somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাজি

১০ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক

-তুমি কি সত্যি আমাকে দেখা দিবে না?
-দেখবে,দেখবে,সবর করো। একদিন ঠিকই দেখা পেয়ে যাবে। কথায় আছে না, সবুরে মেওয়া ফলে...
-হুম্‌ম্‌! কথায় আছে কিন্তু আমি বাস্তবিক প্রয়োগ চাচ্ছিলাম
-আগে আমরা আর ক’টা দিন না হয় রূপকথা আর আবেগের রাজ্যে ঘুরে বেড়ায়; তারপর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তুমি না আমার লক্ষ্মী! জা’ন!!
-আমার উথলা মন তো আর মানে না। প্লিজ...প্লিজ...প্লিজ...

কথার রেশ কাটতে না কাটতে কল কেটে যায়। রুপম আবারো সবুজ বাটন চাপে তাসুর নম্বরে। নেটওয়ার্ক নামক চক্রের বেড়াজালে পড়ে সে শুনতে পায়-‘এ মুহূর্তে...’। রুপমের সামনে হাজির হয় আরও একটি নির্ঘুম রাত। সে অবিরত কল করতেই থাকে, ক্লান্তিহীন। বিরক্তির লেশমাত্রও সেখানে উপস্থিত থাকে না। অপর পাশে মরুভূমির মতন নিস্তব্ধতা; কোনও সাড়া শব্দ নেই। রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়। শহরের সবকিছু ঘুমিয়ে পড়ে শান্তির নীড়ে। শুধু তার চোখ থেকে হারিয়ে গেছে শান্তির নিদ্রা। এভাবেই ভোরের পাখির মধুকণ্ঠ শুনতে পায় সে। নিজের অজান্তে গোধূলির মতন চোখে নেমে আসে তন্দ্রা।

পরদিন তাসু কল পিক করেঃ
-কাল মুঠোফোন অফ ছিল যে...
-না, পাশে আম্মু ছিল তো, তাই
-আচ্ছা আমাকে কি তোমার অসহ্য লাগে?
-ক্যান? হঠাৎ তোমার এমনটি মনে হল ক্যান?
-কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি আমাকে বারংবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছো,নানান ধরনের বাহানা ধরছো নিত্যদিন। আগে তো এমন ছিলে না?
-হু... তোমার তো মনে হবেই!আমি না এখন পুরনো হয়ে গেছি
-পুরনো(অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে রুপম)? তোমাকে এখনো দেখিও নি! কতদিন ধরে বলছি। আমার আর্জি কিছুতেই তোমার কর্ণকুহরে পৌঁছায় না।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা কালই দেখা করি
রুপম নিজের কান কে যেন বিশ্বাস করতে পারে না। সে এ কি শুনছে-
-সত্যি?বল তো এক সত্যি... দুই সত্যি... তিন সত্যি...
-হুম! এক সত্যি... দুই সত্যি... তিন সত্যি...
-তুমি কোথায় আসবে?
-সিআরবি-তে, সেখানকার নিরিবিলি-নিস্তব্ধ-নিঝুম পরিবেশ আমার অসম্ভব ভাল্লাগে। তোমারও নিশ্চয় খারাপ লাগবে না। আমরা দুজনে এতদিনের জমিয়ে রাখা গল্প করতে থাকবো ফুচকা খেতে খেতে। তোমার না ফুচকা অসম্ভব ভালো লাগে?
-আমি ব্ল্যাক শার্ট পরবো। তোমার ফেভারিট কালার কি যে?
-আমিও ব্ল্যাক থ্রী-পিছ পরবো। বিকেল পাঁচটার সময় সাতরাস্তার মোড়ে থাকবা, একটুও লেট না হয় যেন!

