রাজশাহী থেকে কেউ পার্সেল কুরিয়ার করার সময় যদি প্রাপকের ঠিকানা হিসেবে শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার না লিখে শ্রীমঙ্গল, সিলেট লিখে তবে এটা নিঃসন্দেহে ভুল। শ্রীমঙ্গল থানা মৌলভীবাজার জেলায় আর মৌলভীবাজার সিলেট বিভাগে অবস্থিত। তবু ঠিকানায় শ্রীমঙ্গল লিখার পর জেলার নামের জায়গায় যদি কেউ বিভাগের নাম লিখে দেয়, কুরিয়ার সার্ভিসের লোকজনের এটা না বুঝার কথা না বলেই আমি বিশ্বাস করতাম। অগাধ সেই বিশ্বাসে চির ধরল যখন আমার মোবাইলে একটা কল আসল:
‘হ্যালো, আপনার একটা পার্সেল আছে, আমাদের বন্দরবাজার অফিস থেকে এটা নিয়ে যান।’
শ্রীমঙ্গলে বন্দরবাজার বলে কোন জায়গা আমার জানা না থাকায় তার কাছে স্পেসিফিক লোকেশানটা জানতে চাইলে বুঝতে পারলাম আসলে ওটা সিলেট শহরের একটা জায়গার নাম। বুঝতে পারলাম আমার ঠিকানায় পাঠানো পার্সেলটি সিলেটে চলে গেছে! মেজাজ গরম হলেও তা ওপাশের লোকটিকে বুঝতে দিলাম না কারন আমি তখনো নিশ্চিত না যে ভুলটি কার দ্বারা করা হয়েছে। আমি তাকে ভুলটা ধরিয়ে দিয়ে বল্লাম পার্সেলটা শ্রীমঙ্গলে পাঠিয়ে দিতে। উত্তরে তিনি জানালেন যে এ কাজটা করতে গেলে ওটা আগে তাদের হেড অফিস ঢাকা পাঠাতে হবে। হেড অফিস হয়ে তবেই ওটা শ্রীমঙ্গলে পৌছাবে। এটাও নাকি ওদের নিয়ম। মনে মনে হিসেব করে দেখলাম এ নিয়মে পার্সেলটি আমার কাছে পৌছতে দুদিন সময় লাগবে। দুদিনে অতোটা সমস্যা হবে না ভেবে আর কিছু না বলে কলটি কেটে দিলাম।
দুদিন পর আবার মোবাইলে কল আসল।
‘হ্যালো, আপনার একটা পার্সেল আছে, আমাদের বন্দরবাজার অফিস থেকে এটা নিয়ে যান।’
আমার তো মাথায় হাত! আবার একই কান্ড! এবার আর রাগ চেপে রাখতে পারলাম না। ধমক দিয়ে বলে উঠলাম,
‘এইসব কি পাইসেন! আমার একটা পার্সেল নিয়ে কতো রঙ্গ তামাশা করবেন?’
ওপাশ থেকে যিনি কল করেছিলেন উনি বোধহয় আগের ঘটনাটা জানতেন না। আগের ঘটনাটা তাকে জানিয়ে বললাম,
‘এক্ষুনি ওটা আমার ঠিকানায় পাঠান।’
‘স্যরি স্যার, নিয়ম অনুযায়ী আমরা পার্সেলটা আপনার ঠিকানায় পাঠাতে পারবো না। ওটা আগে ঢাকা যাবে তারপর আপনার কাছে।’
অনোন্যপায় হয়ে এবার অনুনয় করে তাকে বললাম,
‘প্লিজ ওটা সরাসরি আমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন। আপনি চাইলেই তো নিয়মের বাইরে যেতে পারবেন। আপনাদের গ্রাহকের দিকটা একটু ভাববেন না?’
‘দুঃখিত স্যার। নিয়মের বাইরে যাওয়ার কোন নিয়ম আমাদের নেই।’
‘গুষ্ঠি কিলাই আপনার নিয়মের।’
কলটি কেটে দেয়া ছাড়া ঐ মুহূর্তে আর কিছু করার ছিল না আমার।
দুদিন পর কিন্তু ভুল হলো না আর। কুরিয়ারের শ্রীমঙ্গল অফিস থেকে কল পেয়েই আমি দ্রুত ১০ কেজি ওজনের পার্সেলটি রিসিভ করে বাসায় নিয়ে আসলাম।
পার্সেলটি খুলেই বুঝলাম, রাজশাহীর ফরমালিন মুক্ত আমগুলির অধিকাংশই আর খাওয়ার মতো অবস্থায় নেই!
আরো বুঝলাম, এজন্যই আমাদের দেশে ফরমালিন অপরিহার্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৫