somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কান্তজিউ মন্দির-দিনাজপুরঃ স্থাপত্য শৈলী ও পোড়ামাটির ফলকে উৎকীর্ণ পৌরানিক কাহিনী (পর্ব-০৮)

১১ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টেরাকোটায় রামায়ণের চিত্রায়নঃ

মন্দিরের দক্ষিণ মুখের ডান দিক থেকে রামের বিভিন্ন ঘটনাবলীর সূত্রপাত ঘটেছে। সংস্কৃত মহাকাব্য রামায়ণে রামের জীবন ও বীরত্ব সূচক কার্যাবলীর বিবরণ মুদ্রিত হয়েছে। মহর্ষি বাল্মিকি এ মহাকাব্যের রচয়িতা (ফলক চিত্র-১১)।


চিত্র: রামায়নের রচয়িতা বাল্মিকি

রাম হলো বিষ্ণুর সপ্তম বাহ্যিক রূপ। বিষ্ণু অসুর রাবণকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাম হিসেবে জন্ম নেন। রাম ছিলেন অযোদ্ধরাজ দশরথের পুত্র। রাজা দশরথের শান্ত নামে একটি কন্যা সন্তান ছিল। তাঁর অনেক স্ত্রীর মধ্যে তিনজন ছিলেন প্রধান রাণী: কৌশল্য, কাকৈ ও সুমিত্রা। কিন্তু তাদের কোন পুত্র সন্তান ছিল না, যে অযোদ্ধা রাজ্যের উত্তরাধিকারী হবে। একটি পুরোহিত পরিবার রাজাকে পুত্রকামেষ্ঠি ধর্মীয় যজ্ঞ পালনের পরামর্শ দেন।৩২ ফলে দশরথ চার পুত্র সন্তানের জনক হন। রাম ছিলেন রাণী কৌশিল্যের গর্ভে জন্মলাভকারী পুত্র সন্তান। রাণী কাকৈর সন্তান ছিলেন ভরত ও লক্ষণ এবং সুমিত্রার গর্ভে জন্ম নেন শতরুঘ্নো।
(Nivedita and coomaraswamy 1973)

দশরথের চারপুত্র শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠতে থাকেন। শিক্ষা সমাপান্তে তাদের সততা ও সাহসিকতা তাদেরকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে আসতে সাহায্য করে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পরে তারা নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। এ সময়ে দুটি রাস মরিচি ও সুবাহু হিন্দু বলি যজ্ঞে বিভিন্নভাবে বাধা বিপত্তির সৃষ্টি করতে থাকে। সে সময় একজন রাসী তারকা ও ধর্মীয় বলি অনুষ্ঠানে বাধা দিতে থাকে। এ সময় ঋষি বিশ্বমিত্র বলিদান অনুষ্ঠানকে রক্ষা করতে রাজা দশরথের সাহায্য কামনা করেন। বিশ্বমিত্র ইতোমধ্যে রামের ভেতরে অতি মানবীয় শক্তির বহি:প্রকাশ দেখতে পান এবং তিনি তাঁকে বিষ্ণুর মানবীয় রূপ হিসেবে কল্পনা করতে থাকেন। বিশ্বমিত্রের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে দশরথ অশুভ চক্রকে নির্মূল করতে তাঁর দু’পুত্র রাম ও লক্ষণকে ব্রাহ্মঋষি মিত্রের সিদ্ধাশ্রমে প্রেরণ করেন। অপদেবতাদের হত্যার পর বিশ্বমিত্র রাম ও লণকে অন্যান্য ঋষি ও আশ্রমের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় তাঁরা গৌতম ঋষির আশ্রম পরিদর্শন করেন। সেখানে পাথর স্পর্শ করার মাধ্যমে পরম জ্ঞানী গৌতমের স্ত্রী আহিল্লাকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করেন (ফলক চিত্র-১২)।