আনন্দের স্রোতে ভাসতে থাকে রুপম। কতদিন ধরে সে এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করছে। সে তাসু-কে দেখতে পাবে,এ কথা ভাবতেই দেহ-মন উৎফুল্ল হয়ে উঠে, উদ্বেলিত হয়ে উঠে। এ জীবনে সে অনেকজনকে কাছে পেতে চেয়েছিল, সবাই অনাদরে অবহেলায় তাকে ছুড়ে দিয়েছে। সে যতবার আশায় বুক বাঁধে, ততবার বিরহ-বিচ্ছেদের বেদন তার বুকে শেল হয়ে বিঁধে। তার জীবনে প্রথম কোনও নারীও তাসু। তাসু কে নিয়ে সে কত স্বপ্নই না দেখে। আচ্ছা, তাসু দেখতে কেমন হবে? মনে মনে ভাবে রুপম। নিজের কল্পনার সবটুকু রঙ দিয়ে সে নিজের অজান্তে এঁকে ফেলে তাসুর অবয়ব। নিশ্চয় কালো থ্রী পিছে তাসু-কে অসাধারণ লাগবে। এক্কেবারে স্বপ্নের নীলপরীর মতন। তার ঠোঁট যুগল নিশ্চয় রক্তিম আভামাখা, চোখ দুটো টানাটানা, চুলগুলো নিতম্ব বেয়ে পড়বে সুবলঙ্গের ঝর্ণার মতন। সে ভাবনার অথৈ জলে হারিয়ে যায়; কোনও কূলকিনারা খুঁজে পায় না। তার মাঝে জাগে নয়া শিহরণ। এমনটা সে আগে কখনও অনুভব করে নি।

উত্তেজনায় সারারাত চোখের পাতাদ্বয় জোড়া হয় না। একরকম অস্তিরতার মাঝেই সে সকালে ঘুম থেকে উঠে। কলেজেও যায় না। ঘরে সুন্দর কোনও কালো শার্ট না থাকায় সে নতুন একটি কালো শার্টও কেনে। সে কিছুক্ষণ পর পর ঘড়ি দ্যাখে। সময়ও কেন জানি বেয়াড়া হয়ে গেছে বলে মনে হয়। একদম ফুরোয় না। এক একটি সেকেন্ড রুপমের মনে হচ্ছে ঘণ্টার মতন। আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব পড়ার সময় সে কালের দীর্ঘায়ন নিয়ে অনেক জল ঘোলা করেছিল। আইনস্টাইন বাবুকে তার অপ্রকৃতস্থ প্রজাতিরই মনে হতো। আজ সেই তত্ত্বের সত্যতা হাতে কলমে বুঝতে পারছে। উত্তেজনার পারদে তার সারা শরীর ঘেমে একাকার। কল্পনার বিলাসে তার হৃদয় হয়ে উঠে পরাগায়নের জন্যে অপেক্ষারত পুষ্পের মতন। তার চোখে আজ সবকিছু সমতল। মিলনের বাসনায় সে হয়ে উঠে বনের উচ্ছল হরিণীর মতন। এতোসব বিশ্বাস অবিশ্বাসের ডানায় চড়তে চড়তে সে এগিয়ে চলে সিআরবি-র পথে। সেখানে,সাতরাস্তার মাথায় হয়তোবা সে মুখোমুখি হবে জীবনের এক নতুন অনুভূতির সাথে। হয়তোবা নিয়তি থাকে নিয়ে এসেছে তার চূড়ান্ত গন্তব্যে। পথ যেন ফুরোবার নয়। পথ থাকে বারংবার বাঁধা দিচ্ছিল। কিন্তু তাকে যেতে হবে। সে যায়ও...

দুই
রক্তিম রুপমের পাড়ার ছেলে। সমবয়সী এবং সহপাঠীও বটে। অন্যসব বকে যাওয়া আলালের ঘরের দুলালের মতন রক্তিমেরও বয়সের সাথে সাথে বাড়তে থাকে বকে যাওয়ার হার। নেশার চূড়ান্ত ধ্বংসের রাজ্যে হারিয়ে যায় রক্তিম। রুপম অনেক বুঝানোর পরও তাকে সে গহীন অন্ধকার রাজ্য থেকে ফেরাতে পারে না। ক্রমশ বাড়তে থাকে দুজনের দূরত্ব। ধ্বংসের শেষ পাঠের সূচনা হয় যখন রক্তিম মাদকের ব্যবসায় নেমে পড়ে। যথারীতি এলাকার সবাই সাক্ষী গোপালের ভুমিকায় অবতীর্ণ। বিনে বাধায় রক্তিম ত্রাসের রাজত্ব শুরু করে। এসব সয়তে না পেরে একটি মাদক বিরোধী সংগঠন খুলে তার কিছু বন্ধুকে নিয়ে। তারা থানায় অভিযোগ দেয়, এলাকায় মাদক বিরোধী মানববন্ধন করে, মানুষকে মাদক সম্পর্কে সচেতন করে। রক্তিম তখন থেকে উঠেপড়ে লেগে যায় রুপমের পেছনে। তাকে নানান ধরনের হুমকি ধামকি দেয়। এসব নিয়ে ফেবুতেও তাদের মাঝে তুমুল কথা কাটাকাটি হয়। রক্তিমের হুমকিতে রুপম দমার পাত্র নয়, সে দ্বিগুণ সোল্লাসে নেমে পড়ে মাদক বিরোধী আন্দোলনে। ওদিকে রক্তিম তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে রুপমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার নেশায় উন্মত্ত হয়ে পড়ে। কারণ, রুপমের জন্যেই তারা তাদের ব্যবসা এগিয়ে নিতে পারছিলো না।

