somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সীমা-পাগলি ও বাবু নগরীদের কাল্পনিক গল্প

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




গোলাম রাব্বানী

বন্ধু শাওন বলল ‘তুই বেটা দেখছস জুনায়েদ বাবু নগরী এখন লাল পাঞ্জাবী পড়ে..দেইখা আমার যা খুশি লাগছে’
খুশি হওয়ার কি হইলো ? ‘আরে তুই বুজস নাই ...রঙ...ওই বেটার রঙ এর ছোঁয়া লাগছে, প্রেম জাগতাছে, আমি তো এই রঙের বিনিময় চাই রে গোলাম...এই প্রেমটা দরকার, ওগরো জীবনে রঙ দিলেই ঘটনা ঘটে যাইবো, এত কিছুর পরও এদেশের পাহাড়ী বালিকারা নদীতে হরেক রঙের ফুল ভাসাইয়া প্রেমের আহবান জানায়।’

আমার বন্ধু শাওন খুব খুশি জুনায়েদ বাবু নগরী লাল পাঞ্জাবী পড়ে টক শোতে আসেন এবং উপস্থাপিকাদের সঙ্গে কথা বলেন হাসি মুখে, এরকম একটি টক শোতে এই বাবু নগরী বলেছিলেন, শাহবাগে এক কম্বলের নিচে নাকি নারী পুরুষের অবৈধ মেলা মেশা হয়। একই সঙ্গে জামায়াত শিবির প্রচার করেছিলো শাহবাগে নাকি নারী ধর্ষিত হয় প্রতি রাতে!

এসব কথা কেন? কারণ সম্প্রতি দুটি গল্প পড়ে আমার বাবু নগরী আর শিবিরের সেই মিথ্যা প্রচারনার কথা মাথায় আসছিলো। আমার প্রিয় এক অভিনেত্রী ফোন করে বললেন ‘হাসনাত আবদুল হাই এর গল্পটা পড়ছেন? আমি বললাম কোন গল্পটা? তিনি বলেন ‘আরে প্রথম আলোর বৈশাখ সংখ্যায় আছে ‘টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি’। আমি তাকে জানালাম আমি পড়িনি, তিনি বলনে ‘কি বলেন, পড়েন, পড়ে আমাকে জানিয়েন। আমি বললাম ‘পড়বো এবং পড়ে এ বিষয়ে আমার প্রতিক্রিয়া জানাবো। কিন্তু একই সংখ্যার আরো একটি গল্প পড়ে ফেললাম অদিতি ফাল্গুনী’র ‘উন্মাদিনী কাল’।

টাসকি খেলাম গল্প দুটি পড়ে। একই বিষয় নিয়ে গল্প লিখেছেন তারা। গল্প দুটি পড়ে আমার জুনায়েদ বাবু নগরীর কথা মনে পরলো।

হাসনাত আবুদল হাই এর গল্পে আমরা সীমা নামে একজন নারী পাই। লেখক তার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে ‘দেখতে সে স্রশ্রী নয়, তবে তার চোখে মুখে তীক্ষ্ণ একটা ভাব আছে, নতুন ছুড়ির মত। তার চোখের নিচে ক্লান্তির কালো দাগ, মুখে এক ধরণের রুক্ষতা। আগে সেখানে যে কমনিয়তা ছিল তা মুছে ফেলেছে। ঠোঁট দুটি চকচক করছে যেন গ্লিসারিন মাখানো। আসলে সে ঘন ঘন জিব দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে। গলার নিচে কণ্ঠি বের হয়ে এসেছে, ওপরের দিকে গলার মধ্যে কয়েকটি ভাঁজ, সেখানে ঘামের পানি জমে আছে রুপার চিকন হারের মতো। শুকনো খড়ের মত চুল উড়ছে বাতাসে। প্রায় ময়লা সবুজ ওড়না লাল কামিজে জড়ানো শরীরের ওপরে একটা স্তন ঢেকে রেখেছে, বুকের অন্য পাশে ওড়না কামিজের কাপড়ের ওপর ছড়িয়ে রাখা, প্রায় সমতল দুই দিকেই, হঠাৎ দেখে ছেলে কি মেয়ে বুঝা যায় না।

অন্যদিকে অদিতি ফাল্গুনী’র গল্পে এক পাগলীর দেখা পাই আমরা। লেখক পাগলীকে এভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ‘পরনের জামাটাকে কি কামিজ বলা যায়? হয়তো ছেলেদের শার্ট ছিল অথবা মেয়েদের কামিজ? ঠিক কি ছিল তা এতদিন পর কে বলবে। মূল রংটা কি অফ হোয়াইট টাইপের কিছু একটা ছিল? এখন সেই সাদার উপর অনেকটা ময়লা কালচে ও থিক থিকে আভা ধারন করে গোটা জামাটাকে একটা কোঁচকানো বিন্যাস দিয়েছে। না, হাটুর নিচে সালোয়ার বা সায়া টাইপের কিছু নেই । একটা গোটা জামাই শুধু পরনে। স্তন না অতি ভারি না অতি শীর্ণ। চুলগুলো একটা আরেকটার ওপর জটা পাকিয়ে। স্নান করেনি কত বছর?

