somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঁচটি পুরোনো গদ্য...

০১ লা জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লৌকিক গল্পরাজ্যের ঘ্রাণে
****************

পৃথিবীর সবচাইতে ভালো গল্পকার সম্ভবত নাপিতরা। এই পারদর্শীতা খুব আস্তে আস্তে সহজভাবে তৈরী হয়। তাদেরকে একইসাথে কয়েকটি কাজ করতে হয়। যার চুল কাটা বা দাড়ি শেভ করা হচ্ছে তার যাতে কোনভাবেই বিরক্তি উৎপাদন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। আর যারা পাইপলাইনে আছেন, একটু পরেই যাদের চুল কাটা হবে তাদেরকে খুব সুক্ষভাবে ধরে রাখা এবং প্রতিমুহূর্তে যারা আসছে তাদেরকেও পাইপলাইনে ঢুকিয়ে দেবার কাজটিও সুন্দরমতো করতে হয়। এর জন্য তাকে যেটা করতে হয়- সেটা হলো চমৎকার সব বিষয়তুলে এদেরকে গল্পের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া। অনেক ক্ষেত্রেই গল্প বলার কাজটি এই জনগনেরই কেউ করে থাকেন আর নাপিত ভদ্রলোক বিষয়টি পরিচালনা করেন। তথাপি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই গল্প বলার কাজটি তিনি নিজেই করেন। তাদের স্টকও যথেষ্ট সমৃদ্ধ হয়ে থাকে।

রবি নাপিত আমার শৈশবের এক অলীক গল্পকারের নাম। উনার গল্পের চাইতে উনার নাপিতশালা অতিমাত্রায় সমৃদ্ধ ছিলো। উনি কোন দোকান দিয়ে এই ব্যবসা পরিচালনা করতেন না। এটা ব্যবসা ছিলো কী না এটা এখনো ভাবায় আমাকে। রবি নাপিতের নাপিতশালা ছিলো একটা বিশাল বড় ছায়াঘেরা বাগানের ভেতর। সেখানে অসংখ্য জাতের গাছ। সেই বাগানের ঠিক মাঝখানে একটি ছোট্ট বেড়াবিহীন ঘর। সেখানেই তার কর্মক্ষেত্র। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো এই রবি নাপিতকে আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করতাম। এর আগে রবীন্দ্রনাথের নাম শুনেছি ছবি দেখেছি এবং জেনেছি তিনি আমাদেরই এলাকার লোক। এদিকে রবি বাবুর কাছে চুল কাটতে যাওয়া হবে শুনতে শুনতে গড়িয়ে যাচ্ছিল দিন। একদিন বাবার সাথে উনার নাপিতশালায় গিয়ে আস্তে আস্তে ভেঙ্গে গেল ভুল। উনাকে নতুন করে আবিস্কার করলাম বেশ কয়েকবার চুল কাটাবার পর। উনি আমাদের প্রাইমারী স্কুলের হেডমাস্টারের ছোটভাই ছিলেন। এবং উনার মেয়ে (সাধনা আপা) একই স্কুলে আমাদের শিক্ষিকা ছিলেন।
এই নাপিতশালাটি ছিলো পদ্মানদীর তীরঘেঁষা। রাজবাড়ী আর কুষ্টিয়ার প্রায় সংযোগস্থলে; ওপারে পাবনা। পশে একটি কুয়া ছিলো, সেও এক রহস্যের আধার। জীবনে প্রথম পদ্মা নদী দর্শন, এই চুল কাটা সুত্রেই।

তার গল্পগুলি হতো একটু আধিভৌতিক। জোছনার রাতের দুরন্ত ষাড়। মাথাবিহীন এক পালোয়ান। জিতেনের পোষা ভুত। মওলানা জ্বীন। মাছপ্রিয় নাকি সুরের নৈশপ্রহরী। সেইসব ছায়া ছায়া রোদের ভেতর গল্পগুলি অদ্ভুতভাবে মানিয়ে যেত। বুকের গভীরে কোন অযান্ত্রিক ঘুমের ভেতর এখনো তাকে সাজিয়ে রেখেছি। রবি নাপিত নেই অনেককাল হলো। সেই ছায়াময় গাছগুলির একটিও নেই। নদী আরও কাছে চলে এসেছে। কুয়োটি একদম নদীর পাশ ঘেষে দাঁড়ানো- শেষবার যখন দেখেছি। এর পরের বার কুয়োটিকে দেখা যাবে কী না কে জানে। এইসব অজানার ভেতরও কোথাও একটি স্নিগ্ধতা ঠিকই থেকে যায়। আমাকে চুপচাপ নিয়ে যায় একটা ছায়াগন্ধী জানালার কাছে।