চিত্র: রামের পাথর স্পর্শে আহিল্লার আত্নপ্রকাশ

কথিত আছে যে, ব্রাহ্মা আহিল্লাকে সৃষ্টি করে মহাজ্ঞানী গৌতমকে উপহার স্বরূপ দান করেন। এদিকে ইন্দ্র তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে সতীত্বহানি করার চেষ্টা করেন। একদা মহাজ্ঞানী গৌতম যখন তাঁর নিজ গৃহ থেকে সকালের প্রথম ভাগে পবিত্রতা অর্জন ও প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন, তখন ইন্দ্র গৌতমের রূপ ধরে আহিল্লাকে সতীত্বহানি করেন। এটা এ কারণেই সম্ভব হয় যে, মাঝ রাতে চন্দ্রের অতি উজ্জল আলোকের কারণে গৌতম সকাল হয়ে গেছে ভেবে সকালের ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে তাঁর গৃহ ত্যাগ করেন। গৌতম গৃহে ফিরে আসলে সে ও আহিল্লা দুজনেই তাদের কৃত ভুল বুঝতে পারেন। কোন ব্যাখ্যা না শুনেই গৌতম আহিল্লাকে পাথরে রূপান্তরিত করে দেন। আহিল্লা পরে নিজেকে নির্দোষ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা চালান। গৌতম তাঁর আবেদন পুনর্বিবেচনা করে তাঁর প্রতি দয়া পরবশ হন। তিনি ভাবতে থাকেন যে, দশরথের পুত্র রামের পাথরে পদস্পর্শের মাধ্যমে আহিল্লা আবার পুনর্জীবন লাভ করবে। যখন রাম অপদেবতাদের ধ্বংসসাধনে ব্যতিব্যস্ত, তখন অসাবধানতাবশত: তাঁর পা পাথর স্পর্শ করে এবং আহিল্লা পুনরায় মানুষের জীবন পায়। পরে তিনি গৌতমের স্ত্রী হিসেবে পুনরায় দিনাতিপাত করতে থাকেন।৩৩

আহিল্লাকে মুক্ত করার পর রাম, লক্ষণ ও বিশ্বমিত্র জনক রাজার দরবারে গমন করেন। তিনি ছিলেন মিথিলার রাজা। সীতা ছিলেন রাজার কন্যা। সীতা পিতৃসূত্রে জনকী নামেও পরিচিত ছিলেন। এ সময়ে দরবারে সীতার বিয়ের জন্য বিভিন্ন পাত্রের আগমন ঘটে। তাঁরা সেখানে গমন করেন। ইতোমধ্যে দরবারে বিভিন্ন রাজ্যের অসংখ্য রাজা ও যুবরাজগণ আর্চারী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য একত্রিত হন। যে ব্যক্তি শিবের ধনুক ভাঙ্গতে পারবে, সে সীতাকে বিয়ে করতে পারবে বলে ঘোষণা করা হয়। রাম একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে শিবের ধনুক ভাঙ্গতে সম হন। এভাবে রাম সীতাকে বিয়ে করেন (ফলক চিত্র-১৩)


চিত্র: রামের বিয়ের অনুষ্ঠান-১


চিত্র: রামের বিয়ের অনুষ্ঠান-২


চিত্র: রামের বিয়ের অনুষ্ঠান-৩

এবং লক্ষণ সীতার বোন উর্মিলাকে বিয়ে করেন। ভরত ও শতরূঘন সীতার চাচাত বোন মনদভি ও শ্র“তকির্তিকে বিয়ে করেন। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে তারা নতুন চারজন কনে নিয়ে অযোদ্ধায় প্রত্যাবর্তন করেন।