যে কারনে বাবু নগরীর কথা বলেছিলাম। কারণ এ গল্প দুটি পড়ে আমার মনে হয়েছে লেখকরা বাবু নগরী ও শিবিরের মিথ্যা প্রচারনার সঙ্গে সহমত জানিয়ে এই গল্প দুটি লিখেছেন। যেমন হাসনাত আবদুল হাই গল্পের এক জায়গায় লিখেছেন ‘ছাত্রনেতারা পলিটিকস করছে আমার সঙ্গে। বলছে, তাদের খাদ্য হতে হবে। শুধু জমির চাচার একার খাদ্য হলে চলবে না। রাতের বেলা মঞ্চের আশপাশে তাদের সঙ্গেও শুতে হবে। তাহলেই হাতে মাইক্রো ফোন দেবে, নচেৎ নয়।’

অদিতি তার গল্পে লিখেছেন ‘নাকি আমি সিটি করপোরেশনের সোডিয়াম লাইটের নিচে ঘুমিয়ে থাকা সেই পাগলিটা, যাকে যখন-তখন তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে পুলিশ, র‌্যাব কিংবা মাস্তান? সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজ ঘাসের ওপর নিরুপায় হয়ে শুয়ে আর সারা দেহে পুলিশের তীক্ষণ দাঁত নখ বিঁধতে বিঁধতে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর থেকে ভেসে আসা গান শুনি বুঝি আমি: পূর্ব দিগন্তে সূর্য্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল?

অদিতি ফাল্গুনি জোর করে একটা গল্প বানাতে গিয়েছেন আর হাসনাত আবদুল হাই জোর করে একটি ভালো গল্পকে মেরে ফেলেছেন ধুপ করে শাহবাগ চত্বরে চলে আসার মাধ্যমে। গল্প দুটি পড়ে কেবলই আমার মনে হয়েছে এ গল্প দুটি অর্ডারি গল্প।

গল্প লেখকরা কি এই বাবু নগরী বা জামায়াত শিবিরের কথাকে সমর্থন করে এই একই গল্প লেখলেন? এ প্রশ্ন থাকলো তাদের কাছে।



একবার তানভীর মোক্কামেলের একটি ছবি সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছিল কারন তার ছবিতে নাকি প্রচুর নৌকার দৃশ্য রয়েছে। আর চাষী নজরুল ইসলামের ছবি ‘দেবদাস’ আটকে দেওয়া হয়েছিল কারণ তার ছবিতে নাকি চুনিলাল বঙ্গবন্ধু কোর্ট পড়েছেন।

এখন কথা হল আমরা এই ধারার রাজনীতি করে গল্প দুটিকে খারিজ করে দিতে পারি না। শিল্পীর মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। এই গল্প লেখকরা হয়তো বলতে পারেন, আমরা একটি শিল্পকর্ম তৈরি করেছি। এর অর্থ একেক জনের কাছে একেক রকম হতে পারে। লেখকের কল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। কিন্তু তাদের গল্পে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়। স্থান কাল এবং পাত্র সব কিছুই মিলে যায়। ফলে এ দায় তারা এরাতে পারেন না।

এই শাহবাগ আন্দোলনের রাজনৈতিক সমিকরণ নিয়ে বৈচিত্রময় গল্প ,উপন্যাস, প্রবন্ধ, এবং দুরদর্শি চিন্তা আপনাদের কাছে আমরা আশা করি। যেমন আমরা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলে কোঠার সিপাই’ উপন্যাস পেয়েছি। বা আহমেদ ছফার ‘পুস্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরান’ একটি উদাহারণ হতে পারে।


শেষ করবো অদিতি ফাল্গুনির গল্পের একটি অংশ দিয়ে ‘আচ্ছা একটা ব্যাপার...ইতস্তত নরম গলায় শ্রাবস্তী বলে, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার আমাদের করতেই হবে। নাহলে বাংলাদেশ পাপমুক্ত হবে না। আমার পিসি ফোন করেছিলেন। ওনাদের উপজেলায় আজো দুইটা মন্দির ভেঙ্গেছে। তা-ও না মানলাম। লাশ পড়ছে। মানলাম। কিন্তু বিচারের পরে ধরো এই পাগলি...ও কি খেতে পাবে?’

‘এটা তোর খুব রাজাকার মার্কা কথা হইল। এটা তো পিকিং বাম মার্কা কথা।’ মোস্তাফিজ খেপে উঠল।

হাসনাত আবদুল হাই এর গল্পটা নিয়ে সকলের আপত্তি। কারণ এখানে একটি রাজনৈতিক দলের নেতার চরিত্রও আছে। কিন্তু পাগলীর গল্পে কোন রাজনৈতিক নেতা নেই। এ কারণে এ গল্পটি নিয়ে কারো আপত্তি নেই। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে দুটি একই গল্প। দুটি একই সমস্যা। শুনেছি অনেকে খেপে গিয়ে প্রথম আলো পত্রিকা পুড়িয়েছেন। আমাদের এভাবে খেপে উঠলে হবে না। প্রথম আলো পত্রিকা পুড়িয়ে কি লাভ? পত্রিকা পোড়ানোর রাজনীতি এদেশে কারা করে আমরা জানি। প্রথম আলো কেন এ ধরনের গল্প ছাপানোতে সমর্থন করলো সে প্রশ্নও থেকে গেল আমার। আর তারা যদি বিশ্বাস করেন তারা শিল্প ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী তাহলে তারা আবার ক্ষমা চাইলেন কেন? এটা কোন ধরণের ভন্ডামী? তাহলে কি আমরা ধরে নিবো প্রথম আলো পরিকল্পনা করেই এ গল্প দুটি প্রকাশ করেছেন। তাতে তাদের কি লাভ? উত্তর জানা নেই...


লেখক : সাংবাদিক ও নাট্যকার
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×