তাসুর সাথে রক্তিমের বছর দুয়েকের পরিচয়। রক্তিম সম্পর্কে সবকিছু জানার পরও এক অজানা লোভে মত্ত হয়ে তাকে ছাড়তে পারে না তাসু। ঘটনাক্রমে একদিন তাসু রুপম সম্পর্কে জানতে পারে। সে রক্তিমের কাছ থেকে রুপমের নম্বর সংগ্রহ করে। রক্তিম তাসুর সাথে একটি বাজি ধরে। বাজিতে হেরে গেলে সম্পর্কচ্ছেদ! আর জিততে পারলে আংটি বদল!! তাসু বাজিতে জয়ী হতে উঠেপড়ে লেগে যায়। রক্তিমকে এর আগে কয়েকদিন সময় দিয়েও উটকো কিছু কারণে ভেস্তে যায় পরিকল্পনা। আজ চূড়ান্ত সমাপ্তির দিকে এগুতে চায় তাসু। আজই সে বিজয়ী হতে চায়।

তিন
অবশেষে রিকশা গিয়ে সাতরাস্তার মাথায় থামে। রুপমের গন্তব্যে। রিকশা থেকে নেমেই সে চতুর্দিকে আড় দৃষ্টিতে তাকায়। কোথাও কোনও নারীর গন্ধও নেই। সে অবচেতন মনে তাসুকে খুঁজতে থাকে। কোথাও তাসুকে না দেখে দিকহারা পথিকের মতন হয়ে পড়ে। তাসুকে কল দেয়। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পর তাসু কল পিক করেঃ
-তুমি এখনও আসো নি?
-ক্যান? আমি তো অনেকক্ষণ যাবত তোমাকে খুঁজছি। তোমার না পাঁচটায় আসার কথা? এখনও এলে না যে? তোমার মোবাইলে কলও যাচ্ছে না। যত্তসব!
-সরি!সরি!!সরি!!! লেট করার কারণে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমি আসছি...
-আমি আমার বান্ধবীকে নিয়ে মোড় থেকে যে লাল বিল্ডিঙটি দেখা যায় তার পেছনে বসে আছি। তুমি এক্ষুনি চলে এসো।


রুপম লাল বিল্ডিঙের দিকে হাঁটতে থাকে। কিন্তু এ কী! রুপম কাকে দেখছে? সে তার চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলো না। রক্তিম তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে সেখানে সশস্ত্র দাড়িয়ে আছে, যেমনিভাবে গার্ড অব অনার দেয়ার সময় বাহিনী দাড়িয়ে থাকে। রক্তিমের সাথে চোখাচোখি হলে রক্তিমের মুখে তাচ্ছিল্লের হাসি ফোটে। রুপম উসাইন বোল্টের মতন দৌড় দিতে চায়। সে পারে না। তার পায়ের নিচে থেকে মাটিগুলো চোরাবালির মতন সরে যাচ্ছিল। সে জোরে আওয়াজ করতে চায়; পারে না। তার গলা ধরে আসছে। কোনোকিছু বুঝে না উঠার আগেই আঘাতের পর আঘাতে সে জর্জরিত হয়ে যায়। মাথায় বজ্রাঘাতের মতন হকিস্টিকের এক আঘাতে সে লুটিয়ে পরে। তারপর, অবিরাম রক্ত ঝরতে ঝরতে সিআরবি পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল রুপমের নিথর দেহ। সাথে তার ডানা মেলে উড়তে চাওয়া শত-সহস্র স্বপ্নও! গোধূলির নিভু নিভু আলোয় নিভে যেতে থাকে রুপমের জীবন-দীপ। পাহাড়ের বালুকণাগুলো অদম্য রুপমের রক্তের প্রায় প্রতিটি কণাকে আলিঙ্গনের ডোরে বেঁধে রাখে...!






২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×