অবশেষে...
এ সময়ের মধ্যে পৃথিবী কতবার সূর্যকে ঘুরে এলো
কত জীবন ঝরে গেলো,কত জীবনের আবির্ভাব ঘটল
আর কতবার-,কতবার নির্বাচিত দুঃখ-কষ্ট প্লাবিত হল মহাপ্লাবনে
তার কোনো হিসেবই আমার কাছে নেই ।
মাটির বুকে জন্ম নেয়া ঘাসফুল গুলো অবিরাম ভিজছে শিশির ফোঁটায়
আর জানালার পাশে বসে লিখছি তোমাকে চিঠি ।
বছর চারেক আগেই হবে-
ঢাকা ছেড়ে আসা নাইটকোচটা নামিয়ে দিয়েছিলো শেষরাত্রির এই স্টেশানে
সে রাতেও শিশির ঝরে ঝরে অবিরাম ভিজিয়ে দিচ্ছিলো
পিচঢালা রাস্তা আর এর পাশে মাটির বুকে জন্ম নেয়া ঘাস ফুলগুলোকে ।
লাম্পপোস্টের সোডিয়াম আলোর সাথে গাঢ় আঁধারির মেলামেশা দেখতে দেখতে
সেই প্রথম ভেবেছিলাম-,এই বুঝি পুরো জীবনের ধ্রুবচিত্র !
সে রাতেই প্রথম ভেবেছিলাম জীবনগুলো কেনো বয়ে যায় যমুনাধারা !
এরপর কেটে গেলো কতকটা সময়...
জীবনের বাঁকে চলতে চলতে এরই কোন ফাঁকে যে হৃদয়ের কার্নিশে এসে বসেছিলে-
স্বপ্ন-সম্ভাবনার স্পর্শে এঁকে গেলে ভালোবাসা সেতো আমার কাছেই জন্মান্তরের বিস্ময় !
তারপর কতকিছু হলো-;হলো দু’জনার ভেতরে...
এরপর কতকটা পথ একসাথে হাঁটতে হাঁটতে তুমিও যেদিন একলা হাঁটতে শিখলে
একলা হেঁটেই ছুঁলে বিপরীত মেরু...
সেই দিন আমিও বুঝেছিলাম জীবনগুলো কেনো বয়ে যায় যমুনাধারা !
রক্ত আর মাংসের দাহে সেইদিন কতটুকু জ্বলেছি,কতটুকু জ্বালাতে চেয়েছিলে-
সেইসব হিসেবে না গিয়েই আজ রাতে আমি আমি চলে যাচ্ছি ।
চিঠিটা যখন হাতে পৌঁছবে,দূরত্বের হিসেবে ব্যাবধান তখন
তিনশত পঁয়ষট্টি কিলোমিটার ।
পাঁচ মিনিটের দূরত্বে থেকেও যে আমরা পৌঁছেছিলাম
মঙ্গল গ্রহের চেয়েও অধিক কোনো দূরত্বে
সে দূরত্বের কাছে এতো নিতান্তই নগণ্য !
সামান্য একটা টিকিটে দূরত্বের কী রূপই আর আঁকতে পারলাম বল ?
তবুও এই সন্ধিক্ষণে,স্মৃতির জানালায় ফিরে ফিরে আসছে
যৌবনের রঙে রাঙানো ঝলমলে নকশাগুলো
ফিরে ফিরে আসছে, আমাকে এক পলক দ্যাখার জন্য তোমার অন্তহীন অপেক্ষা
অভিমান,অনুরাগগুলো ।
ফিরে ফিরে আসছে...
আমি আজ এই ঝর্নার জলে ভাসিয়ে দিয়ে যাবো সেইসব অভিমান,অনুরাগগুলো
ভাসিয়ে দিয়ে যাচ্ছি সেইসব দিনরাত্রি !
-তোমার আমার এই দূরত্বটুকু অজস্র জীবনেও অতিক্রম হবেনা আর;
দূরত্বের চেয়েও দূরত্বের এই দূরত্বটুকু নাহয় অনতিক্রম্যই থাকল !
ভালো থেকো...
২৪ ডিসেম্বের ২০১০
মধ্যরাত্রি,বরগুনা ।
!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৫২