হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর শুরু হয়ে গেছে শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা। গতকালই প্রথম জানাজা হয়েছে নিউইয়র্কে। মরদেহ দেশে আসছে সোমবার। শেষশ্রদ্ধা নিবেদনে যে ভিড় হবে তা সরকার কীভাবে সামাল দেবে আমরা জানি না। তবে এটুকু জানি দেশের আর সব ঘটনা-দুর্ঘটনা ছাপিয়ে উঠবে তাকে নিয়ে মানুষের কৌতূহল। গণমাধ্যম সেই কৌতূহলে জোগান দিতে গিয়ে ভুলে থাকবে রাজনীতিবিদদের। তারা গরম গরম কী কথা বললেন সেদিকে কেউ কানই দেবে না। অবশ্য তারাও দিন বুঝে গরম কথা কম বলবেন। তারাও জনতায় সাথে সুর, তাল ও ভাব মিলিয়ে হুমায়ূনের শবযাত্রার অনুগামী হবেন।
লেখক হুমায়ূনের কথা বাদ দিয়ে যদি আমরা শুধু জনপ্রিয় হুমায়ূনকে গণতন্ত্রের পাল্লায় তুলি তাহলেও তার ওজন অনেক। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে শুধু যে তরুণরাই হুমায়ূনকে ভালবাসেন, তার লেখা পছন্দ করেন তা কিন্তু নয়। চার দশকের জননন্দিত লেখকের সমান বয়সী অনেকেও তো তার ভক্ত। তার বই পড়ে আলোড়িত হয়েছেন। রাজনীতিবিদরা গল্প-উপন্যাস খুব একটা হয়ত পড়েন না। কিন্তু খুঁজলে দেখা যাবে তাদের অনেকেই কোনো না কোনোভাবে হুমায়ূনের লেখা পড়েছেন।
রাজনীতিবিদদের কথা বারবার বলার একটা কারণ আছে। রাষ্ট্রের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা তো তারাই। আমি তাদের কাছে একটা আবেদন জানাতে চাই। বিশেষ করে বর্তমানে যেসব রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় আছেন। আবেদনটা জানানোর আগে বলে নেই। তারা কিন্তু নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করেন। আওয়ামী লীগ আর বাম দলগুলোর কাছেই আশ্রয় নেন দেশের অধিকাংশ প্রগতিশীলরা। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই দেশের প্রগতিশীল লেখক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীদের বারবার ফিরে যেতে হয় আওয়ামী লীগ আর বাম দলগুলোর কাছেই।
তাই যে দাবি আমরা অন্য সরকারের কাছে করতে পারতাম না তা এই সরকারের কাছে করতে পারি। আমরা চাই সরকার হুমায়ূনের জন্য একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করুক। আমরা চাই লাখো জনতার আবেগকে সরকার সম্মান দিক। লাখো জনতার আবেগের সাথে সরকার একাত্মতা ঘোষণা করুক।
সরকার তা না করলেও বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বসবাসকারীরা সোমবারের দিনটি কিংবদন্তি কথাকার হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উৎসর্গ করতে করতে পারি না?