো চিনি! চিনি সংক্রান্ত কোন আলোচনা, দাবি-আবদার, এমনকি এ সংক্রান্ত গানও নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
একটু ভাবুক প্রকৃতির উদাস স্বভাবের কিশোর পুত্র মনের আনন্দে গান ধরেছে, আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী... এই গান শুনে উৎসাহ দেবার পরিবের্তে উল্টো মা গর্জে উঠছেন, বন্ধ কর এ গান, চিনি নিয়ে কোন কথা বলা যাবে না, নো চিনি এট অল। নেভার চিনি। পিঁপড়াও আর চিনি খুঁজে পাচ্ছে না। চিনির পাত্র পাখিহীন খাঁচার মতো অনাদরে পড়ে আছে। মধ্যবিত্ত ঘরের ছোট্ট শিশুকে দুধভর্তি ফিডার মুখে দিলে সে এক চুমুক দিয়েই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় শিশুর দুধেও চিনির পরিমাণ কমে গেছে। অভ্যস্ত শিশু এখন আর পানসে দুধ খেয়ে মজা পাচ্ছে না। ফলে তার কান্না ও অস্থিরতাও থামছে না।
মিষ্টি জাতের খাবার সেমাই, সুজি, হালুয়া তো দূরে থাক চা-কফিও হয়ে গেছে ‘সুগার ফ্রি’-ডায়াবেটিস রোগীর খাবার। চায়ে যতটা কম পারা যায় চিনি দেয়া হচ্ছে। ঘরে চায়ে চিনির পরিমাণ নিয়ে ঝগড়া-কলহ তো হচ্ছেই, দোকানে পর্যন্ত চা-বিক্রেতাদের সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। চিনি কম দিয়ে, পারলে না দিয়ে কীভাবে চা বানানো যায় ঘরে ঘরে এবং দোকানে দোকানে এখন চলছে সেই কসরৎ। যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা পড়েছেন মহাফাঁপরে। সুস্থ মিষ্টিপ্রিয় মানুষের পক্ষে রোগীর পথ্য আর কাহাতক সহ্য হয়!
চিনির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সর্বত্র, সবখানে। মিষ্টি এখন উচ্চবিত্তের শৌখিন খাবার (যদিও তারা ডায়াবিটিসের ভয়ে তা খেতে পারেন না)! আনন্দ আর খুশির খবরেও এখন আর মিষ্টির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না, মিষ্টিমুখ করা হচ্ছে না। যাদের হাতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আছে, এখন তারাই কেবল মিষ্টির স্বাদ উপভোগ করছেন। দুশ’, আড়াইশ’, আবার কোন কোন মিষ্টি তিনশ’ টাকা কেজি। মিষ্টি খাওয়ার বায়না ধরলে শিশুর কপালে জুটছে মার। মিষ্টির স্বাদবঞ্চিত গৃহিণীরা সারাক্ষণ তিরিক্ষে মেজাজে থাকছেন। এর ঝাপটা এসে লাগছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে। চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় মিষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি কথাও হারিয়ে যাচ্ছে। সবাই কেমন যেন তিতা তিতা কথা বলছেন। বিরোধী দলের নেতাদের মুখে, সংসদে তার আলামত দেখা যাচ্ছে। পান থেকে চুন খসলেই মেজাজ, রাগারাগি ও বাড়াবাড়ি। পুরো দেশটাই যেন কুরুক্ষেত্রে পরিণত হতে চলেছে। ঘরে কুরুক্ষেত্র তো আগেই ছিল, এখন বাইরেও তা শুরু হয়েছে।
চিনির দাম বাড়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপে ব্যর্থ হয়ে সরকার ক্রমেই গালাগালের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এই চিনি শেষ পর্যন্ত সরকারকে, সর্বোপরি দেশকে কোথায় নিয়ে যায়, আরও কত বিপত্তি ঘটায় কে জানে!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×