somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কান্তজিউ মন্দির-দিনাজপুরঃ স্থাপত্য শৈলী ও পোড়ামাটির ফলকে উৎকীর্ণ পৌরানিক কাহিনী (পর্ব-০৭)

০৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পৌরাণিক কাহিনী: বিষ্ণু মিথলজী:

কান্তজিউ মন্দিরে প্রায় পুরোটাই বিভিন্ন টেরাকোটার মোড়কে আবৃত। আনুভূমিকভাবে স্থাপিত কিছু টেরাকোটার সামাজিক চিত্রাবলীর বর্ণনা ব্যতিত পুরো মন্দির গাত্রে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী অসংখ্য টেরাকোটার প্যানেলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ সমস্ত টেরাকোটায় বিষ্ণু মিথলজীকে মৌলিক বিষয় হিসেবে ধরা হযেছে। এখানে বিষ্ণুর দশ প্রকার দেবতার জীবন্ত সত্ত্বার রূপ চিত্রায়ণ করা হয়েছে। বিষ্ণুর দৈহিক রূপ তিন ভাগে ভাগ করা যায়: অবতার, অ্যাভশ ও আমস্। রাম ও কৃষ্ণ জগতে বহুদিন ধরে জীবিত ছিলেন অবতার হিসেবে। পরশুরাম জগতে আসে অত্যাচারী ত্রিয়দের ধ্বংসের এক মিশন নিয়ে। পরশুরাম তার কাজ সমাধা করে তাঁর দৈবিক মতা দশরথের পুত্র রামের নিকট হস্তান্তর করেন। রাম অ্যাভশ্ হিসেবে তাঁর গুরু দায়িত্ব পালন করেন। বিষ্ণু জগত ও সমাজে শান্তি পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন অস্ত্র যেমন চক্র, শঙ্খ প্রভৃতি প্রেরণ করেন। যাকে আমস্ বলা হয়।৩০ বিষ্ণু হলেন পৃথিবীর সকল জীবের রাকর্তা। তিনি জগতকে শয়তানের কবল থেকে মুক্ত করতে এবং অসুরদের মতাকে খর্ব করার অভিপ্রায় নিয়ে মোট নয়বার ধরাধামে আবির্ভূত হন। বলা হয় যে, তিনি পৃথিবীর বিপত্তিজনক পরিস্থিতিতে আবার আগমণ করবেন। তার এ দশ রূপের পরিচয় পাওয়া যায় মন্দিরের টেরাকোটার প্যানেল থেকে। নিচে এগুলোর বর্ণনা দেয়া হলো: ১ থেকে ১০ পর্যন্ত ফলকচিত্রে বিষ্ণুর দশ প্রকার রূপ যেমন: মৎস্য অবতার, কর্ম অবতার, বরহ অবতার, নরসিমা অবতার, বামন বা ত্রিবিক্রম অবতার, পরশুরাম অবতার, রাম অবতার, বলরাম অবতার, কৃষ্ণ অবতার এবং কলকি অবতার রূপে চিত্রিত করা হয়। সমস্ত পৃথিবী পানি থেকে সৃষ্টি করে বিষ্ণু মনু ও শতরুপাকে রার্থে অর্ধমাছ ও অর্ধ মানুষ রূপে আবির্ভূত হন। এ সময় তিনি অসুরের হাত থেকে ৪টি বেদকে রা করেন।

১নং ফলকচিত্রে দেখা যায় যে, বিষ্ণুর দৈহিক আকৃতিতে উপরের অংশ মানুষের দৈহিক বিন্যাস এবং নিচের অংশ মাছের আকৃতি।


এখানে তিনি ৪ হাতে যথাক্রমে শঙ্খ, চক্র, পদ্ম ও গদ ধরে আছেন এবং দুজন ভক্ত নিচে হাটু গেড়ে বসে আছে।

ফলকচিত্র-২ এ বিষ্ণু দেবতা ও অসুরদের মধ্যে সংঘটিত লড়াইয়ে পাহাড়কে রা করার জন্য অর্ধেক মানুষ ও অর্ধেক কচ্ছপের আকৃতি নিয়ে কর্ম অবতার হিসেবে আবির্ভূত হন।



