somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারীর সুহৃদ ইসলাম

১৯ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আফিফা মারজানা


বয়স তখন ১১ থেকে১২ এর মাঝামাঝি। কোনো এক সকালে আববু পরিয়ে দিলেন বোরকা। একটু লজ্জা, একটু ভয়, একটু বিব্রত ভাব আর অনেক ভালোলাগা। বড় হয়ে গেছি-এমন একটা অনুভব। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় এক যুগ ধরে বোরকা আমার সঙ্গী। পর্দা আমার গৌরব ও অহঙ্কার। আর এ গৌরব আমাকে আমার স্রষ্টা দান করেছেন।

প্রগতিশীলদের (!) ভাষায় অতিরক্ষণশীল কিংবা গোঁড়াধার্মিক আগাগোড়া আলেম পরিবারে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। খুব ছোটবেলাতেই আমাদের ধ্যান-জ্ঞানে আত্মস্থ হয়ে যায়, আমি মুসলিম-এই আপ্তবাক্য। আমাদের ছেলেরা এমনিতেই বুঝে যায় ১২ বছর হয়ে গেছে, চাচি-মামি কিংবা ‘তো’ বোনদের সামনে যাওয়া যাবে না। তেমনি করে মেয়েরাও ধর্মীয় গ্রন্থ অধ্যয়ন ছাড়াই ১৪ প্রকার পুরুষকে চিনে ফেলে।

একটি বিধিবদ্ধ ইসলামী পরিবারের ভেতরের দৃশ্য কল্পনা করুন। একজন মুহাদ্দিস, মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল কিংবা পীর সাহেব যখন দিনের ব্যস্ততা শেষে ঘরে ফেরেন তখন তাদের পদ-পদবি ঘরের বাইরে রেখে ঘরে আসেন। নিজের ঘরে তিনি একজন দায়িত্বশীল স্বামী, স্নেহপরায়ণ পিতা, কর্তব্যপালনকারী ভাই কিংবা বাবা-মায়ের অনুগত সন্তান। ঘরে এসে তিনি ঘরের একজন। তাই ঘরের কাজকে তারা নিজের কাজই মনে করেন।

দেশের শীর্ষ ইসলামী প্রকাশনীর এক কোটিপতি মালিককে নিয়মিত ঘর ঝাড়ু দিতে দেখে, একজন বিখ্যাত পীরকে ঘরের মশারি টাঙাতে দেখে অবাক হইনি। কারণ একজন ইসলামমান্য স্বামী বা বাবার কাজ তো এমনই হবার কথা। মেয়েদের তারা যত কম ঝামেলা আর যত বেশি স্বস্তি দিতে পারেন, সেই চেষ্টাই করেন।

আমার বাবা ঘর মোছা থেকে মাছকাটা, কাপড় ধোয়াসহ ছোট-বড় সব কাজে হাসিমুখে মাকে সাহায্য করেন। আমার বাচ্চাদের বাবাও।

তারপরও এদেশের আলেমসমাজ নারী নির্যাতনকারী! নারীর ক্ষমতায়নের বিরোধী! আলেমরা নারীকে ঘরের বাইরে বের হতে দেন না! বোরকায় আবদ্ধ করে রাখেন! তথাকথিত প্রগতিশীলরা তাঁদের গোঁড়া, ধর্মান্ধ, মৌলবাদী আখ্যা দিয়ে সুখ পান। তারা আসলে কী বলতে চান? আলেমসমাজ যৌতুক নেন না, দেন না। এটা তাদের অপরাধ? স্ত্রীকে মাকে বোনকে এই অসুস্থ সমাজের গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসাতে দিয়ে, হাজারো পুরুষের সঙ্গে রোজগারের যুদ্ধে না পাঠিয়ে, নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রক্ত পানি করে হালাল রিজিক তুলে দেন পরিবারের মুখে-এটা নিশ্চয়ই অনেক বড় অপরাধ! যে সকল নারী বাধ্য হয়ে রোজগার করতে বাইরে বের হন তাদের জন্য আলাদা নিরাপদ কর্মক্ষেত্র চাওয়াটাই কি নারীর ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ!

