এই তো সে দিনের কথা ভাবতে ভাবতে দীলিপের চেখে জল এসে যায়।মনে হয় একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না সেই ঘটনার কথা।ঘটনার পর থেকে সে নিজেকে অনেকটা বন্ধু হীন মনে করে ।কয়েক বন্ধু মিলে বৈশাখের বিকেলে কালিগন্জ বাজারে পাশদিয়ে চলে গেছে পানিউন্নায়ন বোডের পানির ক্যানেল তারি এক ধারে বসে আড্ডাটা জমেছিলো আমাদের । কিন্তু কিছুতেই দীলিপের মনটা বসছিলো না আড্ডায়।সে আমার দুর সম্পর্কে আত্মীয় আমি ঢাকায় থাকি বলে তার অনেক খবর জানি না। প্রায় দু বছর পর তার সাথে আমার দেখা।অনেক অনুরোধের পর সে আমাকে বলল তার জীবনের তিক্ত সেই বিভৎস ঘটনা টি। ১১ এপ্রিল ২০১৩ সেই দিন ছিল ছাত্র শিবীরের ডাকা হরতাল প্রতিটি হরতারের মত সে দিনও ছিলো কারিগন্জ বাজারের দোকান পাট বন্ধ । এরা সকাল ১১/১২ টার পর এমনিতেই হরতাল শিথীল করে তখন দোকান পাট ব্যাবসায়ীরা খুলে। কিন্তু ঐদিন এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যাবসায়ীর ছেলে এসেছেন মটর সাইকেলে দোকান খুলার জন্য কিন্তু তখনো তারা হরতাল চারিয়ে যাচ্ছিল।হরতাল সমথনকারী একজন এসে তাকে আটকে দিল যে মোটর সাইকেল নিয়ে বাজারে যাওয়া যাবে না । মটরসাইকেল আরহী বলল দেখ আমার দোকানটা তো রাস্তার সামনে এটুকু যেতে দিন আর আমি এখন দোকানও খুলব না।শুধু মটর সাইকেলটা ওখানে রাখব, আর হরতাল সমর্থকরা যেতে দেবে না এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দের সুত্রপাত ।এক্ পর্যায়ে হাতা হাতি লাঠালাঠি হয়ে গেল সে মুহুত্বে মটর সাইকেল আরহী অপমানিত হলেও পরে শক্তি শঞ্চয় করে এসে আবারও ধাওয়া পালটা ধাওয়া শুরু হল ।এবার শিবীর কর্মিরা পালিয়ে গেল মারামারী শেষ হল বাজার শান্ত হল । এর পর ব্যাবসায়ীরা দোকান পাঠ খুলল ।ঘটনার দুই ঘন্টা পর শিবীর কর্মিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের ৪/৫ শত লোকজন এনে হটাৎ আবার আক্রমন করল ঐ প্রভাবশালী ব্যাবসায়ীর দোকান, ভাংচুর হল, ব্যাসায়ী ছেলেটি তার বাবা ভাই সহ গুরুতর আহত হলো। এরপর শুরু হল হিন্দুদের দোকানে হামলার পালা । বেচে বেচে হিন্দুদের দোকান ভাঙ্গল, আহত করল, লুট করল মালামাল । বাজারে দীলিপের একটি মোবাইলের এবং মোবাইল সাভেসিং দোকান। ব্যাবসার পাশাপাশি সে অত্র ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্দোক্তা সে সুবাদে সে ইউনিয়নের সকল লোকজনকে চিনে এবং এদের সাথে ভাল সম্পর্ক রয়েছে । তার দোকানটিও বাদ পরল না এবং তাকেও লাঞ্চিত করল একটুকুও দ্বিধা করল না । দীলিপ মিশুক স্বভাবের । এই তো সে দিন হামলাকারী একজনের মেয়ের বিয়ে কাজি বয়স কম থাকায় বিয়ে রেজিট্রেরী করাবে না ।তার মেয়ে আবার আর এক ছেলের সাথে প্রমঘটিত ব্যাপারে জরিত থেকে অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার সমায় প্রতিবেশির হাতে ধরা পরলো ।মেয়ের বাবার মাথা কাটা যায় লজ্জায়, শালিশে বিয়ের কথা চুরান্ত হলেও কাজি বিয়ে পরাতে পারছিল না মেয়ের বয়স কম থাকার কারনে। কাজি বলে দিয়েছে মেয়ের বয়স না বাড়ালে এ বিয়ে তিনি দিতে পারবে না। উপায় একটাই তথ্যকেন্দ্র, এখান থেকে জন্মসনদ পত্রে বয়স বারিয়ে নিয়ে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নিতে হবে । এ রকম ঘটনা শুনার পর মুকুল রাত ১২ টার সমায় ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রে এসে সেই হামলাকারী লোকটির সমস্যা সমাধান করে দেন বিনা পয়সায় ।