somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে

২১ শে জুলাই, ২০১২ রাত ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি জানতাম আপনি চলে যাবেন। সেদিনই বুঝে ছিলাম যে দিন পত্রিকায় দেখলাম আপনি শাওন কে বলছেন, “তুমি আমাকে এ হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাও। ওরা (ডাক্তাররা) আমাকে এখানে মেরে ফেলবে।” জানতাম না আপনার চলে যাওয়াটুকু এতোটা নাড়িয়ে দেবে আমার ভিতর-বাহির। যখন খবরটা জেনেছি তেমন কোন প্রতিক্রিয়াই ছিল না। এখন মধ্যরাতে ঝাপসা চোখে মনিটরের দিকে অপলক চেয়ে রই, কী-বোর্ডে পড়ে থাকে নিশ্চল আঙুল।


ঝাপসা হয়ে আসা চোখে ভেতর ভেসে উঠে আমার কৈশোর। কতইবা তখন বয়স। বারো/ তেরো হবে। বই পড়ার বদভ্যাস তখন আমার সঙ্গী হয়ে গেছে। মামার টেবিল গল্পের বইয়ের মতো লাগলো দেখে একটা বই হাত টেনে নিলাম। বইয়ের নাম "ময়ূরাক্ষী", লেখক হুমায়ূন আহমেদ। সেই প্রথম পরিচয় উপন্যাস নামক জিনিসটা সাথে। আপনার সাথেও। তারপর থেকে যেখানেই পেতাম আপনার লেখা, গোগ্রাসে গিলতাম। বই কেনার জন্য যা টাকা জমাতাম তার অর্ধেক থাকতো আপনার বই কেনার জন্য, আর বাকীটা অন্যান্যদের। এই তো কদিন আগেই, গ্রীষ্মের ছুটিতে চকবাজারে পুরাতন বইয়ের দোকানে থরেথরে সাজানো আপনার বইগুলো দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেড়িয়ে আসলাম, পকেট শূন্য বলে।


এসএসসি পরীক্ষার পরের কথা। করার তেমন কিছু নেই। এক জায়গায় গিয়ে ইংরেজী বলার কসরত করি। তেমন সুবিধা করতে পারি না। এছাড়া দিনমান অখন্ড অবসর। এক ভাই ধরে নিয়ে গেলেন সিটি কর্পোরেশন লাইব্রেরীতে। এতো এতো বই। আমি পড়লাম অথৈ সাগরে। কার বই পড়ি? সমাধান পেলাম সাথে সাথেই। হুমায়ূন আহমেদ আছেন না! একে একে আপনার যত বই ঐ লাইব্রেরীতে ছিল পড়ে শেষ করলাম। "আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই" বইটা পড়তে গিয়ে ঘোরের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। প্রথম দিনে পড়ে শেষ করতে না পারায় দ্বিতীয় দিন লাইব্রেরী খোলার আগেই গিয়ে হাজির হয়ে ছিলাম তর সইছিল না বলে। টানা দুইদিন পড়ে বইটা শেষ করার পর যা করলাম, আবার প্রথম থেকে পড়া! এতটা পাগলামী জীবনে আর কোন বই নিয়ে করিনি। বইটাতে লেখা একটা ঘটনা মনে খুব দাগ কেটে ছিল। আমেরিকায় আপনার শিক্ষা জীবনের প্রথম পরীক্ষায় আপনি পেয়েছিলেন শূন্য, আর সহপাঠী অন্ধ ছেলেটা সর্বোচ্চ। আপনার কোর্স টিচার আপনাকে আগে প্রিলিমিনারী কোর্সগুলা করতে বলেছিলেন। এ ঘটনায় আপনার মাঝে যে জেদ চেপে ছিল তার ফলাফল ছিল, ফাইনাল পরীক্ষায় আপনার ১০০তে ১০০ পাওয়া। এখনো, যদি কখনো সাহস হারিয়ে ফেলি এটা স্মরণ করে নিজকে প্রবোধ দেই, সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি, আরো কিছুটা বাকী।


আপনার সাথে পরিচয়ের শুরুটাই ছিল হিমু দিয়ে। তারপর মধ্যরাতে রাস্তায় হাটতে হাটতে নিজকে কতবার হিমু মনে হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। "হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম" পড়ার পর আমি জটিল হিসাব-নিকাশে পড়ে গেলাম। কাউকে পছন্দ হলে ভাবি, কয়টা নীলপদ্ম একে দেয়া যায়? সব দিয়ে দিলে যদি নিজেই বিপদে পড়ে যাই! এ চক্কর থেকে আমার আর বের হওয়া হলো না। সবকটা নীলপদ্ম নিয়ে একাকী ঘুরে বেড়াই, কোন একদিন কারো কাছে সমর্পণ করবো বলে। হিমু জোছনা পছন্দ করতো, আপনিও। সারা জীবন অপেক্ষায় ছিলেন জোছনার ফূল ধরবেন বলে। পেরেছিলেন কি না জানি না তবে থৈ থৈ জোছনায় সমুদ্র দেখবো বলে আমার আজো দারুচিনি দ্বীপ যাওয়া হয়নি। কোন একদিন যদি বান ডাকা জোছনায় একাকী সাগর তীরে বসে হু হু করে কেঁদে উঠি তার জন্য আপনি ছাড়া আর কাকেই বা আমি দায়ী করবো?


শেষের দিকে এসে আপনার উপর অনেকখানি ক্ষিপ্ত ছিলাম। আপনার লেখাগুলো আগের মতো আর টানতো না। সেটা হয়তো পাঠক হিসেবে আমার বয়ঃপ্রাপ্তি কিংবা আপনার অতি বাণিজ্যিক লেখা। আপনি বোধহয় আপনার নিজের চেয়ে প্রকাশকের জন্য বেশী লিখছিলেন। তবুও বইমেলায় বের হওয়া মাত্রই আপনার বইটা সবার আগে কিনতাম। এক বসাতেই শেষ করতাম। অভিমান জেগেছে বলে ভালবাসাতো আর মিথ্যে হয়ে যায়নি। আপনার অনুপস্থিতি সহজেই মেনে নিয়েছি কিন্তু আপনার বই আর বই মেলাতে আসবে না, অটোগ্রাফ নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়বো না এটা এখনো মেনে নিতে পারছি না। আপনি ছিলেন বলেই আমাদের প্রজন্ম বই কিনতে শিখছে, বই পড়তে শিখেছে। আপনার বই পড়েছি জেনে নিঃসঙ্গতার সংজ্ঞা। আমাদের শিখিয়েছেন জোছনা দেখতে, বৃষ্টিতে ভিজতে। আপনি নেই বললেই হলো? আমাদের হৃদ মাজারে থেকে আপনাকে সরাবে সাধ্য কার? আপনি মিশে থাকবেন এই বাংলার জল-জোছনা-বৃষ্টি-বর্ষায়।

প্রিয় হুমায়ূন, আমাদের আশ্চর্য কলম জাদুকর , মেঘের ওপারে বাড়ীতে আপনি ভালো থাকুন।

"the king is dead,
long live the king"
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৩:০২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×