somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পলক না ফেলিতে হারাইয়া ফেলি চকিতে

১৪ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোজ সকালে মোবাইলের অ্যালার্মটা শুনে হড়মুড় করে উঠে পড়ি। আজও এর ব্যতিক্রম হল না। পার্থক্য শুধু, আজ এত সকালে উঠবার প্রয়োজন ছিল না। সুন্দর কি যেন একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। অনেক কষ্টার্জিত ছুটির শুরু আজ থেকেই, এবং ঘুম ছাড়া আর কোন কিছুই লিস্টে নেই। প্রতি রাতের অভ্যাস মত অ্যালার্মটা গত রাতে সেট করাতেই এই বিপত্তি। একরাশ বিরক্তি নিয়ে কিছুক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার নিজেকে ছুড়ে ফেললাম নরম বালিশটার ওপর। আজ কোনভাবেই ১১ টার আগে চোখ মেলব না। পর্দার ফাঁক দিয়ে সকালের নরম রোদ ঘরে ঢুকে পড়েছে। মশারীর ছোট ছোট ছিদ্র গুলো সে আলোর কল্যাণে বেশ কিছু বাহারি নকশার জন্ম দিচ্ছে। হুমায়ুন চাচা হলে লিখতেন, “জ্যোৎস্নার ফুল”; থুক্কু সূর্যের আলো তো জ্যোৎস্না নয়, “রবির ফুল” লিখতেন বোধ করি। চোখ বন্ধ করে মটকা মেরে পরে থাকলাম, বৃথাই এপাশ ওপাশ করলাম কিছুক্ষণ। ঘুম বাবাজি অ্যালার্মের সাথে কাট মেরেছেন। কি আর করা, আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে পড়লাম। আমার ১০ ফুট বাই ১০ ফুট রুম টার প্রতিটি ইঞ্চি আমার “গোছানো” স্বভাবের মূর্তিমান সাক্ষী হয়ে ভেংচি কাটছে। প্রধান কারন, আমার বউ ঢাকায়। আমি নিজেকে একটা রুমে নির্বাসন দিয়ে রেখেছি গত সাতদিন হল। ঢুলতে ঢুলতে ল্যাপটপের বাটন টা অন করলাম। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে হবে, “ঘুম ভাংসে...:P”; দেখি কয়টা লাইক আসে। ফেসবুকে লগইন করে ডান পাশের কলামটায় চোখ আঁটকে গেল... আজ মাহমুদ স্যারের জন্মদিন।

একটা ধাক্কা খেলাম, আমি যে স্যার কেই স্বপ্নে দেখছিলাম। হাসছিলেন তিনি, যেমন করে হাসতেন সবসময়। আমি স্বপ্নে তাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, আর বলছিলাম, আপনি ফিরে এসেছেন, খুব ভালো লাগছে...খুব ভালো লাগছে...


মাহমুদুল হক...বিমান বাহিনী একাডেমীতে ফার্স্ট টার্ম হিসেবে যখন যোগ দিলাম, স্যার তখন ফাইনাল টার্ম। স্যারের ‘কভারঅল’ গায়ে চড়িয়ে প্রথম বারের মত বৈমানিক হবার স্বপ্ন দেখার শুরু। স্যার সেদিন একটা ছবি তুলে দিয়েছিলেন। সেটাই সবাইকে দেখাতাম, একদিন এই জলপাই সবুজ বৈমানিকের পোশাকটি আমার নিজেরও হবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। কঠিন প্রশিক্ষনে যখন হাঁপিয়ে উঠছিলাম, মাহমুদ স্যার ডেকে বললেন, “Have patience, within a blink of an eye you will be standing, where I am standing” । সত্যি বলেছিলেন স্যার। আপনার মত আমিও আমার ফার্স্ট টার্ম কে একই কথা বলেছিলাম। সময় সত্যি অনেক দ্রুত গড়ায়।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে অনেক চিঠি আসত স্যারের কাছে। দীর্ঘ দিনের প্রনয়, অতঃপর বিয়ে। চিটাগং এ স্যার আমাদের পাশের বিল্ডিঙটায় থাকতেন। কিছুদিনেই দুজন থেকে তিনজনে, ছোট্ট রাইয়ানের আবির্ভাব।

সুখ পাখিটার বসবাস বোধহয় এই সংসারটিতে ছিল। সে আলো ছড়াতও চারপাশে। স্মিত হাসির সুবাস স্পর্শ করত আশেপাশের সবাইকে। ছোট একটি চারাগাছ, হয়ত মহিরুহ হত।
সব স্তব্ধ হল হটাত। ২০ ডিসেম্বর ২০১০। জলপাই সবুজ পোশাকেই সমাধি হল দুটি সম্ভাবনাময় জীবনের। মাহমুদ স্যার আর আশরাফ স্যার। যে বিমানটি দিয়ে শুরু করেছিলেন বৈমানিক জীবন, সেটিতেই সমাপ্তি ঘটলো পথ চলার। একটা সুন্দর গল্প লেখা হচ্ছিল, মাঝপথে লেখকের কালি ফুরল বোধ করি।

স্যারের ফেসবুক প্রোফাইলে মাঝে মাঝে ঢুঁ দেই। অনেক প্রিয়জন অনেক কিছু লিখে চলেছেন আজ অবধি। আমি ভাবি, কি আর লিখব, স্যার যা বলেছেন, সত্যি বলেছেন, “Have patience, within a blink of an eye……you will be standing, where I am standing”






০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×