somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত, আশাহত দেশ এবং সরকারের আচরণ

০১ লা জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত আশাহত করেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে। একই সাথে সারা দেশই কষ্ট পেয়েছে। এরকম একটি অবকাঠামো দেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে জাপান বা এশিয়ান ডেভেলেপমেন্ট ব্যাংকের প্রতিশ্রুতিও বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ এটি ছিল একটি সিন্ডিকেট ফিনান্সিং ।
বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে অনেক দিন আগেই কিন্তু সরকার তার তোয়াক্কা করেন নাই। সরকারের একগুয়েমির জবাব এসেছে অত্যন্ত কঠিনভাবে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠান এর দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিল এমন অভিযোগ বিশ্বব্যাংক করেছে এবং কানাডার তদন্তে তা বের হয়ে এসেছে। সরকার বলছে যে ঘটনা ঘটেনি সে ঘটনায় দুর্নীতি হয়েছে তা বলা যাবে না। এই কথাটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। খুন করার আগে খুনের পরিকল্পনা যেমন অপরাধ, ডাকাতি করার আগে ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়া যেমন অপরাধ তেমনি ঘুষ খাওয়ার আগে তার পরিকল্পনাও অপরাধ। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়-- এ রকম একটি পরিকল্পনা হয়েছে তাহলে নি:সন্দেহে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়। মূলত সরকারের কাছের লোকজন এর সাথে জড়িত থাকায় বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে।
যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন পদ্মাসেতু নির্মিত হবে যথাসময়ে। ভিত্তিপ্রস্তুর হয়তো স্থাপিত হবে। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হবে কিন্তু মানুষের আস্থা আর বিশ্বাস কি ফেরত আসবে?
সরকারের আত্মম্ভরী আচরণ পুরো দেশকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
বর্তমান বাজার অর্থনীতিতে একটি দেশ কখনো একা চলতে পারে না। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানকে অবজ্ঞা করার সাথে সাথে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বন্ধুর সংখ্যা আরো কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার সাথে কুটনৈতিক জ্ঞান প্রয়োগ করার প্রয়োজন ছিল যা সরকার করতে পারে নাই।
ধরে নেই বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা। তাহলে আমাদের হাতে কি প্রমাণ ছিল যাতে তাকে মিথ্যা বলে ধরে নেওয়া যায়? তাহলে সেই মিথ্যাকে আমরা প্রমাণ করে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত যে অন্যায্য সেটি বলা যেত। বিশ্বব্যাংকের সাথে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার জন্য win-win কোনো ফর্মুলা কি বের করা যেতো না? এত উপদেষ্টা, এত বাগা বাঘা কূটনীতিক বা রাজনীতিক তারা কি করেন? বিশ্বব্যাংকও কিন্তু এই চেষ্টা করেনি, তারা হয়তো এই বিনিয়োগ বন্ধ করার কোনো অজুহাত খুজছিল আর আমরা তাদের অনুযোগ অভিযো অবজ্ঞা করে তার পথ করে দিয়েছি। আসলে এর মধ্য দিয়ে দেশকে পরাজিত করা হয়েছে।
সরকারের আত্মম্ভরী এই আচরণ অগ্রহণযোগ্য। হতে পারে সরকার ধোয়া তুলসী পাতা কিন্তু সেটি কি প্রমাণ করা গেলো? সাধারণ মানুষ কি ভাবলো? তারা ভাবলো সরকারের অহংকারে পদ্মা সেতু পিছিয়ে গেলো। দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষের বিড়ম্বনা বাড়লো। ২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার রূপকল্প কল্পলোকে যাওয়ার উপক্রম হলো।
তারপরও হয়তো পদ্মা সেতু নির্মান হবে। হয়তো বিকল্প পথও পাওয়া যাবে। এর মধ্য দিয়েও কিন্তু দূরত্ব বাড়বে, কমবে না। এখন সেই কোল্ড ওয়ারের যুগ নেই। বিশ্ব এখন এক মোড়ল দ্বারা শাসিত। অন্য কোনো পরাশক্তি পাশে থাকলে অপর পরাশক্তিকে অবজ্ঞা করা যায়। কিন্তু বর্তমান যুগে প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মত উপযুক্ততা ও সৃজনশীলতা থাকা খুবই প্রয়োজন।
সরকারের এই ব্যর্থতায় কেউ কেউ খুশী। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার এর মাশুল সকলকেই দিতে হবে। যে ব্যর্থতার জন্য আজ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে ভবিষ্যতে তার চেয়ে কম মাত্রার ব্যর্থতার জন্য অধিক মূল্য দিতে হবে। আর সেজন্য সকল রাজনৈতিক দলেরই ক্ষমতায় যাওয়ার পরিবর্তে নিজেদের সৃজনশীল যোগ্যতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
আর তা না হলে এই দেশ নিয়ে যে স্বপ্ন তা দিবাস্বপ্নে পরিণত হবে আর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার "পরি" উড়ে যাবে থাকবে শুধুই মিছেই "কল্পনা"।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×