বন্ধুর মুখ থেকে যখন শুনলাম সে ওর মাকে নিজের একটা কিডনী দিচ্ছে। প্রথমেই আমার এই কথাটাই মনে হয়েছে।
এক বন্ধুর মুখে শুনলাম নুরের মা খুব অসুস্থ । গেলাম নুরের রুমে। জিজ্ঞেস করলাম ওর মার ব্যপারে।
সব কিছু বলল। ওর মার দুইটা কিডনীই অকেজো হয়ে গেছে। অনেক টাকা লাগবে ট্রান্সপ্লান্ট করতে। কিছু জমি ছিল বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছু টাকা আসবে।
বললাম, কিডনী কই পাবি?? কিডনী কি পাইছিস?
বলল, আমার কিডনী টেষ্ট করা হচ্ছে।
বললাম, মানে কি? তুই কিডনী দিচ্ছিস??
বলল, হুম।
আমার মাথাটা ভো করে ঘুরে উঠল। কি বলব বুঝতে পারলাম না।
আমি কি পারতাম মাকে নিজের একটা কিডনী দিতে?? আমি কি অত সহজে এ রকমভাবে বলতে পারতাম???
আমি ওর জায়গায় হলে হয়ত অন্য কারো কিডনী ম্যানেজ করার চেষ্টা করতাম। যত টাকা লাগুক। কিংবা হয়ত নিজেরটা দিতে পারতাম।
সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের হলে কিছু টাকা জমা আছে জামানত হিসেবে। ওই টাকা আমরা ওকে দিয়ে দিব।
গেলাম প্রভোষ্ট স্যারের কাছে। তিনি রাজি হলেন। হেডস্যারও অন্যন্য ফান্ড থেকে ব্যবস্থা করার কথা বললেন। এবার গেলাম ভিসি স্যারের কাছে। সবকিছু বলা হল।
আশ্চর্যজনকভাবে তিনি মুখের উপর না করে দিলেন। জামানতের টাকা নাকি এভাবে দেয়ার নিয়ম নাই। অন্যন্য ফান্ডের কথা বলা হলে তিনি বললেন, তোমরা কথা বলে দেখ। এ ব্যপারে আমি কিছু করতে পারব না।
সেকেন্ডের মধ্যেই সবার মুখ কালো হয়ে গেল। পা গুলো সব চেয়ে ভারি মনে হল সে সময়। পা যেন আর হাটতে চায় না।
পরে বুঝলাম কেন ভিসি মুখের উপর না করে দিল। কিছু দিন আগে যুবলীগের কর্মীরা ভিসির রুম ভাংচুর করে পলিটিকাল ব্যপারে। আমরা কেন এর প্রতিবাদ অথবা বিক্ষোভ করলাম সেটাই ছিল তার রাগ।
আমরা এখানে কি করতে পারি?? আমরা সাধারন ছাত্ররা কার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করবো??
আমরা ছাত্র মানুষ। আমরা হয়ত ১০০ বা ২০০ টাকা করে দিতে পারি। এতে কতটুকুই বা সহযোগিতা হবে। অনেকে হয়ত তাও দিতে পারবে না।
আর একটা মাত্র পরীক্ষা বাকি। তাহলেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ। পরীক্ষা শেষ হলেই যে যারমত বাড়ীতে ছুটে যাব মায়ের কাছে।
আমার বন্ধুও যাবে। তবে বাড়ীতে নয়, হাসপাতালে।