somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেইসব দিনরাত্রি-১

০৫ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাগইতিহাসিক হাসেরা প্যাক প্যাক করছে আর রাজার বেটা ভাবছে তার গুনগান চলছে। সেই তরুন হাসকে নেউল সাপ আর চিল থেকে বাচিয়ে আমরা আজ রাজার বেটাকে খুশী রাখতে শিখে গেছি। হাস জল থেকে আলাদা করে দুধ তুলে নিচ্ছে আমরা অবাক হচ্ছি, আর বলছি দেখেছো এভাবে বাচতে হয়। হাস সারাদিন পানিতে ভিজে শুকনো গায়ে উঠে আসছে আমরা বলছি দেখেছো এভাবে থাকতে হয়। আমার সোনার বাংলায় এভাবে থাকতে হয়, দেখবে, শুনবে বুঝবে, গায়ে মাখাবে না। গায়ে মাখালেই তুমি আর হাস হলে না। রাজার বেটা আর তোমার কথা শুনবে না। রাজার বেটা হয়ে যাবে বাজপাখী, তুমি, আমি, আমরা বাজপাখী থামানোর মন্ত্র জানি না। তবে বাজপাখী খুশী রাখতে জানি। নিজের পিঠ বাচিয়ে অন্য পিঠ দেখিয়ে দিয়ে আমরা রাজার বেটাকে খুশী করে ফেলি।
রাজার বেটার আমাদের কথা শুনা খুব জরুরী, হাত কাচুমুচু করে হোক, মুখ একটু লাল করে লজ্বা নিয়ে হোক। রাজার বেটার গুনগান করতে হবে অবিরত। আমাদের হাস হয়ে থাকতে হবে অবিরত।

কঠিন জিনিষ নিয়া কচলানো শেষ। আমি ছোট কইলজার মানুষ কঠিন জিনিষ এ কামড় দেই খাই না।

আহারে পিতলের কলসী কথা বলিস না। কথা বলিস নারে কলসী কথা বলিস না, প্রতি সপ্তাহের সোমবার অথবা মঙ্গলবার আমাদের শরীকী বাড়ীর উঠোনে এসে পিতলের কলসী কাধে নিয়ে নাচতে নাচতে যিনি এই গানটা গাইতেন তিনি একজন প্রাগইতিহাসিক ভিক্ষুক। বেটে, চিকন মেদবুড়ি হীন একজন নিস্ব মানুষ। যার সম্বল ওই পিতলের কলস আর গলার ওই একটাই গান। সবাই জড়ো হয়ে ওই একটাই গান শুনতো ওই একটাই নাচ দেখতো্। একবার শেষ হয়ে গেলে আবার আবার আবার না কোন অনুরুধ নয় চাল হাতের পটে করে দাঁড়িয়ে থেকে তাকে অর্ডার দেয়া হতো। লোকটা ব্যস্ত হতো ক্লান্ত হতো এবং নেচে যেতো। আজকে এতো বছর পরে আজ আর তার চেহারা আমার মনে পড়ে না, তবে সেই কলস বাজিয়ে গাওয়া গানটা কানে বাজে। অবিরত বাজে মাঝে মাঝে, মনে হয় আমিও বাজাই আর বলি, আহারে পিতলের কলস কথা বলিস না। কথা বলিস না
যে মানুষটা শ্রদ্ধার সহিত ভিক্ষা করতো আর আমাদের ফু দিতো সেই মানুষ টার নাম মনে আছে। আদৌ জানি না সেই মানুষের নাম কি সত্যি সত্যি এটাই ছিলো কিনা। মদই ফীর সাদা একটা ময়লা পাঞ্জাবী পড়ে তিনি যখন সন্ধ্যা সন্ধ্যায় আমাদের উঠোনে দাড়াতেন তখন আমাদের কাজ ছিলো তার সামনে ভীর করে তার ফু শরীরে মাখিয়ে নেয়া। সারাদিন খুট খুট করে মানুষটা সুপোরী চিবুতেন তাই ফু এর সাথে লাল লাল সুপোরী গুড়ো আমাদের নাকে মুখে চোখে পড়তো, যার গায়ে যত বেশী গুড়ো জমা হলো তার জন্য তত বেশী মুশকিল আছান ফু কাজ করবে। এই অদম্য বিশ্বাস নিয়ে কোন দিন দুই তিনবার তাকে ফু দেয়ার কাজ সমধা করতে হতো। একবার আমাদের এলাকার মোকামের বাক্স চুরী করতে গিয়ে সেই ফীর ধরা পড়ে গেলেন এবং তিনি পারালাইজড হয়ে গেলেন আর তার মুশকিল আছান ফু কাজ করা বন্ধ করে দিলো।
বদিরা কিছু দেন গো বদিরা, আফনেরা কিছু দিলে আমি খাইবো আমার বউ এ খাইবো বউ এর বাচ্ছারা খাইবো। উঠোনএর এক কোনে বসে মৃগী রোগী এই ভিক্ষুক অবিরত এই লাইন কয়টা বলে যেতো। আর সবাই তার কথায় হাসতো বিশেষ করে যখন সে বলতো, বউ খাইলে বউ এর বাচ্ছারা খাইবো। সেই কথার অর্থ বুঝার বয়স তখন আমাদের হয়নি। আমরাও না বুঝে হাসতাম আর তাকে কিছু দিয়ে বিদায় করে দিতাম, সে হেটে যেতে যেতে একই কথা বলতো, আমি খাইবো আমার বউ এ খাইবো বউ এর বাচ্ছারা খাইবো। বদিরা কিছু দেন গো বদিরা। ভিলহুকের নাম হয়ে গেলো বদিরা ভিক্ষুক।

