somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সাথে যেন যৌন হয়রানির নিবিড় সম্পর্ক !!

১৬ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যৌন নিপীড়নের ও হয়রানির ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে নিরাপরাদ ছাত্রী ও তাদের আপনজনদের। আর প্রশ্রয় পেয়ে অপকর্মে আরো বেশি জড়িয়ে পড়ছে অভিযুক্তরা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির অভিযোগ নিত্য দিনের। অথচ হয়রানির শিকার হয়ে ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন নানাভাবে বিঘ্নিত হলেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেই কোনো অভিযুক্ত শিক্ষক বা সহায়তাকারী ছাত্রের বিরুদ্ধে।

গত কয়েক বছরের বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরছি।

সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত্স্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হাসানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গত ৩০ জুন বিভাগের একাডেমিক কমিটি এ অধ্যাপকের জন্য বিভাগের ২০০৯-১০ ব্যাচের সকল ক্লাস এবং বষের্র ক্লাস গ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে।

২০১২ সালের ৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নূরউদ্দিন আলোর বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। এ বছরই নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন এক ছাত্রী।

২০১২ সালের জুন মাসে প্রাণ পরিসংখ্যান ও তথ্য পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জাফর আহমেদ খানের বিরুদ্ধে পরকীয়া, নিপীড়ন ও যৌতুকের অভিযোগ আনেন তারই স্ত্রী। তিনি জাফরের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন।

২০০৯ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে এক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। এরপর ঐ শিক্ষককে এক বছর একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি কাজে যোগ দিয়েছেন।

২০১০ সালে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তখনকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলা হয়। শিক্ষার্থীদের লাগাতার অন্দোলনের ফলে তিনি চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর তার বিরুদ্ধে আর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

২০১১ সালে উর্দু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইসরাফীলের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন এক শিক্ষার্থী। এরপর তাকে চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়। কিন্তু এর জন্য কোন তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি।

২০১১ সালে এপ্রিল মাসে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু মুসা আরিফ বিল্লাহর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলা হয়। বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে তাকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ছাত্রী বিভাগে আসেন না এবং তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা। তার শিক্ষাজীবনই হুমকির মুখে।

২০১১ সালে জুন মাসে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক মুহিত আল রশিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন এক ছাত্রী। এরপর তাকেও একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

২০১১ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী লাঞ্ছনার অভিযোগ ওঠে। পরে ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঐ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন।

২০০৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন এক শিক্ষার্থী। অভিযোগের ভিত্তিতে ঐ শিক্ষককে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে সমপ্রতি তিনি কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন।


বাড়ছে দীর্ঘশ্বাস লম্বা হচ্ছে নির্যাতিতদের তালিকা

মফস্বল থেকে আসা ছাত্রী লাবণ্য (ছদ্মনাম)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আবাসন সংকটে পড়েন। হলে উঠতে পারিবারিকভাবে পূর্ব পরিচিত পংকজ বারুরীর শরণাপন্ন হন তিনি। তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেয় পংকজ। এতে নানাভাবে লাবণ্যকে প্রতারিত করার চেষ্টা করে পংকজ। এমনকি গত এপ্রিল মাসে সেই ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টা করে সে।

মেয়েটির নাম ছিল সোহানা (ছদ্মনাম)। বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন। কিন্তু যে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনলে এখন সে ভয় পায়। মনে করতে চায় না তার সেই সৃতিময় বিদ্যাপীঠের নামটি। কারণ, ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজ শিক্ষকের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন তিনি। তাকে নির্যাতন করেছিল ঐ শিক্ষকের দুই ছাত্রও।

২০০৪ সালে অনার্স প্রথমবর্ষে অধ্যয়নকালে শিক্ষকের নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে মাস্টার্স পরীক্ষা পর্যন্ত তিনি কয়েকবার বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে ঘটনার সুবিচার এবং সুরক্ষা চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এই সময়ে বিভাগে চেয়ারম্যান পরিবর্তন হয়েছেন তিনজন। সকলের কাছেই আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কারো কাছ থেকেই ন্যায়বিচার পাননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল মফস্বলের ছাত্রী শাহেনার (ছদ্মনাম)। সে স্বপ্ন সত্যি হয় ২০০৮ সালে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই আবাসন সংকটের কারণে শরণাপন্ন হন দূর সম্পকের্র ভাই ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের মাস্টাসের্র ছাত্র শরিফুল ইসলামের। শরিফুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিববাড়ি এলাকায় একটি বাসায় শাহেনার জন্য সাবলেটে থাকার ব্যবস্থা করেন। তার উপর নিভর্রশীলতা বাড়ে শাহেনার। এরপরই বিবর্ণ হতে শুরু করে তার স্বপ্ন।

২০০৯ সালের জুন মাসের একদিন পানির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শাহেনাকে অচেতন করে তার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে শরিফুল। সেই ছবি ও ভিডিও ক্লিপকে পুঁজি করে মেয়েটির সাথে প্রতারণা ও অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করে। শুধু শরিফুল নয়, তার দুই বন্ধুর সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা হয় শাহেনাকে। পরে আপত্তিকর কিছু ছবি ছড়িয়ে দেয়া হয় শাহেনার আত্মীয়-স্বজনের কাছে এবং অনুষদে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শরিফুলকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তবে এখনও তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত একাডেমিক সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপরের ঘটনা দুইটি কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। দেশের উচ্চশিক্ষার প্রধানতম প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের যৌন নিপীড়ন অতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিমাসেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির অভিযোগ আসছে। কোনো কোনো মাসে এ ধরনের দুই-তিন ডজন অভিযোগ আসে কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু কোনও প্রতিকার নেই। এ যেন এক বলদা সমাজ। ধিক এইসব নর পশুদের ।


তদন্ত কমিটিতে আটকে আছে ন্যায় বিচার

বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘটনাটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। সাময়িকভাবে মৃদু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। এরপর আর ঐ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় না। এমনকি অনেক কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনই তৈরি করে না। স্থায়ীভাবে একাডেমিক ও আইনি শাস্তি থেকে পার পেয়ে যান অভিযুক্তরা। আমি বিশ্বাস করি এইসব তদন্ত কমিটি গঠন প্রহসনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া। কারণ তদন্ত কিছুই হয় না। আর ন্যায় বিচার বঞ্চিত হন নির্যাতিতরা। পার পেয়ে যায় অভিযুক্তরা।

এ তো গেল সত্য গঠনার ইতিহাস।

তবে আরেকটা কথা উল্লেখ না করলেও নয়। কিছু কিছু সময় আবার ছাত্রীদের দিয়ে প্রভাবশালী মহল শিক্ষকদের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের লক্ষে
ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক দ্বন্ধের কারণে এ যৌন নিপীড়নের অভিযোগগুলো তৈরি করে থাকে। সেই বিষয়গুলো ও কিন্তু মাথায় রাখতে হবে।


তথ্য সংগৃহীত
লিঙ্ক
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×