somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমরা যারা সদ্য ডাক্তারি পাশ করেছো

১৯ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তোমরা যারা সদ্য ডাক্তারি পাশ করেছো তারা আমার প্রায় দশ বছর জুনিয়র। দশ বছর আগে জন্মানোর অধিকারটুকু নিয়ে আমি তোমাদেরকে ‘তুমি’ করেই লিখছি। জীবনের এই প্রান্তে এসে তোমরা এখন ভাবছো, ছাত্র জীবনে তো বেশ ভালোই ছিলে; কোন ভাবনা ছিলো না, জীবন-জীবিকা নিয়ে ভাবতে হয় নি। কিন্তু এখন নানান ভাবনা তোমাদের মাঝে দানা বাঁধছে। সামনে কী করবে, কীভাবে করবে, ক্যামন করে এগুলে ভালো হবে— এইসব নানান ভাবনা তোমাদের মাথার মধ্যে গিজগিজ করছে। দেশে থাকবে নাকি দেশের বাইরে চলে যাবে, বিয়ে-শাদি কখন করবে, জীবন সঙ্গী কী ডাক্তার হবে নাকি অন্য পেশার হবে এই ভাবনাগুলো তোমাদের মনে আঁতিপাঁতি করছে। কোন ধরণের চাকুরি নিলে ভালো হয়, ঢাকার ক্লিনিক নাকি পেরিফেরির ক্লিনিক, এনজিও চাকরি নাকি মেডিসিন কোম্পানির ম্যানেজারিয়াল চাকরি, কোন বিষয়ে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন করবে, সরকারি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি...
ভাবছো, ডাক্তারি পড়ে ভুল করে ফেলছো কিনা? যেখানে তোমার অন্য অডাক্তার বন্ধুগণ চাকুরি-বাকুরি শুরু করে কর্ম জীবন শুরু করে দিয়েছে সেখানে তোমাকে চাকরি-বাকরির পাশাপাশি ক্যারিয়ার করার জন্য আরও বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। এ ব্যাপারে মনে রাখবে, মানুষের সম্ভাবনা ক্রমশ সংকুচিত হয়। জন্মের পর তোমার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, দারোয়ান কিংবা উকিল হবার সমান সম্ভাবনা ছিল। এখন শুধুমাত্র ডাক্তারি ছাড়া আর অন্য কিছু করা অসম্ভব তোমার জন্যে। তাই সুখী হতে হলে বর্তমানকেই বেশি ভালোবাসতে হবে। ‘কী হলে কী হতে পারতে’ এটা ভাবা বিরাট বোকামি। এই পথে যখন চলেই এসেছো, তবে এই যুদ্ধটা শেষ করেই তবে থামো।
প্রথমে চিন্তা করো, দেশে থাকবে কিনা? যদি না থাকতে চাও, তবে কোথায় যাবে আগেই চিন্তা করে নাও। জীবনের প্রথমে টাকা কামানোর জন্য মধ্যপ্রাচ্য ভালো হবে। কিছু টাকা কামিয়ে উন্নত দেশগুলোর রেজিষ্ট্রেশন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার পর সেখানে মাইগ্রেট করতে পারো। এ ব্যাপারে বর্তমানে ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারো। উল্লেখ্য যে, রয়েল কলেজ অব লন্ডনের এমআরসিপি, এমআরসিএস ইত্যাদি পরীক্ষার কেন্দ্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রয়েছে। সে ভাবেও ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে পারো। শুরুতে উন্নত দেশগুলোতেও চলে যেতে পারো। কম্পিউটার বেজড রেজিষ্ট্রেশন পরীক্ষা অনেকগুলোই বাংলাদেশের প্রোমেট্রিক সেন্টারগুলোতে হয়। গুগোল এ যেয়ে একটা সার্চ দিলেই নিয়ম-কানুন সব পেয়ে যাবে। এছাড়া মালয়েশিয়াও ভালো বিকল্প হতে পারে। সেখানে মাঝে মাঝে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ডাক্তার নিয়ে থাকে। ইন্টারনেট লাইনসহ মোবাইল ইউজ করো, চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।
আর তোমার যদি ‘মরি-বাঁচি দেশেই থাকবো’ এই অবস্থা হয় তবে আমি তোমাকে সাধুবাদ জানাবো। এই শীতলক্ষ্যা-মেঘনা-কর্ণফুলি-তিতাসের ঘ্রাণ, অসহায় মানুষের ভালোবাসা তোমাকে অন্য রকম কিছু অনুভূতি দেবে যা তুমি স্বর্গেও পাবেনা। জানি, এখানে সমস্যা অনেক, তবুও এ তোমার দেশ, তোমার পুণ্যভূমি। তোমার ইচ্ছার জন্য তোমাকে স্যালুট জানাই।
এবার কাজের কথায় আসি। প্রথমেই ঠিক করে নাও কোন বিষয়ে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন করবে। ক্লিনিক্যাল না বেসিক সাবজেক্টে? মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি না পেডিয়াট্রিক্সে? নানা জন তোমাকে নানান কথা বলবে। তোমার সিদ্ধান্ত তোমাকেই নিতে হবে। ইনার থার্স্ট, মেরিট ও স্ট্যামিনা অ্যাসেসমেন্ট করে সিদ্ধান্ত নিও। বিগত এমবিবিএস লাইফে তোমার যে বিষয়টি ভালো লেগেছে সে বিষয় নিয়েই এগিয়ে যেতে পারো। বেসিক সাবজেক্টে পড়াও বুদ্ধিমানের কাজ। এখানে মেধাবীরা আসলে খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে। এই স্টেজে তোমাকে পার্ট-টাইম জব করতে হবে, যদি বিসিএস দাও ( আমি সরকারি চাকরিকেই উত্তম মনে করি) তার প্রিপারেশনও নিতে হবে এবং তোমার প্রিয় সাবজেক্টে পার্ট-১/ ভর্তি পরীক্ষা পাশের জন্য পড়তে হবে। যতো দ্রুত পাশ করবে ততোই মঙ্গল। তারপর খুব দ্রুত বিষয়ের প্রয়োজন মতো ট্রেনিং শুরু করে দিতে হবে। পাশাপাশি খরচ চালানোর জন্য পার্ট-টাইম জব করতে হবে কিংবা জিপিও করতে পারো। এই স্টেজে কিছু হাতের কাজ যেমন, আলট্রাসনোগ্রাম, ছোট-খাটো সার্জারি, ইন্ট্রা-আর্টিকুলার ইনজেকশন ইত্যাদি শিখে নিতে পারো যা তোমাকে প্র্যাকটিসে হেলপ করবে।
বিসিএস এ নির্বাচিত হয়ে গেলে কিংবা ট্রেনিং মাঝামাঝি চলে আসলে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে পারো। দেরিতে বিয়ে করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। একই পেশাতে বিয়ে করাই সর্বোত্তম। তাহলে দুজন মিলে ক্যারিয়ারের পাশাপাশি কিছু একটা করে চলতে পারবে। তবে বিবাহের ক্ষেত্রে সামাজিক মর্যাদার মিল ও মানসিক মিল অতীব গুরুত্ত্বপূর্ণ। আবেগের বশে হুট করে বিয়ে করা কিংবা ক্যারিয়ার নির্বাচন করা অনুচিত। এতে পরে পস্তানোর সম্ভাবনাই বেশি থাকে।
তোমার যদি সরকারি চাকরি হয়ে যায় তবে প্রথমবারের মতো তোমাকে সব ছেড়ে বহু দূরে চলে যেতে হবে। কোন একটি উপজেলায় তোমার প্রথম পদায়ন হবে। খুব একাকী হয়ে যাবে তুমি। যে জগতের সাথে তুমি পরিচিত তা থেকে এ জগত সম্পূর্ণ আলাদা। এ বিষয়টাকে চাইলে এনজয়ও করা যায়, মানুষের প্রত্যক্ষ সেবা করার সুযোগ পেলে। নানান ধরণের মানুষের সাথে মিশতে হবে তোমাকে। তুমি তখন প্র্যাকটিস করে কিছু টাকা জমাতে পারো। টাকার নেশায় তোমার ক্যারিয়ার ভুলে যেও না। তাহলে পরে ভোগতে হবে। চেষ্টা করবে তোমার বিষয়ে যেখানে ট্রেনিং কাউন্ট হয় সেখানে পোষ্টিং নিতে। ডিজি অফিসে কোথায় যেতে হবে, কাকে ধরতে হবে খুব দ্রুতই তোমাকে জেনে নিতে হবে। অটোমেটিক কিছুই সরকারি চাকুরিতে হয় না। তোমারটা তোমাকেই আদায় করে নিতে হবে। এই চেষ্টা-তদবিরের ব্যাপারটি বিরক্তিকর। কিন্তু তোমার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে এই বিরক্তিকর কাজটি বিনা বাক্যে গলাধঃকরণ করতে হবে। মন খারাপ করে হুট করে চাকরিটা ছেড়ে দিও না। পরে আক্ষেপ জন্মাতে পারে। তবে বুঝে-শুনে ছাড়লে সে আলাদা কথা! আসলে পৃথিবীতে 'প্রকৃত সুখের চাকরি' কোথাও নেই—এটাই বাস্তবতা।
প্রয়োজনীয় ট্রেনিং শেষ হলে খুব দ্রুতই কোর্সে চলে আসবে। লম্বা কোর্সগুলো এ ক্ষেত্রে ভালো। এখানে লম্বা সময় ডেপুটেশনে থেকে ফেলোশিপ/মেম্বারশিপ পরীক্ষাগুলো দিতে পারবে। হাতে কিছু টাকা থাকলে এমআরসিপি/এমআরসিএস ইত্যাদি পরীক্ষাগুলোও দিতে পারো। আদতে লস হবে না।
এ দেশের প্রতিটা পদে পদে নানা অনিয়ম আছে। তা তুমি একা ভাঙ্গতে পারবে না। এই সিস্টেমে থেকেই তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে। তারপর তুমিই প্রথম অনিয়ম ভাঙ্গার সবল কন্ঠ হয়ো। পূর্ববর্তী প্রজন্মকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তাঁরা শুরু করে দিয়ে গেছেন, তোমরা সেটা গ্রহণ করবে। তারপর যেই জিনিসটা তোমাকে পীড়া দিয়েছিলো সেই জিনিসটাকে ভাঙ্গার সাধ্যমত চেষ্টা করবে।
তোমার দৃষ্টি হবে প্রগতির পথে, দেশের অগ্রগতির পথে। এই সত্তর বছর গড় আয়ুর জীবনে খুব বেশি লাভ করার মতো কিছু নেই। দেশের জন্য, অগ্রগতির জন্য, তোমার পরিবারের জন্য যতোটুকু করতে পারবে সেটাই তোমার আসল করা। বাকি সব কিছু ফেক, বাকি সব কিছু ফাউল। কয়েক প্রজন্ম শিক্ষার মধ্য দিয়ে গেলেই একটি জাতি জাতে উঠতে পারে। মনে রাখবে, এই দলান্ধতা, মতান্ধতা ও ধর্মান্ধতায় বেশি কিছু অর্জন নেই। সহজ আবেগ, মেধা ও সঠিক পরিকল্পনাই তোমার আসল সম্পদ।
তুমি এগিয়ে যাও, হে আগামির সৈনিক!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:০১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×