আর সেই কি না ভেংগে দিল তার দোকানের কম্পিউটার চেযার টেবিল ।একটুও দ্বিধা হল না তার ,বাজারে যাদের সাথে এক সঙ্গে ওঠা বসা চা খাওয়া হাসা হাসি তারাই এ ঘটনা ঘটাল ।চোখে জল নিয়ে কথা গুলো বলল দীলিপ সে আরও বলল ভাই যার সাথে ওদের সমস্যা সেও মুসলমান এবং শিবীরের লোকজনও তো মুসলমান ওখানে তো হিন্দুরা ঝগড়া করতে যায়নি তবে কেন হিন্দুরা হামলার শিকার কেন তাদের দোকান ভাঙ্গা হলো, লুট হলো । এর কি কোনও সৎ উত্তর আছে ,না নেই এর কোনও উত্তর দিতে পারবে না জামাত শিবীরের নেতারাও।যদি বলেন এরা আওয়ামিলীগ করে নৌকা মার্কায় ভোট দেয় আর এই আওয়ামীলিগ ক্ষমতায় আসলে যুদ্ধপরাধির বিচার হয় রাজনৈতীক ভাবে জামাতিরা কোনঠাসা হয় এ জন্য এই হামলা ।আমি সেই ভাই কে বলতে চাই বাংলাদেশে ৪% থেকে ৫% হিন্দু জনগোষ্টি মানুষ এদের একক ভোটে একজন মেম্বারও নির্বাচিত হয় না সেখানে একটি দল ক্ষমতায় গেলে কেন হিন্দুদের দয়ি করা হয়? আর এই হিন্দু জনগোষ্টির কিছু লোকতো বি,এন,পিও করে। জামাতিরা হিন্দুদের দলে টানার ব্যাবস্হা,হিন্দুদের প্রতি সন্মানজনক আচারন, সহনশীল এবং জামাতের গঠনতন্ত্রে সব ধর্মের মানুষকে জামাতের রাজনীতি করার সুযোগ রাখা হলে অবশ্যই হিন্দুরাও জামাত বা শিবীর করত।আপনারা নিজেদের দলে নিবেন না আবার অন্যদলে ভোট দিলে যে কোন উছিলায় তাদের ওপর চরাও হবেন এটা কি ধরনের রাজনীতি? সৃষ্টিকর্ত্তা পৃথীবীতে বহু ভাষা,বহু ধর্ম,বহু দেশ,বহু সংস্কৃতি এবং বহু বর্ণের মানুষ সৃষ্টি করেছেন তার মহীমা প্রকাশের জন্য। তার অপার মহীমা বলে শেষ করা যাবে না।জামাতিরা যেমন আল্লাহর এবাদত করেন তেমনি অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও নিয়ম অনুযয়ি তারা তাদের প্রভুর উপসনা করে এটাই সৃস্টির বিধান।তাই বলে এদের উপসনালয় ভাঙ্গা,প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলা এদের কে নাস্তিক বলা,মোটেও কোন ধর্মের বিধান হতে পারে না।
এদিকে হিন্দুদের দোকান ভাঙ্গচুরের প্রতিবাদে জলঢাকা পুজা উদযাপন পরিশদ এবং কালিগন্জের স্হানীয় হিন্দুরা মিলে সেখানে মানব বন্ধন করে এর তীব্র প্রতিবাদ করল । এখানকার স্হানীয় চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম কবির সাহেব তার দীর্ঘ বক্তৃতায় বললেন হিন্দু ভাইয়েরা আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন আপনাদের সাথে আমি আছি, জামাতের যে কোন ষরযন্ত্র আমরা সবাই মিলে প্রতিহত করব।তিনি আরও বলেন কে বলে আপনারা সংখ্যালঘু আপনারাই হচ্ছেন সংখ্যাগুরু দলের লোক। সংখ্যলঘু তারাই যাদেরকে এদেশের মানুষ ভোট দেয় না যারা জোট বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে ৪% থেকে ৫% এর বেশি ভোট পান না তারাই হচ্ছেন এ দেশের আসল সংখ্যালঘু ।তার এ বক্তব্য রাজনৈতীক,হিন্দুদের ভোট আয়ত্বে আনার একটা কৈশল মাত্র ।সমাবেশে উপস্হিত হিন্দুদের জোরালো করতালি দিয়ে চেয়ারম্যান কে দিগুন উৎসাহ যোগায়, যদিও তিনি এখন পযুন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাবসায়ীদেরকে ক্ষতিপুরনের কোন সাহায্য প্রদান করিতে পারেন নাই।অথচ তিনি একজন কোটিপতি মানুষ। চারিদিকে শুধু রাজনীতি আর রাজনীতি এক পক্ষ আঘাত হানছে আর একপক্ষ এটাকে ব্যবহার করে শস্তা প্রসংসা কুরাতে ব্যাস্ত যদিও সংখ্যালঘু হিন্দুরা সব কিছু এখন বুঝতে পারে। চারিদিকের পরিবেশ দেখে মনে হয় সংখ্যালঘুরা বর্তমানে রাজনীতির বলির পাঠা।