somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বজ্র আঁটুনি মানে কিন্তু ফস্কা গেরো!!

০৭ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চঞ্চল স্বভাবের কারণে আমাকে অনেক ভুগতে হয়েছে। হুটহাট সকলের সাথে মিশে যেতাম। সন্দেহবাতিক ছিলামনা, মানুষকে প্রথম পরিচয়ে অবিশ্বাস করার আগে বিশ্বাসই করতাম, বন্ধু-সার্কেলটাও তাই ছিলো বিশাল। অনেকে অনেকসময়ে চামে ব্লাফ দিয়েছে, আবার অনেকে বিপদের সময়ে না-চাইতেই হাত বাড়িয়েছে। একবার অসুখের কারণে আমি অনুপস্থিত থাকাকালে স্কুলে সিনিয়ার ক্লাসের সাথে আমাদের ক্লাসের কিছু মেয়ের বেশ কথা কাটাকাটি হয়েছিলো যেটা পরে সিস্টারের(হেডমিস্ট্রেস) কানে যায়। সিস্টারের নির্দেশ মোতাবেক ক্লাসটিচার একটা লিস্ট বানালেন, সবার উপরে ছিলো আমার নাম। অথচ আমি ঘটনার দিন উপস্থিতই ছিলামনা!! বুঝেন, ছোটবেলা থেকেই এমন অবস্থা আমার, কোনও গন্ডগোল মানেই নির্দ্বিধায় সবাই ধরে নেয়, নিশ্চয়ই আমি সেখানে কিছু করেছি!

যাইই হোক আমার জীবনের সবচেয়ে বড় লার্নিং হয়েছে রোকেয়া হলে থাকাকালীন সময়ে, যেসময়ে আমি আইবিএ র ছাত্র ছিলাম। আমাকে নিয়ে অনেকেরই টেনশন ছিলো, বুঝি গোল্লায় যাবো। হয়তো গিয়েওছিলাম গোল্লায়, কারণ সিজিপিএ ছিলো যাচ্ছেতাই। কখন কাদের সাথে মিশেছি, কোনও বাছবিচার করিনি। হুইমজিক্যাল হওয়ার কারণে এক্সপেরিমেন্টও করেছি অনেকবার। যেমন একদিন হলে ঢুকে দেখলাম বামপন্থী এক সংগঠনের মিটিং হচ্ছে। কাউকে তখনও চিনতামনা। ওদের সেই মিটিং এ বসে পড়লাম। মিটিং শেষে ওরা হলের কিছু ইস্যু নিয়ে হলের ভেতরেই দুইরাউন্ড মিছিল করলো। আমিও মিছিল করলাম। এরপর রুমে এসে, খেয়েদেয়ে ঘুম। এরইমধ্যে কিন্তু আমার মায়ের কানে চলে গেল আমি “মিছিল” করেছি (কিভাবে কানে গেল সেটা বেশ লম্বা এবং অপ্রাসঙ্গিক কাহানি তাই বলছিনা)। যেহেতু চঞ্চল ছিলাম, আমার সম্পর্কে খারাপ কথাটাই সবাই বিশ্বাস করতো আগে। এরপর পরিবারের মুরুব্বিদের থেকে কিঞ্চিত ডলা তো খাইলামই। এরকম ভ্যালিড/ইনভ্যালিড নানান কারণে এই জীবনে ডলা কম খাইনাই।

কিন্তু আমার বাবা-মা আমাকে বেঁধে রাখেননাই। আমাকে ওনারা হলে না-ও রাখতে পারতেন। আমি বোনের বাসাতেই থেকে পড়াশুনা শেষ করতে পারতাম। রেজাল্ট তাহলে ভালো হতো, নো-ডাউট। কিন্তু আমি আজকে যেই মানুষটা, সেটা হয়তো হতামনা। অনেকের চোখে আমি মানুষটা হয়তো ভালো নই, কিন্তু নিজের জীবনে “ঠেকে ঠেকে” আমি যা-কিছু শিখেছি; হলে না-থেকে গার্জিয়ানের ছত্রছায়ায় থাকলে সেই শেখার সুযোগ পেতাম কিনা সন্দেহ। বলা ভালো, ছোটবেলায় প্রচুর মাইর খেয়েও আমি নামাজ ফাঁকি দিতাম। সেই ফাঁকিবাজ আমিই হলে প্রবেশ করার সাথে সাথে প্রথমেই নামাজ পড়া ধরলাম। বিশদ বর্ণনায় না গিয়ে এক-কথায় বলতে পারি, হলে থাকার সুবাদে আমি বহু-বহু কিসিমের মানুষের সাথে মিশেছি। চাইলে বহু বহু অভ্যাস/বদভ্যাস রপ্ত করতে পারতাম। কেউ দেখতোও না, কেউ আটকাতোও না। কিন্তু আমি সজ্ঞানে, আমার বিবেকের কাছে নিজেকে সাক্ষী রেখেছি সবকাজে। অন্যের চোখে আমি কেমন সেটা দিয়ে নিজেকে না-মেপে, নিজের বিবেকের কাছে আমি কেমন, সেই বিবেচনার রাস্তা ধরেই বরাবর হেঁটেছি।

কথায় বলে “বজ্র-আঁটুনি ফস্কা গেরো”। যে গোল্লায় যাবার, তাকে চার দেওয়ালের কড়া পাহারায় বেঁধে রাখলেও সে ধান্দা খুঁজবে বিপথে যাওয়ার। কাজেই ছেড়ে দিলে, মানুষ চরে-বরে খাবে, নিজের বিবেক বলে কোনও বস্তু যে আছে সেটা চিনবে, বাস্তবতার সাথে নিজেকে এডজাস্ট করবে।

নাস্তিকরা লেখালেখি করে বলে আমি “ভয়ের চোটে” মুক্তমনা ব্লগে যাবোনা, পাছে যদি আমার ঈমানে ক্র্যাক হয়? কে যেন একটা ভিডিও আপলোড করেছে বলে আমি ইউটিউব দেখবোনা, পাছে যদি আমি সেই ভিডিওর কাহানি বিশ্বাস করে ফেলি? ফেইসবুকেই আমি কাউকে ঢুকতে দিবোনা, কারণ সেই ফেইসবুকে যদি আমাকে নিয়ে কেউ কার্টুন বানিয়ে তামাশা করে? দিগন্ত টিভিতে কি যেন দেখায় ছাইপাঁশ, আমি সেই চ্যানেল অন্ধকার করে রাখবো, কারণ বলা যায়না যদি ওরা আমার ব্রেইনওয়াশ করে? আমারদেশ/আমারব্লগ কিংবা যধু মধু রাম শাম যেখানেই আমার রেড-এলার্ট এর আশঙ্কা হয়, সেটাই আমি তাহলে তালাবন্ধ করে রাখি, পাছে আমি ওদের ভিক্টিম হয়ে যাই??—এই কাজগুলা কি আমাকে সাজে?

যখন আপনি একজন অভিভাবক, তখন আপনাকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে আজকাল কিছুই চাপা থাকেনা। আপনি কত আর লুকাবেন, কেনই বা লুকাবেন? প্রক্সি দিয়ে কি কেউ ইউটিউবে যাচ্ছেনা? নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন, তাই আমি ইউটিউব বন্ধ হওয়ার পর প্রথম সুযোগেই প্রচন্ড বোরিং সেই ভিডিও ডাউনলোড করেছি, যদিও দুইমিনিটের বেশি দেখতেই পারলাম না। আমি নিশ্চিত ইউটিউব ব্লক না করলে আমি সেই জিনিস ডাউনলোড তো দূর, দেখার কথা চিন্তাইই করতাম না!!

সাঈদীর রায়ের সময়ে যখন ফেইসবুক টুইটার বন্ধ ছিলো, আমি ঠিকই ফেইসবুকে ঢুকেছি আরও অনেক বাংলাদেশীর মত। তাহলে? আটকে রেখে লাভটা কার, ক্ষতিটাইই বা কার? বরং কোনওকিছু “লক” করে রাখলে সেটা নিয়ে জল্পনা কল্পনা বেশি হয়, মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়, না-জানি তাতে কী ছিল!! [সুকুমার রায়ের পাগলা দাশুর প্রথম গল্পটাই কিন্তু এই কৌতুহলের প্রেক্ষিতে একটা তামাসা ছিলো, পারলে পড়ে নিয়েন]।

এখন অনেকে বলছে, নিশ্চয়ই দিগন্ত টিভির কাছে কোনও “গণহত্যা’র” (????) ফুটেজ ছিলো!! নিশ্চয়ই আমার-দেশ পত্রিকা আসলে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির ছিলো!! ইত্যাদি ইত্যাদি গুজব কিন্তু আপনার “বন্ধ করার” মূল উদ্দেশ্যটাকেই একসময়ে ছাড়িয়ে যাবে। হাজার হোক, আমাদের দেশের মানুষের মিডিয়ার উপর ভরসা কমতে কমতে এতটাই নীচে নেমে গিয়েছে যে আমরা এখন খবরের চেয়ে গুজবে বেশি নাচতে থাকি।

প্রিয় অভিভাবক, আমাদেরকে বড় হতে দ্যান। কত আর আমাদের ফিল্টার করে, ব্লেন্ডারে পিষে জাউভাত খাওয়াবেন? আমরা নিজেরাই নিজেদেরটা এবার বুঝে নেই? আমাদের উপর বিশ্বাস রাখেন, আমরা জঞ্জালের ভীড় ঘেঁটে সত্যটা বেছে নিতে জানি। জানালা খুলে দ্যান, ভেতরে আসতে দ্যান যাবতীয় তথ্যের হাওয়াকে। কালো ধোঁয়া, ঝড়ো হাওয়া সবকিছু নিজেদের গায়ে মেখেও, আমরা তার ভেতর থেকে ঠিকই খুঁজে নিতে পারবো নদীতীর ছুঁয়ে ভেসে আসা অমলিন আমেজ কিংবা তাজা ফুলের সুঘ্রাণ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×