somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মন চুরির উপাখ্যান

০৬ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই আমি প্রতিদিনই তার প্রতীক্ষায় থাকি,তার কলেজ ফেরার সময়ে-তাকে এক নজর দেখব বলে।
সে আমার দিকে তার পাওয়ারফুল চশমার কাচ গলিয়ে দৃষ্টি ফেলে আমায় দেখে,তারপর মৃদু হাসে,অতঃপর গটমট করে চলে যায়।আর,আমার বুকটা ফাইট্যা যায়...।
ব্যাপারটা তেমন কিছু না,”হাল্কার উপর ঝাপ্সা” হৃদয়ঘটিত ব্যাপার।কিন্তু সুন্দরী চশমাওয়ালী্র হৃদয় বোধহয় কংক্রিটের তৈরি, আমার শত ভালবাসার ঢিলেও তার হৃদয় জানালার কপাট ভাঙ্গেনা!
আমি আশায় থাকি।তবে,বন্ধুরা আমার আশার চারাগাছে নিরাশার পানি ঢালে। বলে-এ বহুত জাদরেল মেয়ে,ওর চেয়ে নাকি কোন “খাম্বা”কে ভালবাসা ঢের ভালো। বন্ধুদের এই আশাহত পুনঃসংলাপ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা।তাই ব্যর্থ মন আর হতোদ্যম হয়ে অবশেষে কাজটি করেই ফেললাম।
কাজতি অবশ্য তেমন কিছু নয়।নাপিতের দকানে গিয়ে আমার অনেক দিনের যত্নে লালিত দু’ইঞ্চি লম্বা চুলগুলো বেশিন দিয়ে এক মুহূর্তে “কদম ছাট” করে ফেললাম।
বাসার ফিরতেই পরলাম তোপের মুখে।আমার মা চোখ দু’খানা কপালে তুলে আমার দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলেম পাক্কা আধা মিনিট, মনে হয়,উনি কন অদ্ভুত জন্তু দেখতে পেয়েছেন।ছোট বোন ভেংচি কেটে ব্যঙ্গ হাসি হেসে বলল, ভাইয়া, তোকে কি চিড়িয়াখানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করবো?
আমি শুধু চুপচাপ শুনি,মুখে কুলুপ আঁটা।
আমার এই “প্রায়” ন্যাড়া মাথা অনেকেরই নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে,সে কথা আমাই হলপ করে বলতে পারি। রাস্তায় চলতে গিয়ে মন্তব্য শুনি- “আজব কাট কাটছে হালায়”, কিংবা “হালায় মুনে অয় পুরাই তারছিঁড়া”।
কেউ কেউ আবার এক-কাঠি সরেস। তাদের রস মাখানো কথা ‘বোধহয় চুরি-টুরি করতে গিয়া ধরা পইরা ব্যাটার এই হাল।
জীবনে কত কি যে চুরি করেছি তার ইয়াত্তা নেই।কি যে চুরি করিনি,এখন সেটাই ভাবছি।চুরির উপর যদি “অষ্কার” টাইপের কোন পুরষ্কার দেয়া হতো, তাহলে সেটা যে আমার গলায় শোভা পেত, তা আর বলতে হয়না।
বিকেলে বাসার বারান্দায় বসে আছি।হঠাৎ করে সে এল-আচমকা কালবৈশাখী ঝড়ের মতো, তাতে প্রকৃতিতে নয়,আমার বুকে ঝড় ওঠে।
কণ্ঠনালী থেকে মিষ্টি কন্থ ভেসে আসে- কেমন আছেন...?
আমি জবার দেবার আগেই তার ব্যঙ্গ টাইপের জবাব, ভাল যে আছেন, তাতো দেখতেই পাচ্ছি।
তারপর বলুন,আপনার এ হাল কেন?
আমি ব্রিবতকণ্ঠে জবাব দেই, কোন কারন নেই। ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি হেসে সে বলে- সত্যিই কোন কারণ নেই?
তারপরই তার কথার রেলগাড়ি উত্তরমেরু থেকে দক্ষিণমেরুতে চলে।
কি ব্যাপার, আপনি আমার গল্পের বই চুরি করেছেন কেন?গল্পের বই পড়বেন, তা চাইলেই পারতেন...ছি! ছি! চুরি! কতদিন থেকে এ চুরি...!? ভালোই পারেন আপনি...!!
সত্যিকারের গেটলক ননস্টপ সার্ভিসের মতো তার কথা।
বই এনেছিলাম,সত্যি কথা। তবে,চুরি করিনি,ফেরত দিতে মনে ছিলনা-এই যা।তবে এ কথাগুলো বলিনা। আত্মসম্মানে ঘা লাগা চুরি বিষয়ক কথার জবাব দেই।
বিশেষজ্ঞ চোর বলে সামান্য বই চুরির জন্য এত বড় অপবাদ মেনে নিতে পারিনা।
আমি তাই তার কথার সূত্র ধরে জবাব দেই- পারিনা, ভালোমতো পারিনা। আমি অনেকদিন ধরেই একটা জিনিস উরি করতে চাচ্ছি, কিন্তু পারছিনা। সাহসী হয়ে কথাগুলো বলে ফেলি।
কৌতূহলি ভঙ্গিতে তার জিজ্ঞাসা-কি সেটা?
আমি খানিকটা বোকার মতো বলে ফেলি-তেমন কিছু না,একটা মন।
সে আমার দেকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়।
আমি তার চোখে আমার চোখের দৃষ্টি ফেলে হঠাৎ করে বলে ফেলি, আমি তোমার মনটা চুরি করতে চাই,সে সুযোগটা কি আমি পাবো?
আমাকে অবাক করে দিয়ে কংক্রিট বাঁধানো হৃদয়ের মেয়েটি মুচকি হেসে জবাব দেয়-আপনাকে
“চুরি করার” অনুমতি দেয়া হল। তবে মন চুরির জন্য এসব বেল মাথা চলবে না...বুঝলেন!
বুঝেছি মানে, আলবৎ বুঝেছি।
মনে মনে বল্লাম,দু’দিন অপেক্ষা করেন-মন চুরি করার অনুমতি পেয়েছি। প্রয়োজনে আপনার জন্য মানুষের মাথার চুল চুরি করে এই বেল মাথা ঢাকবো।
চোর যখন হতেই হবে!!!


(লেখাটি ইতোপূর্বে একটি জাতীয় দৈনিকের ফান ম্যাগাজিনে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:৪৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×