৩নং ফলকচিত্রে দেখা যায় যে, বিষ্ণু মানব শরীর ও শুকুর মুখ বিশিষ্ট রূপ নিয়ে বরহ অবতার হিসেবে পৃথিবীতে আসেন এবং অশুভ শক্তির নিকট থেকে পৃথিবীকে উদ্ধার করেন।



ফলকচিত্র-৪ এ নরসিমা অবতার হিসেবে মানুষ সিংহ রূপ নিয়ে বিষ্ণু হিরনরে ভাই হিরনীপুকে হত্যা করেন এবং দুনিয়ায় পুনরায় বৈষ্ণব পূজা অর্চনা চালু করেন।


উপর্যুক্ত ৪টি প্লেটে অংকিত প্রতিটি চিত্রে বিষ্ণুর ৪ হাতে ছিল যথাক্রমে শঙ্খ, চক্র, গদ ও পদ্ম।

৫নং ফলকচিত্রে বিষ্ণুর আগমণ ঘটে বামন বা ত্রিবিক্রম অবতার হিসেবে।


এই প্রথম তিনি মানবরূপে আবির্ভূত হয়ে অশুভ শক্তির উৎস বলিকে হত্যা করেন এবং ঘোষণা করেন তিনি পথলোক, ভুলোক ও স্বর্গলোকের একচ্ছত্র অধিকারী। চিত্রে প্রদর্শিত তার তিনটি পা একথারই স্বাক্ষ্য দেয়।

পরশুরাম অবতার হিসেবে এসে বিষ্ণু ত্রিয়দের উপর ব্রাহ্মণদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন, যা ৬নং ফলকচিত্রে জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে।


এখানে বিষ্ণুর ডানহাতে কুড়াল ও বামহাতে তীর দেখা যাচ্ছে।

৭নং ফলকচিত্রে রামের হাতে তীর ও ধনুক দেখা যাচ্ছে।


বাম হিসেবে প্রথম বিষ্ণু জনগণের মধ্যে শান্তি- সাম্য-শিার ব্যাপারে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।

বলরাম অবতার হিসেবে বিষ্ণু কৃষ্ণের ভাই হয়ে আবির্ভূত হয়ে মথুরার স্বৈরশাসক কংসকে বধে ভূমিকা রাখেন, যা ৮নং ফলকচিত্রের উপজীব্য বিষয়।


এখানে বিষ্ণুর হাতে লাঙ্গল ও শিঙ্গা দেখা যাচ্ছে।

৯নং ফলকচিত্রে কৃষ্ণ রূপী বিষ্ণুকে আমরা দেখতে পাই, যেখানে তিনি দু’পা বিপরীত অবস্থানে রেখে বাঁশী বাঁজাচ্ছেন।



বিষ্ণুর দশম রূপটি ফুটে উঠেছে ১০ নং ফলকচিত্রে বর্ণিত কলকি অবতার হিসেবে।


কলি যুগে সাদা ঘোড়ার উপর বসে এবং উন্ম্ক্তু তলোয়ার হাতে নিয়ে অত্যাচারী বধ করে পৃথিবীর পরিশুদ্ধি আনয়ণে তিনি শেষবারের মত আসবেন, যা জীবন্ত হয়ে উঠেছে টেরাকোটায় ১০নং চিত্রের প্যানেলে।৩১

বিষ্ণুর এই দশপ্রকার রূপ কান্তজিউ মন্দিরে উৎকীর্ণ রয়েছে। এগুলির মধ্যে দুটি জনপ্রিয় রূপ: রাম ও কৃষ্ণের কাহিনীসমূহ বিস্তারিতভাবে মন্দিরের আনুভূমিক প্যানেলে এবং মন্দিরের উত্তর ও দণি দিকের উল্লম্ব অংশে সামান্য পরিমাণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।


তথ্য নির্দেশনা:
৩০. Rao, Gopinath T. A., "Elements of Hindu Iconography", vol, 1 part 1, Delhi: Motilal Banarasidass, 1985, pp-119-223.উদ্ধৃত Hoque, M.M et al, "Kantajee Temple An Outstanding Monument of Late Madieval Bengal", publication Dept. of Drik, Dkaha, 2005, P. 62.

৩১. Hoque, M.M et al, "Kantajee Temple An Outstanding Monument of Late Madieval Bengal ", publication Dept. of Drik, Dkaha, 2005, . PP. 61-73.

ছবি: সীজার
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:৪৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×