রাম দশরথের পুত্রদের মধ্যে ছিলেন জ্যৈষ্ঠ ও সর্বজন শ্রদ্ধেয়। অযোদ্ধার জনগণ তাকে প্রচুর ভালবাসত ও পছন্দ করত। দশরথ ভাবেন যে, রাম সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে যোগ্য। কিন্তু রাণী কাকৈ, রামের সৎমা, চায় যে, তাকে চৌদ্ধ বছরের জন্য বনবাসে পাঠানো হোক এবং তার পুত্র ভরতকে অযোদ্ধার সিংহাসন দেওয়া হোক। একদা দশরথ ও রাসদের মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং এতে দশরথ মারাত্মকভাবে আহত হন এবং রাণী কাকৈ এর সুবাদে রক্ষা পান। রাণী তাকে নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে রাখেন এবং সেবা শশ্র“ষা করেন। দশরথ রাণীর দুটি আবেদন মঞ্জুর করে নেন। তিনি রাজার এ বর সংরণ করে রাখেন। শেষ পর্যন্ত রাজা প্রিয় রামকে বনবাসে পাঠাতে বাধ্য হন। সীতা ও লক্ষণ বনে রামের সঙ্গী হিসেবে থাকেন। অযোদ্ধার সমস্ত পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং জনগণ রামের প্রস্থানে ব্যথিত হন। দশরথ দুঃখ শোকে অবেশেষে ভরতের অনুকূলে রাজ্য ত্যাগ করে মৃত্যু বরণ করেন। পুত্রের জন্য দশরথের দুর্দশাকে নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। দশরথ একদিন বনে গেলেন। তিনি ছিলেন দক্ষ শিকারী এবং শুধুমাত্র শব্দ শুনেই তীর ছুঁড়ে শিকার করতে পারতেন। একদিন অন্ধকার রাতে তিনি প্রাণী বধ করতে একটি লেকের পাশে লুকিয়ে ছিলেন। এ সময় লেকের পাশ দিয়ে শ্রাবণ নামে একটি বালক তার পিতা-মাতার সাথে হেঁটে যাচিছল। তার পিতা-মাতা ছিল অন্ধ। শ্রাবণ ছিল তার অন্ধ-পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। তারা সবাই মিলে পবিত্র স্থান কাশী দর্শনে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে অন্ধ মাতা-পিতা তৃষ্ণার্ত হলে বালকটি লেক থেকে পানি আনতে যায়। পাত্রে পানি ভরার সময় মনে হচ্ছিল কোন বন্য প্রাণী পানি পান করছে। দশরথ এ শব্দ শুনে তীর ছুঁড়ে বালক শ্রাবণকে আহত করেন। দশরথ কাছে গিয়ে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখেন। এ সময় সে দশরথকে অনুরোধ করে তার মাতা-পিতার নিকট পানি পৌঁছে দিতে। দশরথ পানি দিতে তাদের নিকট গমন করেন। অন্ধ দু’জন তাদের সন্তানের খোঁজ করলে দশরথ সত্য ঘটনা বলে দেন। তারা বেদনাহত হন এবং দশরথকে অভিশাপ দেন যে, সে তাঁর সন্তানকে স্মরণ করতে করতে মরবে। দশরথের মৃত্যুর পর ভরত বনে তাঁর বড়ভাইকে অনুসন্ধান করে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রাম পিতার আদেশ মান্য করতে ছিল বদ্ধ পরিকর। তিনি ১৪ বছর যাবত বনে অবস্থান করেন এবং ভরত অযোদ্ধা গিয়ে রামের নামে শাসন পরিচালনা করতে থাকেন।

রাম, সীতা ও লক্ষণ বনে যাযাবর জীন যাপন করতে থাকেন। তারা খড়-কুটোর তৈরি গৃহে বাস করে; ফলমুল ও লতা পাতা খেয়ে জীবন ধারন করে। জঙ্গলে তাদের জীবন ধারণ করা ছিল ভয়ানক রকম কঠিন। বন-জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে তারা এক পর্যায়ে গদভরী নদীর নিকটে এসে উপস্থিত হন। এ সময় সুরপনখ নামে এক রাক্ষসী রামকে দেখে তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু রাম তাকে প্রত্যাখান করলে সে সীতাকে আক্রমণ করে। লক্ষণ সীতাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে এবং রাক্ষসীর নাক কেটে দেন (ফলক চিত্র-১৪)।