কদমের জন্য কয়েক লাইন
****************

এসেই গেল মেঘবতী জলের দিন। বর্ষাকালকে আরো একবার স্বাগত জানাই। সময় অসময়ের ঝুমম বৃষ্টি। নাগরিক জীবনের ক্লান্তির মাঝেও মন উদাস হতে চায়। জানালার বাইরে হাত চলে যাচ্ছে। চীনে বাদামের অভাব বোধ হচ্ছে। বালকবেলার কাগজের নৌকার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমার এবং আরও অনেকের। একটা শান্তি শান্তি ভাব। কী অদ্ভুত। এসে গেল ছাতা আর বর্ষাতির দিন। যদিও আমরা এই দারুন প্রয়োজনীয় জিনিস দুটি বহন করতে দ্বিধা করি। যদি ইগোতে লাগে... কে কী ভাবে সেই ভয়ে।

আমরা আবারো রাস্তায় নামবো। মাঠে মাঠে ফুটবল খেলবো। গায়ে কাদা মাখামাখি করে বাড়িতে ফিরবো। এবং ফেরার আগে চায়ের দোকানে চা খাবো। মাটির চুলোতে কাঠালের বিচি পোড়ানো হোক বা না হোক আমরা চিনে বাদামের কথা ভাববো। এবারের বর্ষায় আমরা রাস্তায় রাস্তায় বৃষ্টি উৎসব করবো। ঢাবি এলাকা, ফুলার রোড, ধানমন্ডি, বেইলি রোড । বুয়েট বাজারে এসে পিচ্চিদের সাথে একাত্ম হয়ে রাস্তা বন্ধ করে ক্রিকেট খেলবো।
কোন কোন বারান্দায় অদ্ভুত কোন বালিকা আমাদের খেলা দেখতে আসবে। বৃষ্টিকে ছূঁতে আসবে। কাগজের নৌকাটি ভাসিয়ে আমাদের দেখে লজ্জা পাবে। আমরা থোক থোক বর্ষায় সেইসব জানালায় কথা ভাববো।
আর কদম ফূলের জন্য অপেক্ষা করবো।
কিন্ত শহরে কদম ফুলের বড্ড অভাব। কারন কেউ একজনকে গাছটা লাগাতে হবে।

মাটি প্রস্তত হয়ে আছে। চলেন সবাই অন্তত একটা করে গাছ লাগাই। যেকোন গাছ হোক। যে বাড়িতে আপনি থাকেন তার আশেপাশ কোথাও। অন্তত একটা !! দশবছর পরে আপনি হয়তো এ বাড়িতে থাকবেন না কিন্ত আপনার লাগানো গাছটি থেকে যাবে। আর সেটি যদি কদম গাছ হয় দেখবেন কোন এক কিশোর তার প্রেয়সীর জন্য রাত গভীরে কদম ফুল নিতে এসছে।
আমরা যদি এই বর্ষায় সবাই একটি করে গাছ লাগাই। মহানগরী একদিন সবুজে সবুজে ভরে যাবে। শোনা যাবে পাতার সবুজ অভিমান। হয়তো কিছূ বছর সময় লাগবে কিন্ত এমন একদিন আসবে যেদিন যেদিন সবুজের এই আলোড়নের পাশাপাশি পাখির গানেও মুখরিত হবে এই প্রিয় মহানগরী, জলাশয় গুলি সবুজ জলে পূর্ন হয়ে থাকবে। নদীতে হয়তো নাব্যতাও ফিরে আসতে পারে। এক ছায়ানগরীতে পরিনত হবে এ শহর, এ দেশ। তখন কোন এক বালক তার প্রেমপত্রে লিখবে...

"বরষার এই মেঘে তোমায়
পাঠালাম কদম;
দিও একটু ভালোবাসা
দুঃখ কিছূ কম।"

আস্থার গোপন সিন্দুক
*************

১.
আব্বাকে ভীষন ভয় পেতাম। কথাটা প্রেজেন্ট পাস্ট ফিউচার তিন টেন্সের জন্যই প্রযোজ্য। টেন্স আব্বার কাছ থেকেই শেখা। কারন আব্বা ছিলেন আমাদের স্কুলের অ্যাসিটেন্স হেড স্যার। পড়াতেন ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র।
ক্লাস এইটে পড়ার সময় আমি ভয়াবহ রকমের মানসিক ঝামেলার ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। অন্য কোন জগতে বাস করতাম। পড়ালেখার বিষয়গুলো কোনভাবেই গভীরভাবে মাথায় ঢুকতো না। ক্লাস সিক্স সেভেনে আব্বাকে সরাসরি টিচার হিসেবে পাইনি। এইটে এসে পেলাম। প্রথম ক্লাসে লিখতে দিলেন ট্রানস্লেশন। একটাও পারলাম না। এরপর বছরের মাঝামাঝিতে ভয়েস চেন্জ নিয়ে এমন এক শিক্ষা দিলেন যে জীবনে আর ভয়েস চেন্জ ভুল হয়নি। কিন্ত অংক? প্রথম সাময়িকে ৩৩
দ্বিতীয় সাময়িকে ৩৪
বার্ষিক পরীক্ষায় ৩৫।

