somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবিজী (সাঃ) কে না দেখেও সাহাবী

১৯ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উয়ায়েস কারনী (রাঃ)ছিলেন একজন মুসলিম কারান (Qaran) নামক স্থানের অধিবাসী যা এখন সৌদি আরবের অন্তর্ভুক্ত। তিনি হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এর সমসাময়িক কালের ব্যাক্তি ছিলেন।তাই নবীজি (সাঃ) তাঁকে সাহাবী হিসাবে উল্লেখ করেছেন, যদিও নবিজী (সাঃ) এর জীবদ্দশায় নবাজী (সাঃ) এর সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ হয় নাই। আল্লাহর প্রেরিত রাসুলকে দেখার আন্তরিক আকুলতার কারণে তাঁর নাম সাহাবী (রাঃ) দের তালিকায় স্থান পায়।

বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বাতুতা হযরত উয়ায়েস কারনী (রাঃ) এর সমাধী সিরিয়ার আর-রাক্বাহ নামক স্থানে উল্রেখ করেন, যেখানে তিনি সিফ্ফিনের যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করেন।

হযরত উয়ায়েস কারনী (রাঃ) ইসলামে দিক্ষিত হন রাসুলেপাক (সাঃ) এঁর জীবদ্দশায়, যদিও তাঁদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হয় নাই। রাসুলেপাক (সাঃ)এর ওফাতের পর তিনি হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়।

ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন " আমার লোকেদের মাঝে এমন একজন আছে যে শেষ বিচারের দিনে সকল বিশ্বাসীদেরকে হেফাজতের ক্ষমতা রাখে"।সাহাবা (রা) গণ জিজ্ঞাসা করলেন " কে সেই ব্যক্তি?" তিনি বল্লেন "সে আল্লাহর বান্দা।" তাঁরা প্রত্যুত্তরে বল্লেন "আমরা সবাই আল্লার বান্দা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পয়দা করেছেন।" তাঁরা প্রশ্ন করলেন " তাঁর নাম কি?" রাসুলে পাক (সাঃ) বল্লেন "উয়ায়েস!" সাহাবা (রা) গণ জিজ্ঞাসা করলেন,"তিনি কোথায়?" তিনি বলেন "ইয়েমেন"। সাহাবা (রা) গণ জিজ্ঞাসা করলেন, "সে যদি আপনাকে ভালোবাসে, তাহলে কেন আপনার খেদমতে হাজির হয় না?" রাসুলে পাক (সাঃ) জবাবে বল্লেন, "সে আমার পথ গ্রহণ করেছে এবং সে একজন বিশ্বাসীর অন্তর্ভুক্ত; শারিরীক ভাবে তাঁর এখানে উপস্থিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। অধিকন্তু তাঁর পরিস্থিতি তাঁকে এখানে আসতে সহায়তা করে না এবং সে তার অচল-অন্ধ মায়ের সেবা করে।সে দিনের বেলা উট চরায়। সেই আয় থেকে নিজে ও তাঁর মায়ের ভরণ পোষন করে। সাহাবা (রাঃ) গন প্রশ্ন করলেন আমরা কি তাঁকে দেখতে পাব?" রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন," আবু বকর নয়, তবে ওমর এবং আলী পারবে। তোমরা তাঁকে পাবে ইয়ামেনের একটি গ্রাম শারানীতে এবং তাঁর হাতের তালুতে এবং বুকের পাজরের কাছে সাদা দাগ দেখে তোমরা তাঁকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে।। যখন তোমাদের সাথে তাঁর দেখা হবে, তাঁকে আমার শুভেচ্ছা দেবে আর আর আমার উম্মতদের জন্য দোআ করতে বলবে।"এটা উল্লেখ্য যে হযরত উয়ায়েস এঁর মাতা মারা যাওয়ার পরে তিনি হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য বের হন এবং সিফ্ফিনের যুদ্ধে শাহদাৎ বরন করেন।