চিত্র:লক্ষণ কর্তৃক শূরপোন্খোর নাক কর্তন

রাক্ষসী ফিরে গিয়ে প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে তার দুই ভাইকে সৈন্যবাহিনী সমেত প্রেরণ করেন। কিন্তু যুদ্ধে তার দুই ভাই-ই প্রাণ হারায়। এ পর্যায়ে রাক্ষসী তার বড় ভাই রাবণের নিকট প্রতিশোধ নিতে আবেদন জানায়। পাশাপাশি রাক্ষসী সীতাকে রাবণের নিকট সুন্দরী, আকর্ষণীয়া ও আবেদনময়ী হিসেবে উপস্থাপন করে। রাক্ষসী তাকে তাঁর বিয়ে করতে পরামর্শ দেয়। রাবণ সীতাকে অপহরণের ফন্দি আঁটে। তার এ পরিকল্পনাকে সফল করতে সে রাক্ষসী মরিচির নিকট থেকে সাহায্যের আশা করেন এবং সে তাতে সম্মতিও দেয়। মরিচি একটি সোনালী হরিণের আকার ধারণ করে, সীতা হরিণটিকে দেখে তা বধের জন্য রামকে অনুরোধ জানান। রাম হরিণটিকে বধ করতে বের হয়ে পড়েন। এটি তাকে তাঁদের বাসস্থান থেকে বেশ দূরে গভীর জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায়। সে হরিণটিকে হত্যা করে। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে সে রামের কণ্ঠের অনুকরণে লক্ষণের সাহায্য চেয়ে তাঁকে (রামকে) রক্ষার জন্য চিৎকার দিয়ে ওঠে। সীতা রামের কণ্ঠ শুনে লক্ষণকে বনের ভেতরে পাঠান। যাবার আগে সীতাকে রক্ষার জন্য লক্ষণ তাদের ঘরের চারদিকে একটি গোপন রেখা অংকন করে দিয়ে যান এবং তাকে এ রেখা অতিক্রমের ব্যাপারে নিষেধ করা হয়। লক্ষণ রামকে খুঁজতে বের হলে রাবণ ব্রহ্মভিতু হিসেবে সীতার নিকট আগমণ করে। সীতা তাকে খাবার প্রদানের সময় নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করে এবং তাকে অপহরণের সুযোগ করে দেয়। রাবণ কর্তৃক অপহৃত হওয়ার পর পথিমধ্যে সীতা জটায়ু নামক একটি ঈগলের নিকট তাঁকে রক্ষার প্রার্থনা করেন। জটায়ু রাবণের সাথে যুদ্ধ করে এবং আহত হয় (ফলক চিত্র-১৫)।


চিত্র: সীতাকে রাবন অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে


চিত্র: জটায়ু সীতার অপহরণ ঠেকাতে সপ্রচেষ্ট

রাম ও লক্ষণ ফিরে এসে সীতাকে খুঁজে পায় না। রাম নদী, পাহাড়, ফুল, প্রাণী, পাখি প্রভৃতিকে সীতার অবস্থান জানতে প্রশ্ন করেন। কিন্তু কেউ কোন উত্তর দেয় না। আহত জটায়ু পাখি মৃত্যুর পূর্বে তাদেরকে রাবণ কর্তৃক সীতাকে অপহরণের খবর প্রদান করে। তারা সীতার অনুসন্ধানে বের হয়। পথিমধ্যে তারা এক অপদেবতার দেহের মধ্যে কবন্ধ নামক এক শুভ আত্মার বন্দীত্ব দেখতে পান। রাম তাকে হত্যা করেন এবং কবন্ধের আত্মাকে মুক্ত করেন। কৃতজ্ঞ কবন্ধ কিশকিঞ্জের নির্বাসিত বানর রাজা সুগরিভের সাহায্য প্রাপ্তির ব্যাপারে রামকে তথ্য প্রদান করেন। রাম বিশ্বমুখ পাহাড়ে তার দেখা পান এবং সাহায্যের আবেদন জানান। বানর রাজা ইতোমধ্যে কিশকিন্ধ হতে বিতাড়িত হয়েছে এবংতার নিষ্ঠুর ভ্রাতা বলি তার স্ত্রী তারাকে ছিনিয়ে নিয়েছে।৩৪ রাম ও সুগরিভ প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে একে অপরকে সাহায্যের প্রতিশ্র“তি দেন। সুগরিভ দেখল যুবক ও বলিষ্ঠ রামের মাধ্যমে বলিকে পরাজিত করা সম্ভব, যদিও বলি ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী। এজন্য রামের শক্তি পরীক্ষার জন্য সুগরিভ তাকে সাতটি তালগাছকে একটি মাত্র তীর দিয়ে পতিত করতে নির্দেশ দেন (ফলকচিত্র-১৬)


