somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমু আছে! এইতো হিমু

২২ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাথার উপর বিশাল একটা সুর্য নিয়ে মধ্যদুপুরে হেটে চলেছি, গন্তব্য ঠিক নেই। কাকরাইল মোড় থেকে মালিবাগ যাওয়া যায় কি? না ওই দিকটায় এখন জ্যাম, তারচেয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়া যাক। মাথার উপর প্রচন্ড রোদ নিয়ে হেটে চলেছি। রমনা পার্কের পাশ দিয়ে হেটে চলেছি। এটা ভিআইপি রোড তাই গাড়িঘোড়া কম। হেটে চলেছি মাথার উপর পিচগলা রোদ, সুর্য তার সমস্ত তেজ ঢেলে দিচ্ছে। রমনা পার্কের গেটের কাছে আসতেই এক মধ্যবয়সী লোক আমার সামনে এসে দাড়ায়। গায়ে সাদা কাপড় জড়ানো। অদ্ভুদ ভাবে আমাকে নজরদারী করছে লোকটা। দ্বিধাদ্বন্দের মাঝে হয়তো লোকটা কিছু ভাবছে। আমি সামনের দিকে হাটতে শুরু করতেই লোকটি আমার সামনে এসে দাড়ায়। আমি কিছু বলার আগেই তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন
'ছোকরা তুমি কে?'
'হিমু, হিমালয়'
'পাগলের মত কথা বলছো কেন'
'জগতে সবাই পাগল, আপনিও একজন পাগল, আমিও পাগল, আপনি হয়তো একটু কম আর আমি হয়তো একটু বেশী। আর মানুষের মধ্যে পাগলামী কিছুটা থাকবেই এটা দোষের কিছু না'
চায়ের প্রচন্ড তৃষ্ণা পেয়েছে। আমি ফুটপাতের একটা চায়ের দোকানের দিকে এগিয়ে যেতেই তিনি আমার কাছ ঘেষে এসে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন
'হিমু বেঁচে নেই, তুমি হিমু নও'
তার অদ্ভুদ কথা শুনে বিস্মিত হলেও আমি সেটা চেপে গেলাম। এই লোকটির সামনে বিস্ময় প্রকাশ করা ঠিক হবে। আমার বাবা এই ব্যাপারে একটা বলেছেন 'হিমালয় বাবা জগতটা বড়ই রহস্যময়, চোখের সামনে অনেক রহস্যময়, বিস্ময়কর বস্তুর সন্ধান পাইবে কিন্তু তা প্রকাশ করিবে না।' আমি বিস্মিত না হবার ভান করে হাটতে থাকি। পেছন থেকে তার কয়েকটি কথা আমার কানে এসে লাগে। 'হিমু চলে যাও, চলে যাও।' আমি দ্রুত ফুটপাত ঘেষে গজিয়ে ওঠা চায়ের দোকানের সামনে এসে দাড়াই।
চায়ের দোকানদার সোলেমান বলে ওঠে
'আরে হিমু ভাই যে, অনেকদিন পর আসলেন, বসেন বসেন' সোলেমান কাজের ছেলেটাকে হাক মারে
'এই হিমু ভাইজান আসছেন, ভালো কইরা এক কাপ চা দে'
আমি নড়বড়ে চায়ের দোকানের বেঞ্চটায় বসি। কানে বারবার একটা কথা বেজেই চলেছে 'হিমু চলে যাও চলে যাও' আশ্চর্য আমি কোথায় যাবো?
'হিমু ভাইজানের শরীর কি খারাপ? ভাইজান সেই যে আপনি গেলেন আর আপনের দেখা নাই, আপনারে লোক পাঠাইয়াও খুঁজছি, আমার মাইয়াডার অসুখ তো সাইরা গেছে'
'অসুখ হয়েছিলো, সেটা সেরে যাবে'
'না ভাইজান, আপনি বলছেন তাই সারছে, কত কবিরাজে ডাক্তারে দ্যাখছে, কেউ চিকিত্‍সা দিতে পারে নাই'
এইসব কাকতালীয় ব্যাপারে আমি অভ্যস্ত। সোলেমানের কাজের ছেলে পরিস্কাল গেলাসে চা দেয়। চায়ে চুমুক দিয়ে বড়ই তৃপ্তি পেলাম। চা খেয়ে চলে আসতেই সোলেমান জোর করে তার বাসায় খেতে বলে। আমি আর একদিন খাওয়ার কথা বলে চলে আসি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাবো কিনা ভাবছি। মাথার ভেতর ওই একটি কথাই ঘুরঘুর করছে। না এইসব চিন্তাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবেনা। পার্থিব মায়ার উর্ধ্বে থাকতে হয় হিমুদের। কথার মায়ায় আটকে গেলে চলবে না। হিমুরা কখনোই প্রস্হান করে না। এটাই নিয়ম। করার কিছু নেই। করার কিছু নেই। আমি হেটে চলেছি ভিআইপি রোড ধরে। বিকেলে বাদলদের বাসায় যেতে হবে, কয়েকদিন ধরে মেসে এসে খোঁজ করে যাচ্ছে ছেলেটা। মাজেদা খালার বাসায়ও ঢুঁ মারতে হবে একবার কিছু টাকা দরকার। বিসমিল্লাহ হোটেলে বেশকিছু বাকি পড়েছে। হাঁটতে প্রেসক্লাবের দিকে চলে এসেছি। ফুটপাত দিয়ে একটি সুশ্রী তরুনী হেটে যাচ্ছে। আরে ওটা রূপা না, হ্যাঁ তাইতো। মাথায় স্কার্ফ দিয়েছে নিশ্চই রৌদ্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে। আরো সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়েছে ওর মুখে। আমি উল্টাপথ হাঁটা ধরলাম। মাথায় সেই একই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। না, তারচেয়ে বুড়িগঙ্গার দিকে যাই, চলন্ত একটি লোকাল বাসে লাফ মেরে উঠে পড়ি।

পরিশিষ্ট: হিমুদের মৃত্যু নেই। এভাবেই তারা হেটে যাবে নগরের একপ্রান্ত থেকে অন্ত প্রান্ত। হিমু বেঁচে থাকবে আমাদের লেখনীতে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৯
৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×