somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এমসি কলেজ কারো বাপের সম্পত্তি না,যদি হয়ে থাকে তবে তা আমার এবং আমার মতো হাজার হাজার বর্তমান-সাবেক ছাত্রের বাপের সম্পত্তি

১০ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সদ্য কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পড়েছি তখন।মাধ্যমিক পাস করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলাম অতি পরিচিত সিলেট এমসি কলেজে-বাংলাদেশের সুন্দরতম ক্যাম্পাসগুলার মাঝে এক্টি।কলেজের সবার ছোট ছিলাম আমরা,সবাই আদর করত;আর যেহেতু ইন্টারের ছাত্ররা রিলেটিভলি ভালো ছাত্র ছিলো তাই বাকি সবাই একটু অন্য চোখে দেখতো।স্যারদের টিউশন কর্মের প্রধান অবলম্বন ছিলাম আমরা-সে কারণেই হোক অথবা নিছক স্নেহ থেকেই হোক টিচারদের কাছ থেকেও ছিল আদরের প্রশ্রয়।আমরা ক্যম্পাসে যা ইচ্ছা তাই করতাম,সারা ক্যাম্পাস এবং সারা শহর-কখনোবা আরো অনেকদূর পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াতাম।ক্যাম্পাসে যখন ইচ্ছা দৌড়াতাম,নিজেদের মাঝে হাতাহাতি করতাম,কলা ভবনের পিছনে অথবা টেনিস গ্রাউন্ডে ক্রিকেট-ফুটবল খেলতাম,ইচ্ছা হলেই হাজারো ছাত্রের সামনেই দল বেধে হঠাতই ঝাপিয়ে পড়তাম আমাদের বিশাল পুকুরে জিন্স-টিশারট পড়া অবস্থায়,পিছনের টিলার গাছের উপর উঠে বসে দল বেধে গান গাইতাম,স্পোরটসরুমে সারাদিন আমাদের দখলে থাকতো,টিটি-দাবা-ক্যারম খেলতে খেলতে আমাদের কেউ কেউ কিংবদন্তীতূল্য হয়ে গিয়েছিলো।আমরা স্পোর্টসরুমের পিছনে লুকিয়ে সিগারেট খেতাম,প্রেম করতাম,মসজিদে নামাজ পড়তাম,পূজা অরগানাইজ করতাম,পলিটিক্স করতাম,গ্রুপিং হতো,নিজেদের মাঝে হাল্কা পাতলা মারামারি হতো,থ্রেট-পাল্টা থ্রেট ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা।সারা ইন্টার লাইফে মোট কয়টা ক্লাস করেছি তা এক হাতে গোনা যাবে।এককথায় পড়াশোনা ছাড়া সবই করতাম।এটাই এমসির ইন্টার লাইফ-শুধু আমরা না,সব ব্যাচেই এরকম।আজকে এসে রিয়েলাইজ করতে পারি সেই লাগামহীন তারুণ্যের উচ্ছাস,ইমম্যাচুইরিটি কিংবা আদরের প্রশ্রয় আমাদের হৃদয়কে কখনো নষ্ট করতে পারেনি।সব সময় 'শত বর্ষের ঐতিহ্যে লালিত' আমাদের সেই 'প্রাচ্যের পুষ্পের' প্রতিটি ধূলার প্রতি এক অদ্ভূত টান অনুভব করতাম,করি।বড় আবেগ নিয়ে এই টার্মগুলা ব্যবহার করি আমরা।মনে আছে একটা জানালা আটকাতে বা খুলতে গেলেও বড় যত্নে তা করতাম,এ যে আমাদের শত বরষের ইতিহাসের সম্পদ,নিছক কাঠ নয়।ম্যাথ ক্লাস হত গ্যলারীতে,পারসেন্টেজের পড়েই যাতে ভাগতে পারি সেজন্য বসতাম একদম পিছনের সবচে উঁচু ধাপে,যেখান থেকে জানালা দিয়ে সহজেই লাফ দেয়া যায়।মনে পড়ে সেই লাফের সময়ও মাথায় থাকতো পায়ে ব্যথা পাই পাবো,কিন্তু আম্ার এমসির জীর্ণ কাঠ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।