somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

দুর্বিষহ

০৭ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুর্বিষহ
প্রচণ্ড একটা চাপ শরীরে মনে, চারপাশে বিপদ যে কোন সময় একটা কিছু হয়ে যেতে পারে। ভয়ে হাত পা পেটের ভিতর ঢুকে আছে। বাড়ির হাবভাব ভালো না। বাড়ি থেকে পালানার চেষ্টা করছি বার বার। পারছি না।
চারপাশের সবটাই অপরিচিত। যে বাড়িতে আছি বিশাল বাড়ি, অনেক ঘর। বেশ খানদানী ভাব কিন্তু খোলামেলা, পরিচ্ছন্ন নয়। সারি সারি দোকানপাটের মতন বাড়ি পিছনে টানা লম্বা উঠান তার পাশে উঁচু দেয়াল লম্বা হয়ে চলে গেছে কতদূর কে জানে। নিজের বাড়ি তবু অচেনা। চারপাশ মেঘলা অন্ধকার সারাক্ষণ। বাবা, মা ভাই এরা আমার আপন কিন্তু কোন জন্মে তাদের চেহারা দেখিনি আগে। কী এক অদ্ভুত অজানা ভয়ের শিহরণ খেলে চারপাশে।

মা এর চেহারা দেখাই হয়নি কখনও। একটা পোটলার মতন কাপড় চোপড়? মাঝে বিছানায় বসে নামাজ বন্দেগীতে ব্যস্ত।নির্ঝঞ্ঝাট সরল সোজা টাইপ মানুষ। ভাইটা হাবলা মতন। মোটাসোটা চুপচাপ। বাবা মানুষটি বদের হাড্ডি, রাজাকার, মুখে চাপ দাঁড়ি, চোখে ক্রোর দৃষ্টি। এছাড়া বাড়িতে অনেক লোক। নাটক করতে এসেছে শহর থেকে নামি একটা দল। তারা সব ব্যস্ত মহড়া নিয়ে। বাড়ির সামনের দুটো ঘরে আছে বেশ ক’দিন ধরে। দেশে চলছে যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরুর সময়টা। সামরিক বাহিনী ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশে। সে সময় আমাদের শহরে এলো এই নাটক দল।
কেউ আমাকে ভয়ের কোন খবর দিচ্ছে না কিন্তু আমার মনে ভয় আর ভয়। ভয়ে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই লুকাতে পারছি না।কোন জায়গা খুঁজে পাইনা এই বিশাল বাড়িতে লুকিয়ে থাকার। আবার মনে হলো আমার চির পরিচিত বাড়ি পুকুর পাড় দিয়ে পাশের বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে থাকতে চাইছি কিন্তু ওরা আমাকে রাখছে না।

বাবা সামরিক বাহিনী নিয়ে বেশী ব্যস্ত নয় জানে ওরা ওকে কিছুই করবে না ওদের সাথে বেশ ভাব করে চলছে। ওদের হয়ে কাজ করছে। সামনের দুটো ঘরে নাটকের লোকগুলো আপন মনে আছে। ওরা টার্গেট বাবার যে কোন সময় শেষ করে দিতে পারে বাবা। ধরিয়ে দিতে পারে আর্মির কাছে তবু ইচ্ছে করে সময় দিচ্ছে। যেন খেলছে বিড়ালের মতন ফাঁদে পরা ইঁদুর নিয়ে। ওরা আছে হাতের নাগালে পালিয়ে যাবে কোথায় এমন ভাব। আমি শুধু সব বুঝে যাচ্ছি মনে মনে আমার ভয় করছে।
বাবার কার্যক্রম একদম পছন্দ নয়।ওদের জানিয়ে দিতে চাই, চলে যাও, বাবা আর্মি লুকিয়ে রেখেছে বাড়ির ভিতর। কিন্ত বলা হয় না সুযোগ আসে না। দেশের এই পরিস্থিতি ওরা কী কিছুই জানেনা? এ সময়ে নাটকের পালা করতে চলে এসেছে এই শহরে, নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে, কেমন অবাক লাগে ওদের ব্যবহার।

ভাই আমাকে সাহায্য করে না, ও কিছু বুঝেই না ভিষন বোকা। জবুথুবু এক মোটা সরল মানুষ। মা সাহায্য করতে চায় কিন্তু কিছু করতে অপরাগ। ভয় পায় বাবাকে ভীষণ। ওরা নির্ভয় বাবার অধীনে চুপচাপ বসে থাকে কোন প্রতিবাদ নাই। আমি শুধু সহ্য করতে পারছি না বাবার অসহ্য আচরণ। আমার শরীর, মন যন্ত্রনায়, ঘৃণায় ফালাফালা। আমি পালিয়ে যেতে চাচ্ছি। আমি টের পাচ্ছি কি হবে পরবর্তী মুহূর্তে। আরো আর্মি আসছে শহরে আমি পালাচ্ছি। বাড়ির তিন চারটা গেইটে পাহারাদার ওরা আটকে ফেলছে আমাকে। আমি ওদের সাথে হাসি হাসি মুখে কথা বলি, অভিনয় করি আপন হওয়ার। ওরা তত আপন হয়ে আমাকে রক্ষা করায় ব্যস্ত বাইরে গেলে বিপদ হবে তাই আমাকে গেইটের বাইরে বের হতে দিল না কিছুতেই। বাড়ির ভিতর পাঠিয়ে দিল।
বাবার বড়ই নিষ্ঠাবান চাকর। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে।

বাবার সামনে বসে আছি আমি আর আমার বান্ধবী। বাবার লোলুপ চোখ বান্ধবীর মুখে। ওর মনের অশ্লীল সব চিন্তা আমি পড়ে ফেলতে পারছি। শরীর অসাড় হয়ে উঠছে যন্ত্রনায়। বাবা একটা গ্লাস তুলে দেয় বান্ধবীর হাতে, মুখে বলে খাও খাও। ও স্থির চোখে তাকিয়ে আছে বাবার মুখে আশ্চর্য দৃষ্টি! আমি ভেবে পাইনা বাবা কিভাবে আমার বান্ধবীর মুখে মদের গ্লাস তুলে দিচ্ছে আমার সামনে!
হঠাৎ বাবার মুখে, বুকে হাতে ধরা গ্লাসের তরল পদার্থ ঢেলে দেয় বান্ধবী। বাবা হিসহিস করে উঠে রাগে, যন্ত্রণায় । এক ঝলক বেকুব হয়ে বসে থাকে এই সুযোগে বান্ধাবী আর আমি মিলে প্রাণপণে দৌড়াই বাঁচার তাগিদে। বাবা আক্রমণ করতে লাফিয়ে উঠে এই সময় সাইরেন বাজে। প্রচণ্ড চাপ মনে শরীরে নিয়ে জেগে উঠি। উহ্! এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। ভাবতে পারি না আমার ওরকম একজন বাবা কখোনো হতে পারে না। তাকে বাবা বলবই না কিছুতেই।
বড়বড় নিঃশ্বাস নিয়ে ফিরে আসি বাস্তবে আপন ঘরে। তবু কেমন ভয়ভয় লাগে। যুদ্ধ সে তো শেষ হয়েছে কত আগে তবু কেন যুদ্ধের ডামাডোল স্বপ্নের ঘোরে তাড়িয়ে বেড়ায় এমন ?
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫১
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×