somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘালয়ের বালূ পাথরের নীচে সুনামগঞ্জের ৬ গ্রাম

১৫ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রকৃতির রুদ্ররোষের শিকার হয়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার তিনটি আদিবাসী গ্রামসহ ছয়টি গ্রাম। টানা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে মেঘালয় পাহাড়ধসে নেমে আসা বালু ও পাথরের নিচে অস্তিত্ব হারিয়েছে ফসলি জমি আর ঘরবাড়ি। বালু ও পাথরের চাপে ভেঙে গেছে পাঁচটি বসতবাড়ি। ভরাট হয়ে গেছে পাঁচটি পুকুর। ছয়টি গ্রামের দুটি পরিবার, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পাহাড়ধসে চাপা পড়ার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। আতঙ্কিত লোকজন বসতবাড়ির আশপাশে বেড়া তুলে বালু ও পাথরের স্রোত এড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সীমান্ত এলাকায় ভারত অপরিকল্পিতভাবে ইউরেনিয়াম খনি প্রকল্প চালু করায় এই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর ছড়াগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পাহাড়ধসে নেমে আসা বালু আর পাথরের স্রোত সরাসরি আঘাত হানছে ফসলি জমি ও বাড়িঘরগুলোতে।
সরেজমিনে গতকাল বিকেলে বড়ছড়া, রজনী লাইন, চানপুর, কড়ইগড়া, রাজাই ও পাহাড়তলি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ ফসলি জমি বালু ও পাথরে ঢাকা পড়ে গেছে। বসতঘরের সামনে বালু ও পাথরের স্তূপ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে স্থানীয় লোকজন বালু-পাথরধস থেকে বসতঘর রক্ষা করতে চারদিকে বালুর বস্তা ফেলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার রাত থেকে এলাকার বড়ছড়া, বুরুঙ্গাছড়া, ভাঙ্গাছড়া, পাগলাছড়া ও নয়াছড়া দিয়ে মেঘালয় পাহাড়ের কালাপাহাড় এলাকা থেকে বালু ও পাথর নেমে আসছে। অব্যাহত পাহাড়ধসে বুধবার রাতে নেমে আসা বালু ও পাথরের স্তূপে ভেঙে পড়েছে রজনী লাইন গ্রামের কুলছুম বিবি, আব্দুল মান্নান, চানপুর গ্রামের সিরাজ মিয়া, আফির উদ্দিন ও মনা মিয়ার বসতঘর। ঘরের খুঁটি ও বেড়ার অর্ধেকের বেশি চলে গেছে ধেয়ে আসা বালুর নিচে। রজনী লাইন গ্রামের আম্বিয়া বেগম, শাহজাহান, হেকমত আলীসহ আরো প্রায় ১০ জনের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিনমজুর এসব পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই ঘরগুলো ভেঙে যাওয়ায় মানুষগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব পরিবারের বিছানাপত্র, বাসনকোসন, কাপড়চোপড় সব ঢাকা পড়েছে বালু-পাথরে।
পাহাড়ধসে রজনী লাইন প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও চানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। আশপাশের লোকজন পাহাড়ধসে বালু-পাথর চাপার ভয়ে রাতে বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছে। অনেকে ঘরবাড়ি রক্ষা করতে বসতঘরের চারদিকে বেড়া দিচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, ২০০৮ সালের ১৩ থেকে ২১ আগস্ট টানা বর্ষণে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ধসের কারণে এই এলাকায় প্রথম বালু আর পাথরের ঢল নেমে আসে। ওই বছর চানপুর, রজনী লাইন ও পাহাড়তলি গ্রামের ৪০০ একর কৃষিজমি বালিতে ভরাট হয়ে যায়। প্রায় ২০০ পরিবার কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। এর পর থেকে প্রতিবছরই পাহাড়ধসে এখানকার বসতঘর ও ফসলি জমি ভরাটের ঘটনা ঘটে চলেছে। গত এক সপ্তাহে এলাকার প্রায় ৫০ একর জমি বালু-পাথরে চাপা পড়ে গেছে।

মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় ভারত সরকার অপরিকল্পিতভাবে ইউরেনিয়াম খনি প্রকল্প চালু করায় এই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করা হয় ।

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হক বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবর্ষণে পাহাড়ধসের ঘটনায় চার বছর ধরে একে একে উদ্বাস্তু হচ্ছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত এলাকার মানুষ। পাহাড়ধসে প্রতিনিয়ত বসতবাড়ি, ফসলি জমি, হাওর, জলাভূমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এলাকার মানুষ।' তিনি বলেন, 'এই মানুষগুলোকে রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ জরুরি। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে আন্তরাষ্ট্রীয় সংলাপ দরকার। কারণ তাদের অপরিকল্পিত পদক্ষেপে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পাহাড়ধসের ঘটনা আমাদের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।'
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, গত চার দিনের ঢলে বসতবাড়ি হারানো লোকজনকে টিন ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দ্রুত পাহাড়ি ছড়াগুলো খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমস্যাটি পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষায় শিগগিরই বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
সূত্র :
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:৫৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×