somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিনগ্রহের ফুটবল খেলোয়ার একজন মেসি এবং একটি বিশ্ব জানতে চান ? দেখুন ....

০৯ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিওনেল আন্দ্রেস ‘লিও’ মেসি (জন্মঃ ২৪ জুন, ১৯৮৭) আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড়। বর্তমানে তিনি স্পেনের বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবে খেলছেন। তাকে বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম সেরা ও প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মেসি ২১ বছর বয়স হবার আগেই কয়েকবার ব্যালন ডি অর’ এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন এবং ২২ বছর বয়সে দুটি পুরষ্কারেই ভূষিত হন। তার খেলার ধরণ ও সক্ষমতার কারণে প্রায়ই তাকে আরেক আর্জেন্টাইন গ্রেট ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে তুলনা করা হয়, যিনি নিজেই মেসিকে তার উত্তরসূরি হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
লিওনেল মেসি অতি অল্প বয়সেই তার ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব দ্রুতই তার সম্ভাবনা বুঝতে পারে। তিনি ২০০০ সালে রোসারিও কেন্দ্রিক নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ দল ছেড়ে তার পরিবারসহ ইউরোপে পাড়ি জমান, যার কারণ ছিল বার্সেলোনা তার বর্ধন হরমোন স্বল্পতার চিকিৎসার প্রস্তাব দিয়েছিল। ২০০৪-০৫ মৌসুমে খেলতে নেমে তিনি লা লিগার ইতিহাসে কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে কোন ম্যাচে খেলা ও গোল করার রেকর্ড স্থাপন করেন। তার অভিষেকের বছরেই বার্সেলোনা স্মরণীয় সাফল্য অর্জন করে- লিগ এবং ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের গৌরবজনক দ্বৈত অর্জন করে। তার সাফল্যের সূচনাকারী মৌসুম ছিল ২০০৬–০৭ মৌসুমে, যখন তিনি বার্সেলোনার প্রথম একাদশে দলের নিয়মিত সদস্যে পরিণত হন, এল ক্লাসিকোতে হ্যাট্রিক করেন এবং ২৬টি ম্যাচে ১৪টি গোল করেন। প্রতিটি মৌসুমেই তার পারফরমেন্সের উন্নতি ঘটছে। তুলনামূলকভাবে প্রতিটি মৌসুমেই ক্লাবে তার গোলসংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১০-১১ মৌসুমে ব্যক্তিগতভাবে সর্বোচ্চ ৫৩ গোল করেন।
মেসি ২০০৫ সালে ফিফা যুব বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ছয়টি গোল করেন, যার মধ্যে দু'টি ছিল ফাইনালে। এর স্বল্পসময় পরেই তিনি আর্জেন্টিনার মূল আন্তর্জাতিক দলে সুযোগ পান। ২০০৬ সালে তিনি কনিষ্ঠতম আর্জেনটাইন হিসাবে ফিফা বিশ্বকাপে খেলেন এবং পরের বছর কোপা আমেরিকায় রানার্স-আপ মেডেল জয় করেন। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে তিনি তার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান লাভ করেন, আর্জেন্টিনা দলের সাথে স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়ে।

মেসির বাল্যকাল:
সান্তা ফে’র রোসারিওতে ফ্যাক্টরি শ্রমিক জর্জে হোরাসিও ও খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতাকর্মী সেলিয়া মারিয়া সুছিত্তিনির ঘরে জন্ম নেন মেসি। তবে মেসির পৈতৃক আদিনিবাস ছিল ইতালির শহর আনসোনায়। পাঁচ বছর বয়সে বাবা জর্জের কোচিংয়ে স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলিতে হাতেখড়ি হয় খুঁদে মেসির। আর ১৯৯৫ সালে নিওয়েলস ওল্ড বয়েজে যোগ দেন তিনি। তবে ১১ বছর বয়সে বর্ধন হরমোন স্বল্পতা বাড়ানোর চিকিত্সার প্রয়োজন পড়ে মেসির। এ সময় রিভার প্লেট তার প্রতি আগ্রহ দেখায়। কিন্তু মাসিক ৯০০ ডলারের চাহিদা অনুযায়ী ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা ক্লাবটি। বেশ সতর্ক ছিলেন এফসি বার্সেলোনার পরিচালক কার্লেস রিক্সাক। তবে ন্যু ক্যাম্পে যোগ দেয়ার বিনিময়ে চিকিত্সার ব্যয়ভার বহনের প্রস্তাব করেন বার্সার তত্কালীন পরিচালক। মেসিও প্রস্তাব গ্রহণ করে যোগ দেন ক্লাবটির যুব একাডেমিতে।
ক্লাব ক্যারিয়ার:
পোর্তোর বিপক্ষে ২০০৩ সালে প্রস্তুতি ম্যাচে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ক্লাবের তৃতীয় কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে বার্সেলোনায় আনুষ্ঠানিক অভিষেক ঘটে মেসির। আর তত্কালীন কোচ ফ্রাঙ্ক রিজকার্ডের অধীনে পরের বছর এসপানিওলের বিপক্ষে লিগ অভিষেক ঘটে আর্জেন্টিনার উদীয়মান তারকার। লা লিগায় ওই সময় তিনিই সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়। পরে অবশ্য রেকর্ডটি ভাঙেন বোজান কিরকিচ, ২০০৭ সালে। মেসি ক্লাবে প্রথম গোলটি পান আলবাসেতে বালোম্পির বিপক্ষে ২০০৫ সালে। নিজের পারফরমেন্সের পেছনে সাবেক কোচ রিজকার্ডকে কৃতিত্ব দেন মেসি, “মাত্র ১৬-১৭ বছর বয়সে আমার প্রতি তার যে আত্মবিশ্বাস ছিল তা আমি কখনোই ভুলব না।”

