somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশীরা

২২ শে জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে মনটা অনেক খারাপ লাগছে। মনে অনেক দুঃখ লাগছে। কারন যদি কেউ জিজ্ঞেস করে তাহলে উত্তরটা কঠিন হলেও বলতে হবে, আর উত্তরটা হচ্ছে আমি বাংলাদেশী তাই। বিদেশের মাটি বলতে চায়নার মাটিতে ৫ বছরের উপর আছি পড়ালেখার জন্য। জীবনের প্রথম বিদেশ যাত্রা হচ্ছে এই চায়নাতে আসা। প্রথম অভিজ্ঞতা বলতে কিছুই বুঝতে পারি নাই। কিন্তু যখন বুঝতে পারছি তখন অনেক খারাপ লাগছে। এখানে বাংলাদেশী বললে আমাদেরকে অনেক অবজ্ঞার চোখে দেখে। এক চামড়ার রং হচ্ছে বাদামী তারপর আবার বাংলাদেশী। বাংলাদেশ অনেক ছোট দেশ এবং গরীব তাই অবজ্ঞাটাই আমাদের প্রাপ‌্য। আমাদেরকে চায়নীজরা কখনও ইন্ডিয়ান বলে অথবা পাকিস্তানী এবং আমাদের অনেকে আছেন বাংলাদেশী পরিচয় দেন না, পরিচয় দেয় অন্য দেশী হিসেবে। যাই হোক আজকের ঘটানাটা বলি, আমরা আমাদের হসপিটালের ইন্টার্নশীপ এর জন্য চায়নার শীনহুই শহরের শীনহুই পাবলিক হসপিটালে এসেছি। এখানে আমাদের সাথে ইন্ডিয়ান ছাত্রছাত্রীও আছে। আজকে তিনজন ইন্ডিয়ান এবং আমি একলা একজন বাংলাদেশী আলাপ চলাকালে হঠাৎ কথা উঠে যে বাংলাদেশীদেরকে কে জানে, কেউ জানে না। অন্য দেশের মানুষ বাংলাদেশীদের ইন্ডিয়ান হিসেবেই চিনে। যথারীতি আমি একটু সিধা উত্তর দেওয়ার মত মানুষ, তাই বললাম যে না চায়নীজদের সাথে আমি কথা বলেছি এবং তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানে। তারা আমার ঘোর বিরোধীতা শুরু করল। তারপর আমি বললাম যে চায়নীজরা বাংলাদেশের নদী সম্পর্কে জানে। তারা হাসতে শুরু করল। আমি বললাম চায়নীজরা ইন্ডিয়ার গঙ্গা নদী সম্পর্কে জানে এবং গঙ্গা থেকে বাংলাদেশে যে যে নদী পথ হয়েছে তারা তার সম্পর্কে জানে । তারা মানতে রাজি হচ্ছিল না। তাদের কথা শুনলে মনে হবে যে বাংলদেশের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই। বাংলাদেশ মানেই ভারত এর একটি অংশ। এই ঘটনা আজকে হয়েছে তা নয় এই ঘটনা প্রায় সময় হয়ে থাকে। ভারতীয়দের মনে বাংলাদেশীদের সম্পর্কে এমন মনোভাব সবসময় থাকে। কিন্তু যদি আজকে দুই জন বাংলাদেশী আর তিনজন ভারতীয়দের মাঝে কথা হতো তবে দেখা যেত যে ভারত বা ভারতের সার্বভৌমত্বের সম্পর্কে কিছুই বলা যায় না। এর কারন ভারতীয়রা নয়, এর কারন বাংলাদেশীরা । অনেক সময় দেখা যায় বাংলাদেশীরাই বাংলাদেশ নিয়ে এই ধরনের কথায় সাই দেয় ভারতীয়দের সাথে।
বাংলাদেশী আমরা যারা থাকি আমাদের অনেকেই তার পরিচয় গোপন করে রাখে শুধু বাংলাদেশী বলে। চায়নীজরা আমাদের সাথে অনেক বৈষম্যমূলক আচরন করে। তাদের প্রশ্ন তোমার দেশ তো আমাদের একটা প্রদেশের সমান না। তোমাদের দেশের মানুষ ত না খেয়ে মারা যায়। বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীরা চায়নাতে আসলে তাদের ব্যাবসার প্রতি চায়নীজরা কোনো আগ্রহ দেখায় না, আমাদের বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীরাও চায়নীজদের সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক রাখতে পারে নাই। এর কারন বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীরা সরাসরি বলে আমাদেরকে যত পারো সস্তা জিনিস দেও, মান ভালো হওয়ার দরকার নেই। তাহলে আর সেখানে বাংলাদেশীদের ভালো বলে কিভাবে। আমি দেখেছি চায়নীজরা খারাপ মানের জিনিস বানাতে না চাইলেও আমাদের দেশের ব্যাবসায়ীরা জোর করে যাতে খারাপ মানের সস্তা জিনিস তৈরি করে। আজকে চায়নাতে যত ব্যাবসায়িক জায়গা আছে সেখানে বাংলাদেশীদেরকে খুব ভালো চোখে দেখে না।
যদিও আমি চেষ্টা করি আমার দেশের ভালো বলতে, যেমন আমাদের দেশে পৃথিবীর সবচেয়ে সমুদ্র সৈকত আছে, আমাদের দেশে মানুষ নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে (যদিও চায়নাতে নোবেল পুরষ্কার নিয়ে কোনো মাতামাতি হয় না), আমাদের দেশে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ আছে এবং আরো যত ভালো জিনিস আছে সব তুলে ধরার চেষ্টা করি কোনো লাভ হয় না। আমার দেশ ছোট এবং আমার দেশ অনুন্নত্।
আমার রুমমেট কুয়েতি কিন্তু পাকিস্তানি অরিজিন। যখন কোনো আন্তর্জাতিক অথবা কুটনৈতিক ধরনের কথা উঠে তখন বাংলাদেশের কথা আসলেই সেটা অবজ্ঞার বিষয়বস্তুতে পরিনত করে।
চায়নাতে এখন বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা পাওয়াটা স্বর্ণের খনি পাওয়ার মতো। আগে যারা পেয়ে গেছে তাদের কথা আলাদা। এখন বাংলাদেশীদের জন্য ভিসার বাধ্যবাধকতা অনেক বেশী।
মালোয়শিয়াতে গিয়েছিলাম সেখানে যা শুনলাম তাতে আমার বিস্ময় চোখে মুখে আতংক ধরে গিয়েছিল। হয়তোবা বর্ণনাকারি একটু বেশিই বলেছে কিন্তু কথা মোটেও মিথ্যা নয়। পুলিশ নাকি বাংলাদেশীদের দেখলেই ধরে এবং তাদেরকে বিনা কারনে ধরে নিয়ে যায়। এবং জেলে তাদেরকে প্রচুর মারধর করে।
হয়তোবা অনেকে বলবেন যে বাংলাদেশীদের স্বভাবদোষে কিন্তু এর থেকেও খারাপ আচরনকারী বা স্বভাবদোষী জাতি আছে কিন্তু তাদেরকে অন্য চোখে দেখা হয়। আমি চিন্তা করি যে দেশ ছোট হলে কি মানুষ আর মানুষ থাকে না অথবা দেশ গরীব হলে মানুষের কোনো দাম থাকে না। সত্যিই দুনিয়াটা বাস্তবেই বৈষম্যের স্থান।
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×