যাক সেসব কথা।বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলার মধ্যে এমসি একেবারে প্রথম সারির একটি।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে দেখলাম এমসি থেকে এসেছি শুনলে ডাকসাইটে প্রফেসররাও আলাদা দাম দেন।কাল যখন জানলাম আমাদের অনিন্দ্য সুন্দর এমসি হোস্টেল পুড়িয়ে ছাই দিয়েছে ছাত্রলীগ নামদারী অমানুষ সন্ত্রাসীরা আপনা থেকেই চোখে পানি চলে এল,জানিনা কেন।এই হোস্টেলে আমার বাবা থেকেছেন,চাচা্রা থেকেছেন,তাদের মামা থেকেছেন,আমিও থেকেছি অনিয়মিত,আমার ছোট ভাইও বোধহয় এখন থাকে মাঝে মধ্যে।যখনি আগুনে পোড়ার দৃশ্য চোখে ভাসে মনে হয় যেন ইট কাঠ পুড়ছেনা,আমার হৃদয়টা পুড়ে যাচ্ছে।কোন মনুষ্যত্ব বোধসম্পন্ন কেউ এ কাজ করতে পারেনা,সিলেটি না হলে আপনি হয়তো বুঝতে পারবেন না কেন পেট্রল দিয়ে হোস্টেল জ্বালিয়ে দেয়াকে আমরা এত বড় করে দেখছি।এ আমাদের বড় আবেগের ধন।ছাত্রলীগ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে জঘন্য কাজটি করল।প্রতিপক্ষ সংগঠন তাড়াতে যদি তাদের পুলিশের সহযোগীতায় শতবরষি হোস্টেল পুড়ানোর কাপুরুষতা করতে হয়,তবে এমন দল করার চেয়ে যেকোন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ছেলের গলায় ফাস নেয়া উচিত।এতগুলো সাধারণ ছেলে তাদের সর্বস্ব হারালো আগুনে।অনার্স-ডিগ্রীর কথা বাদ দিলাম,ওরা না হয় বড়,খারাপ লাগে ইন্টার পড়া গ্রাম থেকে আসা দরিদ্র ঘরের ছেলেগুলোর জন্য,যারা এক-দেড় বছরে জন্য ক্যাম্পাসে এসেছিল অতিথির মত,যারা থাকে আশংকা-ভরসা-স্বপ্নের মাঝে।এদেরই যাওয়ার কথা বুয়েট-মেডিকেল-বিশ্ববিদ্যালয়ে।এমসি একেবারে আমাদের নিজেদের ধন,এখানে আমি পড়েছি,আমার বাপ-চাচা-ফুফুরা পড়েছেন,তাদের মামা-চাচ্ারা পড়েছেন,আমার কাজিনগুলা পড়েছে-পড়ছে,এখন আমার একমাত্র ছোটভাইটা পড়ছে।অনেকেই বলেছিলেন ওকে এমসিতে দিওনা,ওখানে পড়াশোনা হয়না,পরিবেশ ভালোনা,অন্য কোন ভাল কলেজে দাও।কিন্তু আমরা ওকে এমসিতেই দিয়েছি,এটা আমাদের অযৌক্তিক গর্ব,ভেবেছি দেখুক,শিখুক,খুপড়ি কলেজের চাপের মধ্যে না থেকে উন্মুক্ত পরিবেশে যাক,আউটলুক ওয়াইড করুক,পড়াশোনাই সব না,রেজাল্ট যে করতে পারে এমসি কলেজ থেকেও পারে,ক্যান্টনম্যান্ট কলেজ থেকেও পারে।আজকে প্রশ্ন জাগে,সবই কি ভুল ছিল?আগুন ধরানোর ছবি দেখলাম,দুর্বৃত্তদের অনেককেই চিনতে পারলাম,বেশীরভাগই অছাত্র পাড়ার মাস্তান-ডাকাত,তবে নেত্রিত্তে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের বর্তমান-সাবেক বড় নেতারা।কাল থেকে এরা আমার ব্যক্তিগত শত্রু হয়ে গেলেন।চিৎকার দিয়ে বলতে চাই--এমসি কলেজ কারো বাপের সম্পত্তি না,যদি হয়ে থাকে তবে তা আমার এবং আমার মতো হাজার হাজার বর্তমান-সাবেক ছাত্রের বাপের সম্পত্তি।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×