চিত্র: রাম ৭ টি তালগাছের দিকে তীর নিশানা করে আছে এবং পাশে লক্ষণ দাড়িয়ে

এবং তিনি অতি দক্ষতার সাথে তা সম্পন্ন করেন। এরপরে রাম ও লক্ষণ বলিকে পরাজিত করেন এবং সুগরিভকে তার রাজ্য ও স্ত্রী ফিরিয়ে দেন। এ পর্যায়ে বানর রাজা চারটি বানরকে পৃথিবীর চারদিকে সীতাকে খুঁজে বের করতে পাঠায়। হনুমান রামের আংটি সহ বের হয়, যাতে সে নিজেকে রামের শুভাকাংখী হিসেবে পরিচয় দিতে পারে। হনুমান রাবণের লংকার অশোকবটিকায় সীতাকে আবিষ্কার করে। সে তাকে রামের আংটি দেখায়। সীতা তাকে বিশ্বাস করে এবং তাঁর চুলের একটি জুয়েল হনুমানের নিকট প্রেরণ করেন। অশোকবটিকা পরিত্যাগের পূর্বে হনুমান তরুবিথীকা ধ্বংস করে। সে লংকায় আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পাশাপাশি নগরের প্রতির ও দূর্গব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা নেয়। সে ফিরে এসে রামকে সীতা ও নগরের ব্যাপারে তথ্য প্রদান করে। এ সংবাদ পেয়ে রাম ও সুগরিভ একদল বানরের সেনাবাহিনী নিয়ে দক্ষিণে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু সাগরপ্রান্তে তাদের যাত্রা থেমে যায়। রাম সাগরের নিকট লংকা পৌঁছানোর পথের অনুসন্ধান দিতে বলে প্রার্থনা করেন। সাগর প্রত্যুত্তরে বলল যে, আপনার সৈন্যবাহিনীতে বিশ্বকর্মের পুত্র নলা নামের একটি বানর আছে, সাগরের উপর সেতু নির্মাণে সে অত্যন্ত দক্ষ, সে খরস্রোতা পানির উপর দিয়েও যাতায়াত করতে পারে। ফলে সে পানিতে কাঠ, পাথর প্রভৃতি নিপে শুরু করে। পাঁচ দিনের মধ্যে একটি সেতু নির্মিত হয়ে যায়। রাম ও লক্ষণ সুগরিভ, আংদো, জমভুবন্ত, হনুমান এবং বানর সেনাবাহিনীর সাথে সাগর অতিক্রম করেন। লংকায় রাম ও রাবণের মধ্যে এক বিরাট যুদ্ধ সংঘটিত হয় (ফলক চিত্র ১৭)।


চিত্র: রাম-রাবণের মধ্যকার যুদ্ধ-১



চিত্র: রাম-রাবণের মধ্যকার যুদ্ধ-২

রাবণের অন্যতম সহযোগী কুম্ভ, নিকুম্ভ, মেঘনদ, রাবণের পুত্র, বিভীষণ ছাড়া রাবণের সকল ভাই এবং তার আর্মী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। রাম রাবণ ও তার আর্মীকে ধ্বংস করেন এবং সীতাকে মুক্ত করেন। যুদ্ধের পর সীতা তার সতীত্বের বিশুদ্ধতার প্রমাণ দেন অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণের মাধ্যমে। এরপরে তারা সবাই আবার অযোদ্ধাতে ফিরে আসেন।

তথ্য নির্দেশনা:

৩২.
Hoque, M.M et al, " Kantajee Temple An Outstanding Monument of Late Madieval Bengal ", publication Dept. of Drik, Dkaha, 2005, P. 73

৩৩.
Saletore, R. M. ÒEncyclopedia of Indian CultureÓ, Vol-1, New Delhi- sterling publishers pvt. Lt. 1989, P. 29. Hoque, M. M et al. Ibid. P. 74.

৩৪.
Knappert, Jan. "Indian Mythology: An Encyclopedia of myth and Legend", New Delhi: Harper Collins publishers, India, 1992, pp. 205-206.
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×