somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমিই বোগাস, আমিই রাবিশ অথবা, আমি ছাড়া বাকি সবাইÑবোগাস, রাবিশ

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোনাম দেখে ছিঃ ছিঃ করবেন না প্লিজ এটা বাংলা সিনেমার কোনো নাম নয়। হলফনামায় সহি সম্পাদন করে ঘোষণা করছি যে, এখানে আমার নিজের কথাই বলা হয়েছে, অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়।
প্রায় এক যুগ আগে এক সুন্দরী ললনাকে চোখের নজরে ভালো লেগে গেল। লাজ-শরমের মাথা খেয়ে সুন্দরীর সামনে গিয়ে প্রেম নয়নে তাকিয়ে বললাম, হেই সুন্দরী, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। সুন্দরী কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে বলল, ‘তাই, না? দাঁড়া ভিলেনের বাচ্চা। তোর মতো বোগাস প্রেমিক জীবনে কতো শায়েস্তা করলাম আর তুই তো কোন চুঁনোপুটি। তোকে যেনো আর কোনো দিন আমার চোখের সামনে না দেখি যা ফোট রাবিশ কোথাকার!’
ভুল ক্রমে পিচ্চিকালের ঘটনা না বলে প্রেমবেলার ঘটনা আগে বলে ফেলেছি। এখন তবে ফ্ল্যাশব্যাকে যাই-
একদিন গৃহপালিত শিক্ষক আমাকে পাঠদানের সময় অতিমাত্রায় বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘আমি আমার জীবনে এমন রাবিশমার্কা ছাত্র একটিও দেখিনি।’ তখন আমি খুশিতে গদগদ হয়ে বলেছিলাম, স্যার আমারও অনেক ভালো লাগছে, আপনাকে শ্রেষ্ঠ রাবিশ দেখাতে পেরে।’ স্যার আমার কথা শুনে ছোট্ট করে বললেন, ‘ত্যাদড়।’
২.
যুবক বয়সে পর্দাপন করলাম।
পিতাজি সবসময় আমাকে বোগাসমার্কা ছেলে হিসেবেই গণনা করে আসছেন। আমাকে শুনিয়ে আম্মাজানকে বলতেন, ‘তোমার ছেলে একটা বোগাস ছাড়া আর কিছুই নয়। সংসারে তাকে কোন কাজে লাগে শুনি। কোনোদিন কোনো কাজেকর্মে ঢুকতে পারবে বলে মনে হয় না।’ আব্বাজানের কথা পুরোপুরি সত্য হয়নি বটে শেষ পর্যন্ত একটা চাকরী ঠিকই জুটিয়ে নিলাম। তবুও আব্বাজান বলেন, দেখো এই চাকরী কতদিন করতে পারে। বোগাসগিরি করে তো আর চাকরী করা যায় না।’
আব্বাজানের আশংকা পুরোপুরি সত্যি হয়নি এখনো বহাল তবিলতে চাকরীতে টিকে আছি। তবে অফিসের বস একদিন হাসতে হাসতে বললেন, ‘তুমি মিয়া একটা বোগাস। তোমার মাথায় কিচ্ছু নাই। চাকরীটা পেলে কিভাবে?’
মনে মনে উত্তর দিয়েছিলাম ‘স্যার চাকরীটা তো আপনিই দিয়েছিলেন।’
হায়, এক জীবনে বোগাস ও রাবিশ থেকে আমার বুঝি আর বের হওয়া হলো না!
৩.
বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে।
একদিন হুট করে কাউকে কিছু না বলে ঘরে বউ নিয়ে আসলাম। ভাবনা ছিল বউ বুঝি আমাকে একটু হলেও বুঝবে। অন্তত রাবিশ, বোগাস টাইপ কিছূ বলবে না। কিন্তু কিসের কি! বউ হাসিরছলে উপহাস করে বলল, ‘তুমি এমন বোগাসগিরি করে পরীক্ষায় পাশ করলে কিভাবে?’
অপমানে লাল হয়ে বলি, ‘বউ, হইাই তো বোগাসগিরির কেরামতি।’
কিন্তু ইদানিং আমার আসন নড়বড়ে হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
দেশের মালমন্ত্রী অর্থাৎ অর্থমন্ত্রী আমার উপর হিংসার বশবর্তী হয়ে দেশের আরো কয়েকজনকে বোগাস ও রাবিশ বলে ঘোষণা করেছেন। এতোদিন যে পদবী একান্ত আমার বলে দাবী করে আসছিলাম, এখন এতে অন্যরা ভাগ বসাবেন। আফসোস!
হলমার্ক নামক একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋন নিয়ে, এখন তা ফেরত দিচ্ছে না। উল্টো অর্থমন্ত্রী বলেছেন, হলমার্ককে আরো ঋন দেয়া যেতে পারে, যাতে তারা পূর্বের ঋন শোধ করতে পারে। বিষয়টি সুশীলসমাজ মেনে নিতে পারছেন না। তারা অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করছেন। সেকারণে অর্থমন্ত্রী তাদেরকে বোগাস ও রাবিশ বলেছেন।
আমার মতে অর্থমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। কেননা অর্থমন্ত্রীর চেয়ে কি তারা বেশি বোঝে? তারা কি অর্থমন্ত্রী না রাজনীতিবিদ? সুতরাং অর্থমন্ত্রীর চেয়ে বেশি বোঝা ঠিক না।
৪.
কিছুদিন আগে গ্রাম থেকে আমার এক চাচা বেড়াতে এসেছেন।
তাকে বললাম, ‘চাচা, হলমার্কের নাম শুনেছেন?’
তিনি এক বাক্যে ‘না’ বললেন।
আবারো বললাম, ‘চাচা, হলমার্ক যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে গেছে, তাও শোনেননি?’
এবারো চাচা জোরে জারে মাথা নেড়ে ‘না’ বললেন।
মৃদু হেসে বলি, ‘এবারও তাহলে ভোট জায়গামত দেবেন?’
চাচা বললেন, ‘ভোট তো আমি এই এক জায়গা ছাড়া দেই না বাবাজি।’
বুঝলাম শহরবাসী ছাড়া হলমার্কের দুর্নীতির খবর খুব বেশি দূর পৌঁছায়নি। মনে মনেও চাচাকে রাবিশ বলা থেকে বিরত থাকলাম, কারণ অর্থমন্ত্রী শুনলে আমার খবর আছে।
তবে এখন শহরবাসীকে চিৎকার করে হলেও রাবিশ, বোগাস বলবো। কেননা, আমরা বারবার কেন রাজার সব অপকর্ম মুখ বুজে সহ্য করে যাই? একসময় সব আবার ভুলে যাই চিরদিনের মতো। হয়তো আমরা ভুলে যেতে পছন্দ করি বলে।
আমারও এতো দিনের বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে গেছে। এখন দেখছি শুধু আমি না, দেশ ভর্তি বোগাস ও রাবিশমার্কা লোকজন।
আমি রাবিশ, আমি বোগাস। তুমি বোগাস, তুমি রাবিশ। সে বোগাস, সে রাবিশ। আমরা সবাই বোগাস, রাবিশ।
সুতরাং অর্থমন্ত্রী সাহেব আপনি আপনার কথাটি ফিরিয়ে নিয়ে নতুন করে বলুন-
‘আমি ছাড়া বাকি সবাই বোগাস, রাবিশ।’

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×