ক্লাবের হয়ে মেসি ২০০৪-০৫ মৌসুমে মাত্র ১টি গোল করেন। পরের মৌসুমে ৮টি গোল পান আর্জেন্টাইন জাদুকর। ২০০৬-০৭ মৌসুমে ১৭টি গোল করেন তিনি। আগের মৌসুমের তুলনায় ২০০৭-০৮ মৌসুম ভালো কাটেনি তার। ১৬টি গোল করেন তিনি। পরবর্তী তিন মৌসুমই মেসির জন্য সোনালী অধ্যায়। তিন মৌসুমে ৩৮, ৪৭ ও ৫৩ গোল করেন তিনি। লা লিগায় হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হতে বার্সায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন লিওনেল মেসি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার:
জুন, ২০০৪’এ প্যারাগুয়ের বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে আর্জেন্টিনা অভিষেক ঘটে মেসির। ২০০৫ সালে ফিফা যুব চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। এককভাবে জেতেন গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট।
একই বছর ১৭ আগস্ট হাঙ্গেরির বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে মেসির। ৬৩ মিনিটে পরিবর্তিত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমে রেফারির বিতর্কিত লাল কার্ডে দু’মিনিটেই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। কিছুদিন পর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্যারাগুয়ের কাছে হারের ম্যাচে ফেরেন মেসি। আর ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো প্লে মেকার হিসেবে ১০ নম্বর জার্সি গায়ে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নামেন তিনি।
ক্লাবে যেমন দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেন মেসি, ঠিক তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি জাতীয় দলে। বেশ সমালোচনাও শুনতে হয়েছে এ কারণে। এ পর্যন্ত ৬০ ম্যাচে মাত্র ১৭টি গোল করেছেন আর্জেন্টিনার মেসি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপে তার পায়ের জাদুতেই তৃতীয় শিরোপার স্বপ্ন দেখেছিল ভক্তরা। কিন্তু হতাশ করেন তিনি। সমালোচকদের পাল্টা জবাব দিতে ব্যর্থ হন এবং কোয়ার্টার ফাইনালেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় ম্যারাডোনা শিষ্যদের।
নিজেদের মাটিতে কোপা আমেরিকাতেও জ্বলে ওঠেননি মেসি। উরুগুয়ের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নিলে তাকে নিয়ে আরও সমালোচনার ঝড় ওঠে।

সম্মাননা ও পুরস্কার:
ক্লাব:
লা লিগা : ২০০৪-০৫, ২০০৫-০৬, ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১০-১১
কোপা ডেল রে : ২০০৮-০৯
স্প্যানিশ সুপারকোপা : ২০০৫, ২০০৬, ২০০৯, ২০১০, ২০১১
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ : ২০০৫-০৬, ২০০৮-০৯, ২০১০-১১
উয়েফা সুপার কাপ : ২০০৯, ২০১১
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ : ২০০৯
আর্জেন্টিনা:
ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ : ২০০৫
অলিম্পিক স্বর্ণ জয় : ২০০৮

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিগত অর্জন:
জাতীয় দলের হয়ে মেসির অর্জন খুব একটা উল্লেখ করার মতো না হলেও ক্যারিয়ারে তার ব্যক্তিগত অর্জন অসংখ্য।
ফিফা ব্যালন ডি’অর: ২০১০
ব্যালন ডি’অর: ২০০৯
ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়: ২০০৯
ফিফা বর্ষসেরা দল: ২০০৮, ২০০৯, ২০১০
অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোপিয়ান বর্ষসেরা ফুটবলার: ২০০৭
লা লিগা বর্ষসেরা খেলোয়াড়: ২০০৯, ২০১০, ২০১১
লা লিগা সর্বোচ্চ গোলদাতা: ২০১০
কোপা ডেল রে সর্বোচ্চ গোলদাতা: ২০১১
লা লিগা বিদেশি বর্ষসেরা খেলোয়াড়: ২০০৭, ২০০৯, ২০১০
ইউরোপিয়ান গোল্ডেন স্যু: ২০১০
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সর্বোচ্চ গোলদাতা: ২০০৯, ২০১০, ২০১১
উয়েফা ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়: ২০১১
উয়েফা ক্লাব বর্ষসেরা ফুটবলার: ২০০৯
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বর্ষসেরা ফরোয়ার্ড: ২০০৯
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল ম্যাচ সেরা: ২০১১
আর্জেন্টিনার বর্ষসেরা ফুটবলার: ২০০৫, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০।
ফুটবল জ্বরে ভুগছে যখন সবাই,তখন মেসি একাই কাপিয়ে দিচেছ সারা বিশ্বকে।আপনাদের ভালো লাগলেই আমার সার্থকতা।আজ এ পর্যন্তই, ভালো থাকবেন............
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১২ রাত ২:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×