somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরানের উপর সামরিক হামলার হুমকি – মার্কিনিদের প্রস্তুতি কতটুকু।

১৯ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক মন্দা আর ভিয়েতনাম, ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমেরিকা ইরানে হামলা চালাবে কিনা সেটা ভাববার বিষয়। তবে ইরানের চারদিকে আমেরিকার সেনা মোতায়েনের প্যাটার্ন দেখে মনে হতে পারে যে তারা সে দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমেরিকা এই সৈন্য সমাবেশের কাজটি করে যাচ্ছে অনেক দীর্ঘ সময় ধরে আর লোক চক্ষুর অন্তরালে।

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা উপস্থিতির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে ইউএস মিলিটারি বেস্‌ গুলো ক্রমেই ইরানকে চার দিক থেকে মুড়ে ফেলেছে (নিচের ম্যাপটি দেখুন)। ২০১১ সালের শেষের দিকে ইরাক থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের পর আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে মধ্যপ্রাচ্যের ভারসাম্য কিছুটা ইরানের পক্ষেই ভারি হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত সত্যটা ভিন্ন। বাজেট কাট্‌ আর অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমেরিকা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাদের সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে আনছে ঠিকই। তারপরও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের সামরিক উপস্থিতি অন্য যে কোন পরাশক্তি দেশের চেয়ে বেশী। এই ধারায় ২০১৪ সালের মধ্যে আফগানিস্তান থেকেও তাদের সৈন্য সরিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও অস্ট্রেলিয়া ও সাউথ চায়না সাগর অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।

মার্কিনিদের সর্বমোট ১৪ লক্ষ সক্রিয় সৈন্যের (active-duty force) মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ সৈন্য বিশ্বের ১৩০ টি দেশে বিভিন্ন মিশনে মোতায়েন রয়েছে। এর মধ্যে কিছু হচ্ছে স্নায়ু যুদ্ধের সময়কার আর বেশীর ভাগ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অংশে। বিশ্ব জুড়ে মার্কিনীদের আছে ৭৫০ টি মিলিটারি বেস্‌। যদিও আমেরিকানরা বলতে চায় যে, মধ্যপ্রাচ্যের মিলিটারি বেস্‌ গুলো ইরানের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় ন্যস্ত। কিন্তু বাস্তবে এই সব মিলিটারি বেস্‌ গুলো ইরান তাদের জন্য পারমানবিক হুমকি হিসেবে দেখা দেয়ার বহু আগেই মোতায়েন করা ছিল।

তিনটি কারণে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে চায় - প্রথমতঃ মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, দ্বিতীয়তঃ ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর তৃতীয়তঃ আমেরিকার স্বার্থের উপর হুমকি গুলকে মোকাবেলা করা।

তবে তাদের এই সৈন্য উপস্থিতি তারা কারো উপর চাপিয়ে দিয়ে করে না। তারা এই কাজটি করে অতি চাতুর্যের সাথে – দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ফ্লেভার দিয়ে। যেমনটি তাঁরা, বাংলাদেশকে এই রকম একটি অফার দিয়েছিল সেন্ট-মার্টিন দ্বীপে বেস স্থাপনের। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যে এই কাজটি করেছে পারস্য উপসাগরীয় মুসলিম দেশগুলোর (সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, বাহ্রাইন এবং ওমান) সাথে একটি নিরাপত্তা বলয় (security umbrella) সৃষ্টিতে সহায়তার দোহাই দিয়ে। আর এক্ষেত্রে তাঁর ইরানকে ব্যবহার করেছে ভিলেন হিসেবে। আর তাদের এই বেস্‌ গুলতে এত এত সমর সরঞ্জামের আয়োজনের উদ্দেশ্য একটাই - তা হল, তথাকথিত শত্রুদের সঙ্কেত দেয়া যে আমেরিকা প্রয়োজনে তাদের পেশি শক্তির ব্যাবহার করবে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে।


(ম্যাপঃ লাল বৃত্ত দিয়ে ইরানের চার পাশের আমেরিকান সেনা, বিমান ও নৌ ঘাটি গুলো হাইলাইট্‌ করা হয়েছে)

পেন্টাগনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী (আল-জাজিরার ৩০ এপ্রিলের’১২ রিপোর্ট) ইরানের কাছাকাছি সীমান্তে প্রায় ১লক্ষ ২৫ হাজার আমেরিকান সৈন্য মোতায়েন আছে। এছাড়াও আফগানিস্তানে রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার সৈন্য যা ইরানের খুব কাছাকাছি। প্রায় ২০ হাজার আছে তুরস্ক, সাইপ্রাস, জর্ডান আর ইসরায়েলে। আরও প্রায় ২০ হাজার সৈন্য আছে বিভিন্ন যুদ্ধ জাহাজে ভাসমান অবস্থায়। আর এ সবই ইরানকে ঘিরে।

এসব সমর সজ্জা সবই ইরানের জন্য নয় এটা ঠিক, তবে ইরান আমেরিকাকে তাদের এই সমর সজ্জার জন্য একটি জোরালো কারণ খুঁজে দিয়েছে। কিন্তু এটা বুঝতে খুব কষ্টকর নয় যে ইরানকে ইতিমধ্যেই সামরিক ভাবে ঘেরাও করা হয়েছে। এখন হয়ত শুধু আরও একটি যথোপযুক্ত (!) কারণ আর সময়ের অপেক্ষা।

(আল-জাজিরা আর বিবিসি নিউজ্‌ ও বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে সংগৃহীত উপাত্ত অবলম্বনে)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:২৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×