খেরকা মোবারক প্রদাণঃ-

দুনিয়া থেকে ওফাতের পূর্বে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) হযরত আলী এবং হযরত উমর (রাঃ)কে তাঁর একটি খেরকা মোবারক প্রদান করেন এবং খেরকা মোবারকটি উয়ায়েস (রাঃ) এর কাছে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি বলেন আমার খেরকা মোবারকটি উয়ায়েসকে দেবে এবং তোমাদের জন্য এবং আমার সকল উম্মতের মাগফেরাতের জন্য তাঁকে দোআ করতে বলবে।" পরবর্তিতে হযরত আলী (রাঃ) এবং উমর (রাঃ) খেরকা মোবারকটি পৌছে দিয়ে তাঁকে দোআ করার জন্য বল্লে তিনি কান্না শুরু করেন। খেরকা মোবারকটি নিয়ে তিনি নির্জনে নিভৃতে চলে যান এবং সেজদায় পড়ে তিনি আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করতে থাকেন।তিনি বলেন, হে আল্লাহ! আমি এই খেরকা মোবারক ততক্ষন পর্যন্ত গ্রহণ করব না, যতক্ষন না আপনি সকল উম্মতি মোহাম্মদিকে ক্ষমা করবেন। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আমাকে এই দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন। গায়েবী আওয়াজ এলো-"আমি অসংখ্য উম্মতি মোহাম্মদকে ক্ষমা ঘোষনা করলাম, এবার আপনি খেরকা মোবারক গ্রহণ করুন।" হযরত উয়ায়েস দাবী করেন, আমি সকল উম্মতি মোহাম্মদির মাফি কামনা করছি। এমতাবস্থায় হযরত উমর (রাঃ) উক্ত নির্জন স্থানে উপস্থিত হলে উয়ায়েস (রাঃ) এর একাগ্রতায় চ্ছেদ ঘটে এবং তিনি দোআ বন্ধ করে খেরকা মোবারকটি গায়ে দেন। তিনি বলেন হে উমর! আপনি আমাকে বিরক্ত না করলে এই খেরকা মোবারক ততক্ষন পর্যন্ত আমি গায়ে দিতাম না, যতক্ষন না আল্লাহতায়াল সমস্ত উম্মতি মোহাম্মদীকে ক্ষমা ঘোষনা করতেন।হযরত মোহাম্মদ (সেঃ) বলেন বিশ্বাসী আল্লাহর নুরকে খোজ করবে, এবং কেউ তা অন্তরচক্ষুদ্বারা দেখবে , যা চর্ম চক্ষু দ্বারা পাওয়া যাবে না। এবং জ্ঞ্যান হলো আলো বা নূর যা আল্লাহ যাকে খুশি দান করেন।শারীরিকভাবে কাছাকাছি না থাকলেও সিদ্ধি লাভ হয়। হযরত উয়ায়েস কারনী তারই উদাহরণ। যেহেতু তিনি কখনোই নবিজী (সাঃ) কে চর্মচক্ষু দ্বারা দেখেন নাই কিন্তু তার পরেও তাঁর সকল শিক্ষাই তিনি পেয়েছিলেন।

অন্তর দিয়ে তিনি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর খুবই কাছাকাছি ছিলেন যার কারণে তিনি হযরতের ব্যাথা নিজেও অনুধাবন করতে চেয়েছেন। যার ফলে যখন হযেতের দাঁত মোবারক যুদ্ধে শহীদ হয়, তিনিও তাঁর দাঁত ভেঙে ফেলেন।

হযরত আত্তার (রাঃ) বলেন, উয়ায়েসী পন্থানুযায়ী শারীরিক ভাবে কোন নির্দেশক (পীর) এর প্রয়োজন পড়ে না। জাহেরী এবং বাতেনী জ্ঞ্যানের দ্বারাই তিনি হযরতের দাঁত হারানোর বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন। এটা সরাসরি হযরত মোহাম্দ (সাঃ) এর থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্বাসীগন আল্লাহর নূরকে খুজতে থাকে। এটা ততক্ষন অবধারণ করা যায় না যতক্ষন অন্তরদ্বারা তা অনুধাবন করা না যায়। পীর এর কাজ এই নয় যে সে তোমার দ্বারা নির্বাচিত হবে, বরং তাঁর কাজ হচ্ছে সে তোমার আত্মার উন্মেষ ঘটাবে। তাই যখন হযরত আত্তার (রাঃ) বলেন, উয়ায়েসী পন্থানুযায়ী শারীরিক ভাবে কোন নির্দেশক (পীর) এর প্রয়োজন পড়ে না, তখন তিনি অভিমত প্রকাশ করেন যে পীর হচ্ছেন শরীর - উপরন্তু মনের একজন নির্দেশক। পরবর্তিতে এই ধারণার অনেক অপব্যাখ্যা হয়।

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×