আমার বাবা শবেবরাতের দিনে জন্ম গ্রহন করেন।আমরা বছরে দুইবার তাঁর জন্মদিন পালন করি। একবার হিজরীসনের শবেবরাতের দিন, আর একবার ৩১ ডিসেম্বর। আজকে তিনি ৭৩ বৎসর আল্লাহর ইচ্ছায় পার করছেন।
আমি আমার বাবাকে তাঁর ভাল মন্দ (একটু রাগ বেশী) সব মিলিয়ে অনেক অনেক ভালবাসি। আমার বাবা আমার দেখা শ্রেষ্ঠ মানুষদের মধ্যে একজন। তিনি সারাটা জীবন অত্যন্ত স্বচ্ছতার ও পরিশ্রমের সাথে জীবনটা অতিবাহিত করছেন।
একজন অর্থনীতিবিদ হয়েও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবিকতার বিষয়টি বিবেচনায় প্রাধান্য দিয়েছেন। বানিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে মন্ত্রনালয়ে যখন ছিলেন তখন তাঁর জীবন ছিল একজন অতি সাধারন মানুষের মত। ইরানে তিনি কর্মাশিয়াল কাউন্সেলর হয়ে যখন গিয়েছিলেন তাঁর কাজে এবং ব্যাবহারে সবাই অভিভুত ছিল। চার্জ দ্য আফেয়ারর্স হিসাবে বেশ কিছুদিন থাকার পর বাংলাদেশে এসে কন্ট্রোলার অফ এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট এবং চীফ কন্ট্রোলার অফ এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ইন চার্জ হিসাবে ছিলেন সরকারী চাকুরী জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।
প্রায় সব মহাদেশ আর কত দেশ ঘুরেছেন তা বলাই বাহুল্য কিন্তু এখনো তাকে দেখলে সেই সহজ সরল রংপুরের একজন সাধারন মানুষ মনে হয়। তাঁর মধ্যে রংপুরের জনগনের বিশেষ করে তাঁর গ্রামের লোকজনের প্রতি অন্য রকম ভালবাসা। সেই তাঁর ছাত্র জীবনে কে কবে তাঁকে কি কি সাহায্য করেছিল তার সব কিছুই এখনও মনে রেখেছেন । সেই সমস্ত সাহায্যকারীর নাতি পুতিরাও যখন তখন আসেন সাহায্য পেতে …।বাবাকেও দেখছি অকাতরে তাঁদের জন্য করে যাচ্ছেন। আমরা হয়ত অনেককে চিনিই না। পড়ে জানতে পারি যে বাবা তাঁদের জন্য কি কি করেছেন আর করে যাচ্ছেন।
দেশের বাড়ির জমি থেকে যা পান তা থেকে একটা মাদ্রাসা চালান। সেই মাদ্রাসায় ইংরেজ়ী , অংক এবং বাংলা পড়া বাধ্যতামুলক। মোবাইল ফোন থাকাতে এই কয় বছর তাঁর অনেক সুবিধা হয়েছে। আগে ঘন ঘন বাড়িতে যেতে হতো এইসব দেখা শোনার জন্য এখন মোবাইলেই সব খোঁজ খবর রাখছেন। নিত্যদিন তাঁর কি পরিমান যোগাযোগ করা হয় কেউ যদি তাঁর সাথে এক বেলা অফিসে যায় তখনই টের পাওয়া যায় । সকাল ৮ টা থেকে অফিস পৌছাঁনো পর্যন্ত শুধু দেশ থেকে ফোন আসতে থাকে বিভিন্ন কারনে। আর তিনি গাড়ীতে বসেই অফিস যেতে যেতেই সেই সব সারেন।
সরকারী চাকুরী থেকে রিটায়ার করার পর জয়েন করেন ঢাকা চেম্বার্স অফ কমার্সে। তখন থেকেই আছেন ঢাকা চেম্বার্সের সাথে। নিরন্তর চেষ্টা ঢাকা চেম্বারকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত করা।
বাবাকে দেখিছি শুধু চাকুরী করার জন্য কাজ করেন না তিনি কাজগুলিকে ভালবাসেন আর তাঁর আশে পাশের মানুষ গুলোকে শুদ্ধভাবে বাংলা ও ইংরেজী লেখাতে অনুপ্রানিত করেন। এই ভাবেই চলে যাচ্ছে তার দিবস ও রজনী। তিনি বর্তমানে ঢাকা চেম্বার্স বিজনেস ইনিষ্টিটিউটের(ডিবিআই) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্ট্রর ।
আমার বাবা ইংরেজী, বাংলা, আরবী, ফারসী এবং উর্দূ ভাষায় অনেক দক্ষ একজন মানুষ। উনি একজন অর্থনীতিবীদ হওয়া স্বত্বেও সব রকম বই পড়েন এবং কাজের বাহিরে পড়তেই ভালবাসেন। বাবাকে দেখছি যখন আমাদের প্রিয় ধর্মগ্রন্থ আল কোরান থেকে কোনো আয়াত পাঠ করে তাঁর তর্জমা করেন মুগ্ধ হয়ে সবাই শোনেন। তার বিশ্লেষন আমাকে মুগ্ধ করে। আপনারা দোয়া করবেন তিনি যেন নতুন প্রজন্মের মাঝে তাঁর এই প্রকাশকে অব্যাহত রাখতে পারে।
দানেই তাঁর প্রশান্তি। মাঝে মাঝে মনে হয় উনি ওনার ছেলে মেয়েদের চেয়ে অপাত্রে বেশী দান করছেন। গ্রামের লোকজন সবাই সুবিধার না। ভীষন আলসে। আমার বাবা নিজ়ে অনেক পরিশ্রম করেছেন জীবনে এবং ছেলে মেয়েদেরকেও সেই শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু যারা বাবার কাছে সাহায্য নিতে আসে আমার দেখে মনে হয় এরা অনেক কর্মবিমুখ গোষ্টী। আর আমার নিজস্ব রিসার্স প্রমান করে রংপুরের বেশীর ভাগ লোক অনেক আলসে। অনেক জায়গায় গেলেই দেখা যায় জুয়া খেলা এবং একাধিক বিবাহ নিত্য নৈ্মিত্তিক ব্যাপার। অল্প বয়সে মেয়েদের বিবাহ দেওয়া এবং মহিলাদেরকে মারার জন্য রংপুর একটি আখড়া বলা যায়।যৌতুক ছাড়া এখনো একটি গরীব মেয়ের বিবাহ দেওয়া দুষ্কর।
কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের অনেক জমি আছে কিন্তু তাঁরা পরিশ্রম করে অনেক ফসল ফলায়ে জীবন নির্বাহ করতে পছন্দ করে না। তাদের রোঁদ ই সয়না। জীবনে সব কিছু সহজ ভাবে পেতে চায় …………। কিন্তু এর পড়েও রংপুরের মানুষ এত সহজ সরল যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই জিনিসটি আমাকে সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট করে। আমার বাবা তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহারন।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি সুস্থ শরীর নিয়ে দীর্ঘজীবি হউন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পরিবারের সকলকে নিয়ে সুন্দর ও সত্যের পথে থেকে আনন্দে দিন কাটান
আপনারাদের কাছে আমার ছোট্ট কামনা আপনারা সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন তিনি যেন সুস্থ ও সুন্দর থাকেন জীবনের শেষদিনটি পর্যন্ত ।