বিয়ার বনাম বিপদ!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ফেসবুকে একটা ছবি চোখে পড়ছে অহরহ। প্রোটিনসমৃদ্ধ একটা শ্যাম্পুর ছবি, পাশের ছবিটা বিয়ার গ্রিলসের। নিচে লেখা, ‘এই শ্যাম্পু পেলে বিয়ার নিশ্চয়ই খেয়ে ফেলবে! কারণ এতে প্রোটিন আছে!’ বিয়ার গ্রিলস নামটার সঙ্গে পরিচয় থাকলে আপনিও নিশ্চয়ই এই রসিকতার মাজেজা বুঝবেন। যেখানে প্রোটিন, সেখানেই বিয়ার। না থেকেইবা উপায় কি! দুনিয়ার দুর্গম সব জায়গায়, যেখানে খাবার ও পানীয়জলের ভীষণ আকাল, সেখানে একটা গুবরে কিংবা শুঁয়ো পোকার মধ্যে প্রোটিন খোঁজা তো খুবই জরুরি। সেখানে নিজে বাঁচলে বাপের নাম! সেটাই করে দেখান এই ব্রিটিশ তারকা। হ্যাঁ, তারকাই বটে। হলিউডের কোনো অভিনেতার চেয়ে কম জনপ্রিয় নন ৩৭ বছর বয়সী বিয়ার গ্রিলস। অভিনেতারা তো দুঃসাহসিক কাজ করেন সাজানো মঞ্চে, বিয়ারের দুঃসাহসিকতায় এতটুকু খাদ নেই। তাঁর মঞ্চ দুনিয়ার সব আতিথেয়তাহীন জায়গায়।
ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড—নামেই পরিচয়। বুনো পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকেন বিয়ার। ডিসকভারি চ্যানেলের এই অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী। গোটা বিশ্বজুড়ে এর দর্শক এখন ১ দশমিক ২ বিলিয়ন। ২০০৬ সালে শুরু হয়েছিল যাত্রা। অনুষ্ঠানটি প্রথম প্রচারিত হয় ব্রিটিশ চ্যানেল ফোরে, বর্ন সারভাইভর: বিয়ার গ্রিলস নামে। এ পর্যন্ত ছয়টি সিজন পার করেছে অনুষ্ঠানটি। এবং এই সিজনেই পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলছেন বিয়ার। ডিসকভারির সঙ্গে আর্থিক চুক্তি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত। তবে ওর্স্ট কেস সিনারিও নামের আরেক অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হয়েছেন রবিন হুডের অন্ধভক্ত বিয়ার। যুক্তরাষ্ট্রে ডিসকভারি চ্যানেলেই প্রচারিত হচ্ছে তা।
বিয়ার গ্রিলসের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে একটা বিভাগ আছে ‘আস্ক বিয়ার’ নামে। সেখানে যে কেউ বিশ্বের ২৮ মিলিয়ন স্কাউটের প্রধান বিয়ারকে প্রশ্ন করতে পারেন যেকোনো বিষয়ে। সেখান থেকেই কিছু প্রশ্নোত্তর ছাপা হলো এখানে—
আপনার অনুষ্ঠানটি বিশ্বের ১৫০টি দেশের এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ দেখে। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা কোনটি আপনার কাছে?
বিয়ার গ্রিলস: আমার বাসা।
বাবা হওয়ার পর আপনার কাজে কি কোনো প্রভাব পড়েছে? আপনাকে গতি কি ধীর করে দিয়েছে?
বিয়ার গ্রিলস: দুঃসাহসিক অভিযানই আমার সব সময়ের কাজ। তবে পিতৃত্ব এখন আমাকে বড় কোনো ঝুঁকি নেওয়ার আগে ভাবায়। আগে আমি শতভাগ বেপরোয়া ছিলাম, এখন ৮৫ শতাংশ।
ছেলেরা বড় হলে তাদের সঙ্গে দুঃসাহসিক অভিযানে বেরোনোর কোনো পরিকল্পনা আছে?
বিয়ার গ্রিলস: আশা করি! আমি যখন একদম ছোট, তখন আমার বাবা আমাকে পাহাড়ে ওঠা শিখিয়েছিলেন। খুবই রোমাঞ্চকর ছিল সেই অভিজ্ঞতা। আমার বাচ্চাদের সঙ্গেও ছোটখাটো বেশ কয়েকটি অভিযানে নেমেছি এ পর্যন্ত।
প্রতিবছর পরিবার ছেড়ে বাইরে থাকেন কত দিন?
বিয়ার গ্রিলস: সাধারণত সাত মাস বাইরে থাকতে হয়। এটা খুবই কঠিন আবার আনন্দেরও। তবে সব সময়ই মাথায় থাকে সুস্থ দেহে যত দ্রুত সম্ভব ঘরে ফেরার তাগিদ।
আপনার জীবনের সবচেয়ে দুঃসহ স্মৃতি কোনটা?
বিয়ার গ্রিলস: সম্ভবত আফ্রিকায় ফ্রিফল দুর্ঘটনায় আমার মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়া, কিংবা এভারেস্টের ২১ হাজার ফুট ওপরে একটা গভীর খাদে পড়ে যাওয়াটা। হতে পারে ভেলা থেকে ১৬ ফুট লম্বা একটা টাইগার শার্কের ওপর লাফিয়ে পড়ার স্মৃতিটাও।
আপনার স্ত্রী কি এই দুঃসাহসিক অভিযানে আগ্রহী?
বিয়ার গ্রিলস: সে ঘর ভালোবাসে...এবং তাঁর জন্যই আমার নিরাপদে ঘরে ফেরা।
ডিসকভারি চ্যানেলের ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড অনুষ্ঠানটি কীভাবে তারকা বনে গেলেন আপনি? এই অভিজ্ঞতাটা কেমন?
বিয়ার গ্রিলস: এভারেস্টে ওঠার পর ডিসকভারি এবং চ্যানেল ফোর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে (তাঁরা আমার দ্য কিড হু ক্লাইমড এভারেস্ট বইটা পড়েছিলেন। গল্পটা ছিল চারজন পর্বতারোহীর, যারা এভারেস্টের ওপর জীবন হারিয়েছিল)। তারপর তারা বলল, আমরা তোমাকে বিপদৎসংকুল জায়গায় রেখে আসব, তুমি সেখানে কী করে টিকে থাকতে হয় তা দেখাবে। আমি যে তার আগে ব্রিটিশ স্পেশাল ফোর্স থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে টিকে থাকার প্রশিক্ষণ নিয়েছি, তা-ও জানত ওরা। প্রথম থেকে বেশ নার্ভাস ছিলাম। তবে মজাটা আবিষ্কার করি শুরু করার পরপরই।
কতজন কলাকুশলী কাজ করেন অনুষ্ঠানটিতে? তাঁরা কি সবাই প্রশিক্ষিত?
বিয়ার গ্রিলস: সাধারণত চার থেকে পাঁচজন কলাকুশলী থাকেন আমার সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে কেউ ক্যামেরাম্যান, কেউ শব্দ নিয়ন্ত্রক, থাকেন পরিচালক/সহকারী পরিচালক। হ্যাঁ, তাঁরা সবাই প্রশিক্ষিত। তাঁরা আমার ভালো বন্ধুও বটে।
মাহফুজ রহমান
উইকিপিডিয়া, ডিসকভারি ও বিয়ার গ্রিলসের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট অবলম্বনে
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ
বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।
আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার
মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪
ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla
ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।
প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান
উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন