somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুমনের ভূতপ্রীতি

০২ রা জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন আমি আর সুমন বল খেলে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থা। দু’জনের মধ্যেই আজ ভয়, বাড়ি গেলে মার খেতে হবে।কিভাবে মার খাওয়া থেকে বাঁচা যায় সে বিষয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা করতে লাগলাম। কিন্তু কোন উপায়ই খুঁজে পেলাম না।
দু’জনে রাস্তা দিয়ে হাটছি পায়ের আওয়াজগুলোও ভূতোরে মনে হচ্ছে! গাছের শুকনো পাতার মর্মর আওয়াজটাও যেন ভয় পাইয়ে দিচ্ছে! ক্রমে চারদিকে নিকশ কালো অন্ধকার হয়ে এলো। আমার বুক দুরু দুরু করতে লাগল। আমি এমনিতেই ভীতু, তার উপরে এমন পরিবেশ! তাই সুমনের হাত ধরে ভয়ে কাপছি!
আমার মতো সুমন কিন্তু অতো ভয় পেতো না।ওর ভূতে বিশ্বাস নেই।ভূতের কথা বললে সে বলে, ‘যে দিন ভূত এনে সামনে দেখাতে পারবি, সেদিনই বিশ্বাস করব।আসলে ভূত-টূত বলে কিছু নেই!’ ওকে কতবার ভূতের গল্প শুনিয়ে ভয় দেখাবার চেষ্টা করেছি,কিন্তু সব চেষ্টা বৃথা হয়েছিল।
আমরা যখন গগণ শেখের বাড়ির সীমানায় পৌঁছলাম ঠিক তখন ঝোপ থেকে একটা সাদা মূর্তি বেরিয়ে আসল। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেল।প্যান্টটা ভিজে গেল কিনা বুঝলাম না! ‘ভূত, ভূত’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
ভূতটা আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। ভয়ে আমি পিছিয়ে যেতে লাগলাম। ভূতের কথা শুনে সুমনের আগ্রহ আরো বেড়ে গেল!সে বলল, ‘ওহহো, জীবনে কখনো ভূত দেখিনি, আজ আমাকে ভূত কেমন দেখতেই হবে!’ এ কথা বলে সে ভূতের দিকে এগিয়ে গেল! আমি তাকে বার বার নিষেধ করলাম, যাসনে, ভূত তোর ঘাড় মটকাবে।কে শোনে কার কথা!সে এগিয়ে গেল ভূত দেখতে।
তাকে এভাবে হঠাৎ করে এগিয়ে যেতে দেখে ভূত বাবাজিও হয়ত ভয় পেয়েছে। তাই বার বার বলতে লাগল, হাঁউ মাঁউ খাঁউ মাঁনুঁষেঁরঁ গঁন্ধঁ পাঁও।যাঁরে পাঁবোঁ কাঁছেঁ ঘাঁড় মঁটঁকেঁ নেঁবঁ গাঁছেঁ। সুমন ভূতের কাছে গিয়ে বিনয়ের সঙ্গে বলল,‘ভূত ভাই আমি কখনো ভূত দেখিনি, আপনি যদি দয়া করে একটু আপনার চেহারাটা ভালো করে দেখাতেন তাহলে হয়ত আমার চিরদিনের আশা পূরণ হতো।’
তখন ভূত বলল, হেঁহ্ঁহেঁ আঁমাঁরঁ কোঁনঁ চেঁহারা নেঁই, শঁরীঁরঁ নেঁই।আঁমিঁ থাঁকিঁ বাঁতাঁসেঁ, হিঁহঁহি। সুমন ছিল নাছোড়বান্দা সে যা বলে তাই করে ছাড়ে। আমিও তা টের পেয়ে গেলাম! কিন্তু তবুও ভয়ে শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছিল!
সুমন ভূতের চেহারা দেখার জন্য জোরাজুরি করতে লাগল।আমি ভাবলাম ভূতের হাতে বুঝি ওর প্রাণটাই যায়! ঠিক তখন ভূতের ভয়ার্ত কন্ঠে শুনলাম, সাঁবঁধাঁনঁ! গাঁয়েঁ হাতঁ দিঁবিঁ নাঁ। সেও কম কিসে! ভূতের কাপড় ধরে টানাটানি শুরু করে দিল।
ওর এভাবে টানাটান দেখে আমারও ভয় কেটে গেল। আমিও ওর সঙ্গে যোগ দিলাম।ভূতের চেহারা দেখার ইচ্ছা আমারও হলো।দু’জনের টানাটানিতে ভূতের গায়ের সাদা কাপড়টা খুলে গেল।
একি! এ তো আমাদের ক্লাসের ভল্টু। ওর পরিচয় প্রকাশ পাওয়াতে বেচারা কাঁদতে লাগল।আমাদেও ভয় দেখাতে এসে বেটা নিজেই নাকানি-চুবানি খেয়ে গেল।দু’জনে মিলে আচ্ছামত ধোলাই দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। সেদিন থেকে ভূতের প্রতি আমিও বিশ্বাস হারালাম। ভয় পেলেই মনে হতো , ভূত বলতে কিছুই নেই।এসব হচ্ছে মনের ভীতি। সুমনের ভূতের প্রতি এত কৌতূহল থাকাতেই তো ভূতটাকে ধরতে পেরেছিলাম।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×