এই যে প্রতি বছর সারাবিশ্বে খেলার আসরগুলো অনুষ্ঠিত হয়-অলিম্পিক, ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস; এতে মেয়েদের ইভেন্টগুলো আলাদা হয় কেন? কেন সমান যোগ্যতার ভিত্তিতে নারী-পুরুষ এক টিমে নেয়া হয় না? কারণ নারীর মানসিক ও শারীরিক গঠনে পুরুষের সঙ্গে অনেক ফারাক। শারীরিক কাঠামোয় ভিন্ন ও শক্তিতে অকর্মঠ নারীকে পুরুষের সঙ্গে খেলার টিমে নেয়া হয় না অথচ সমান পরিশ্রম করে রোজগার করতে বাধ্য করাটা কি নির্যাতন না? এটা আলেমরা বললেই কেন তাদের নারীবিদ্বেষী বলা হবে?

পুরুষের অশ্লীল দৃষ্টি থেকে নিরাপদে থাকার জন্য মুসলিম নারী হিজাব ও বোরকায় শরীর ও মুখ ঢাকলে উদ্ভট ও কিম্ভুতকিমাকার বলে উপহাস করা হয়। তুষারপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ওভার কোট ও মাঙ্কি ক্যাপ পরলে তো তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না! তারা যেমন ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য এগুলো পরেন, তেমনি একজন সুশীল নারী নিজের আপাদমস্তক একজন লোলুপদৃষ্টির পুরুষের চোখ থেকে আড়াল করার জন্য ও আল্লাহর হুকুম পালনার্থে বোরকা পরেন। এ কারণে তাকে হেয় করা হবে কেন? তেমনি করে বাইকচালকের হেলমেটে সমস্যা নেই। ধুলোবালি থেকে বাঁচার জন্য মাস্কে সমস্যা নেই। এসবই তো করা হয় নিজেকে সেভ করার জন্য। তাহলে একজন নারী পরপুরুষের কুদৃষ্টি থেকে, ইভটিজিং থেকে বাঁচতে নেকাবে মুখ ঢাকলে কেন তাকে অসভ্য বলা হবে? নেকাবে চোখ ঢাকলে অস্বস্তি আর রোদচশমায় ঢাকলে ফ্যাশন! ফ্যাশনদুরস্ত মেয়েরা স্কিনটাইট মোজা পরলে হয়ে যান মডার্ন, আর একজন মুসলিম রমণী হাতমোজা পরলেই ব্যাকডেটেড!

বুঝতে পারি না, জাগতিক এই দেহটাকে রোদ, শীত, ধুলো, জীবাণু থেকে বাঁচাবার জন্য এইসব প্রশংসনীয় হলে পরজগতে এই দেহটাকে আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে পর্দার প্রতি তাদের এত আপত্তি কেন?

পর্দা যেমন এই অসুস্থ সমাজকে অনেকাংশে রক্ষা করতে পারে, তেমনি ইভটিজিং, ধর্ষণ ও ব্যভিচারের মতো কুৎসিত ও জঘন্য সব অপরাধ থেকেও মুক্তি দিতে পারে। তবু যখন প্রগতিবাদীরা হিজাবে আঁতকে ওঠেন তখন ভাবতেই পারি, সমাজের এই অসুস্থতা ও অস্থিরতার জন্য তারাই দায়ী।

বর্তমান প্রচারমাধ্যমগুলোতে চোখ রাখলেই এর প্রমাণ মিলে অহরহ। সমস্ত পণ্যের বিজ্ঞাপনে মূল উপজীব্য বিষয় অর্ধোলঙ্গ নারীদেহ! রাস্তাঘাটে, স্কুল-কলেজে মেয়েদের রুচিহীন উদ্ভট পোশাক দেখলে তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ জাগে। এমন করে দিনরাত নারী স্বাধীনতা ও নারীর ক্ষমতায়নের নামে নারীকে নানাভাবে ভোগ ও উপভোগ করে চলেছেন একশ্রেণীর কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা। নারীর প্রকৃত মুক্তিদাতা ইসলাম তাদের কাছে বিষের মতোই মনে হবে।

নারীকে যারা সম্মান করেন, যারা বুঝতে পারেন নারীর প্রকৃত কষ্ট-যাতনা, তাদের প্রকৃত অধিকার ও পাওনা বুঝিয়ে দেন; সেই আলেমসমাজ ভোগবাদীদের শত্রু হবেন এটাই তো স্বাভাবিক। ষ

সৌজন্যে : সাপ্তাহিক লিখনী (৩০/৪/২০১৩)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×