somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঃঃঃ পুলিশ ছুঁইলে আঠারো ঘা !!! সাধু সাবধান !!!ঃঃঃ

০৯ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা একাডেমীর অভিধান অনুযায়ী, রিমান্ড শব্দটির অর্থ আরও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালত থেকে পুলিশের হেফাজতে পাঠানো। আর সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধি, পুলিশ প্রবিধানসহ সব আইনেই পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা অপরাধ। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, বাংলাদেশে রিমান্ড মানেই নির্যাতন।
২০০৫ সালের ২৬ জুন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে জবানবন্দি দেন জজ মিয়া। তাঁকে দিয়ে বলানো হয়েছিল, সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের নির্দেশে তিনিসহ ১৪ জন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড ছুড়েছিলেন। ১০ জুন গ্রেপ্তারের পর ১৫ দিন পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি হেফাজতে (রিমান্ডে) নিয়ে জজ মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হন। পরে সিআইডিরই তদন্তে বেরিয়ে আসে, নির্যাতন করে, ভয়ভীতি আর লোভ দেখিয়ে জজ মিয়াকে এ স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়।
২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল রাতে খুন হন বংশাল থানার অপারেশন কর্মকর্তা গৌতম রায়। এ মামলায় হায়দার আলী ও জাকির হোসেন নামের দুই যুবককে ধরে ২৬ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব। তাঁরা গৌতম রায়কে খুন করেছেন বলে স্বীকার করেন এবং ঘটনার শ্বাসরুদ্ধকর বর্ণনা দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, এই হায়দার ও জাকির হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। অভিযোগপত্র থেকে তাঁদের নামও বাদ দেওয়া হয়েছে। আট মাসের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর ছাড়া পান হায়দার ও জাকির। এই দুই যুবক পরে প্রথম আলোর কাছে বলেন, নির্মম নির্যাতনের কারণে তাঁরা গৌতমকে হত্যার কথা স্বীকার করেছিলেন।



খিলগাঁও থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলালউদ্দীন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরের পায়ে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়েছিলেন। গত বছরের ১৫ জুলাই রাতে মিথ্যা অভিযোগে কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুধু জজ মিয়া, হায়দার-জাকির বা কাদের নন, রিমান্ডের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। ‘রিমান্ডে’ নিয়ে মারপিট করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনা অহরহ ঘটছে।
তবে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, পিটিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। বিধিবহির্ভূতভাবে তদন্ত চালানোর এখতিয়ারও কারও নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটা করতে পারে না। জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে পুলিশের বিধি আছে, সেই মোতাবেক দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আইজিপি যা-ই বলুন, নির্যাতনই পুলিশের প্রধান তদন্ত-কৌশল। বাস্তবে এটাই আইন। কর্মকর্তারা বলছেন, ‘হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করা বেআইনি’ প্রশিক্ষণের সময় পুলিশকে এটা শেখানো হলেও কর্মক্ষেত্রে তার উল্টোটা হয়। কারণ, সাক্ষ্য আর স্বীকারোক্তি ছাড়া পুলিশের কাছে আর কোনো প্রমাণ না থাকায় মামলা খারিজ হয়ে যায়। তাই নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।



ঢাকার কয়েকজন ওসি বলেন, পেশাদার অপরাধীরা সহজে কিছু বলতে চান না। তাই বাধ্য হয়ে আইন উপেক্ষা করেও মারধর করতে হয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদেরও বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তারা সেই কৌশল অবলম্বন করে তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত হতে পারেন। মারধর ছাড়াও পুলিশের নির্যাতন কৌশলের মধ্যে রয়েছে ‘ওয়াটার পলিশ’ (নাকে-মুখে গামছা দিয়ে পানি ঢালা), বাদুর ঝোলানো (উল্টো করে ঝোলানো), ‘ওয়াটার থেরাপি’ (পানিতে নাক চুবানো), বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, পশ্চাদ্দেশে মরিচ দেওয়া, গুলি করে হত্যার (এনকাউন্টার বা ক্রসফায়ার) হুমকি ইত্যাদি।
আইনে যা আছে: পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী, পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) বা তার ওপরের যেকোনো কর্মকর্তা মামলার তদন্ত করতে পারবেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) তদন্ত করতে পারবেন। বাস্তবে তদন্তের সিংহভাগই করে থাকেন এসআইরা।
২০১০ সালে জুনে ঢাকা মহানগর পুলিশের হেফাজতে পর পর তিনজনের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এরপর ডিএমপি কমিশনার আসামিদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন না করাসহ ১২ দফা নির্দেশনা দেন। তখন কর্মকর্তাদের মন্তব্য ছিল, নির্দেশনাগুলোতে নতুন কিছুই নেই। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ‘ভুলে যাওয়া’ আইন মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টামাত্র। ওই নির্দেশনায় আরও মনে করিয়ে দেওয়া হয়, সংবিধানের ৩৩ ও ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ অনুসারে, আটক করা ব্যক্তির মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় পুলিশ সচেষ্ট হবে।
সাক্ষ্য আইনের ২৪ ধারায় রয়েছে, ফৌজদারি মামলায় যদি কোনো ব্যক্তি স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর প্রতীয়মান হয় যে ভয়ভীতি, প্রলোভন বা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে এবং আদালত যদি মনে করেন, এর ফলে আসামি কোনো পার্থিব সুবিধা পাবেন বলে ধারণা করেছিলেন, তবে আসামির সেই স্বীকারোক্তি অপ্রাসঙ্গিক।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৩ ধারায় রয়েছে, কোনো পুলিশ কর্মকর্তা সাক্ষ্য আইনে বর্ণিত ২৪ ধারা অনুযায়ী কোনো প্রকার প্রলোভন, হুমকি বা প্রতিশ্রুতি দেবেন না বা দেওয়াবেন না। এই অধ্যায় অনুসারে কোনো ব্যক্তি স্বাধীনভাবে বিবৃতি দিতে চাইলে কোনো কর্মকর্তা তাঁকে হুঁশিয়ারি বা অন্য কোনোভাবে বারণ করবেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে পুলিশের সাক্ষ্য ও স্বীকারোক্তিনির্ভর যে সনাতনী তদন্ত পদ্ধতি, তা বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। ব্রিটিশ আমলে পুলিশকে যে তদন্ত শেখানো হয়েছিল, তা অনেকাংশে পুলিশ এখনো ব্যবহার করে আসছে। সেগুলোর পরিবর্তন বাঞ্ছনীয়। মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। মানবাধিকারের বিষয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে মানবাধিকারের সেই ধারণাটিই ছিল না।
২০০৩ সালে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) বনাম বাংলাদেশ মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কিছু দৃষ্টান্ত-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। মামলাটিতে পক্ষভুক্ত ছিল বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। আসকের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, বাংলাদেশে রিমান্ডে যে আচরণ করা হয়, তা একেবারেই বেআইনি। ২০০৩ সালের ওই মামলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই চর্চাটা এতটাই ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে শেষ পর্যন্ত আদালতকেও এ বিষয়ে রায় দিতে হয়েছে।
আইনজ্ঞ শাহ্দীন মালিক এ বিষয়ে বলেন, আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন অভিযুক্তদের সেই মামলার নির্দেশনা অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেফ হাউসে অভিযুক্তদের স্বজন ও আইনজীবীর উপস্থিতিতে অথবা বাসায় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের এই নির্দেশনাগুলো দেশের প্রত্যেকটি অভিযুক্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়া উচিত।




সংগ্রহ...প্রআ
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৩৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×