তিনি আসতেন যখন সন্ধ্যা হতো ভোরের মতন আলো নিয়ে। এবং তিনি প্ররিশ্রান্ত, ক্লান্ত হয়ে বসতেন উঠোনের ঠিক মধ্যখানে, যেখানে বসলে সকলের চোখে আসবে তিনি এসেছেন। তার সাদা লম্বা দাড়ী এবং তার সাদা ময়লা লম্বা পাঞ্জাবী কাধে একটা ভারী ব্যাগ যাতে আছে সারাদিন এর সঞ্চয়। আমরা বাচ্ছারা যখন জেনে যেতাম তিনি এসে গেছেন তখন যার যার পটে তার জন্য চাল নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতাম। আর শুরু হয়ে যেতো এবার কেচ্ছা বলো। তিনি আমাদের একটাই কেচ্ছা বলতেন কারন তার অন্য সঞ্চয় এর মতো তার ওই একটাই কেচ্ছা সম্বল ছিলো। আমরাও শুধু ওই একটাই কেচ্ছা শুনার জন্য অপেক্ষা করতাম। গোল হয়ে হেসে হেসে মাঠিতে লুঠিয়ে পড়ে ওই একটাই কেচ্ছা কয়দিন পর পর শুনে যেতাম। এবং তিনি ক্লান্ত প্ররিশ্রান্ত সামান্য সেই চালের জন্য আমাদের সেই একই কেচ্ছা বলে যেতেন। সেই কেচ্ছা আবার সুর করে বলা হত পুতি পড়ার মতো করে। আমরা মুখস্ত করতাম যতটুকু বুঝা যেতো
ততটুকু, কিন্তু কারো কাছে পরীক্ষা দিতে হতো না বলে আবার ভুলে যেতাম। তিনিও আমার মনে থেকে যাওয়া প্রাগইতিহাসিক ভিক্ষুক দের একজন।
আমার ভিক্ষুক কথন সমাপ্ত করে দিলাম। কারন উনাদের কাউকেই আমরা সেই সন্মান দেই না মানুষ হিসেবে যা তাদের প্রাপ্য। মনে হলো এই লেখারও কোন অর্থ থাকে না। যদিবা কোনদিন না মানি, না করি। এই লেখার অন্য একটা কারন, সেটা হলো, যখন লন্ডন এলাম অখানাকার ভিক্ষুকদের দেখলাম, তখন আমার সেই কথাই মনে হলো আমাদের তারাও তো কিছুর বিনিময়ে কিছু চেয়েছে। হয়তো যতসামান্য পেয়েছে, কিন্তু মানুষ হিসেবে এই দুনিয়ায় সন্মান!! সেটা কখনই দেখে নি। হয়তো মাঝে মাঝে পশুদের থেকে নিজেদের আলাদা করতে পেরেছে অথবা পারেনি, মানুষ মনে হয় হয়ে ঊঠেনি কখনই। ভিক্ষুক থেকে চলে গেছে জগত থেকে।
চলবে...
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×