আব্বা সিদ্ধান্ত বললেন যখন কোন খাল লাফ দিয়ে পাড়ি দিতে হবে। যদি বোঝা যায় যে লাফ দিলে খালে পড়তে হবে তাহলে পিছিয়ে যেতে হয়। প্রথম থেকে দৌড় শুরু করে তারপর লাফ দিতে হয়। কী আর করা? ক্লাস এইটে আবারও থাকতে হলো। কিন্ত কিন্ত সবকিছু যেন পাল্টে যেতে লাগলো। তেমন কিছূ না শুধু বুঝতে পারলাম একটা অগ্রগতি হচ্ছে। স্কুলের অংক স্যারের কাছে স্কুল ছূটির পর একটা টোস্ট খেয়ে পড়তে বসতাম। উনি খুব আগ্রহ করে পড়াতেন। আমার নাকি সুক্ষ্ন বুদ্ধি। অংকের প্রেমে পড়ে যেতে থাকলাম। প্রথম সাময়িকে পেলাম ৭৮।

ক্লাস এইট থেকে নাইনে ওঠার সময় কিভাবে যেন প্রথম হয়ে গেলাম। সবাই অবাক হয়ে গেলো। আব্বার সেই তত্বের কথা ভুলিনি।
ক্লাস নাইনে প্রথম ক্লাস থাকতো আব্বার। সপ্তাহে পাঁচদিনই। প্রথম ক্লাসেই শুধূ রোল কল করা হয়। লজ্জায় পড়ে গেলাম। আব্বাকে স্যার বলবো কিভাবে?
তবুও বলতাম।
আব্বা বলতেন, রোল নম্বার ওয়ান ... .. .
তখন একটি শুকনোমত লাজুক ছেলে কোনমতে নিচু গলায় বলতো প্রেজেন্ট স্যার।

২.

আব্বা, আপনাকে সবসময় ভয় পেয়েছি। কিন্ত একদিন আমি জেনেছিলাম আপনি পৃথিবীর সবচাইতে রহস্যময় পুরুষ। আপনি এক দয়াবান সম্রাট। আপনাকে সালাম। যেকথা আপনার সামনে দাঁড়িয়ে কোনদিন বলা হবে না আপনাকে অনেক অনেক অনেক ভালবাসি। আজ আপনাকে ও পৃথিবীর সব বাবাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করছি। গল্পখোর মেয়েদের একমাত্র ভরসার নাম বাবা। কিন্তু আমি জানি আস্থার গোপন সিন্দুকটি থাকে যার কাছে তার নাম বাবা।



একটি পুরনো ক্লাসরুমের ভাঁজপত্র ছিঁড়ে পাওয়া
*****************************

ক্লাসে তিনি মাঝে মাঝে গান গাইতেন। বলরে সুবল... বল দাদা। আমি যখন টেনে পড়তাম তখন বাংলা ব্যান্ডের অ্যালবামটা রিলিজ হয়নি। কিছুদিনপর বাংলা ব্যান্ডের অ্যালবামে গানটা শুনে ওই ব্যান্ডটাকে তো আমার রীতিমত চোর মনে হচ্ছিল। পরে কাগজপত্র ঘেঁটে দেখি, না সব ঠিক আছে। গানটা তিনি প্রায়ই গাইতেন। কারন তাঁর নিজের নামও সুবল। মাঝে মাঝে সজলকে তিনি গানটা গাইতে বলতেন। তিনি পড়াতেন ইংরেজি গ্রামার। আমি আর সজল তখন দুই বালিকাকে দেখব বলে লাস্ট বেঞ্চে বসতাম। আমার আর সজলের পছন্দের দুই বালিকাও তাদের ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসতো সেখান থেকে আমাদের লাস্ট বেঞ্চ দেখা যেত। সেই এক রোদের ইতিহাস। কোন বাক্য ব্যয় না করেও কত কথা বলা যায়। এমনকি না তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে থেকেও কত অদৃশ্যবাক্যবিনিময় অনুভুতির পথে এসে যেতে পারে...

লাস্ট বেঞ্চে বসে আমরা জেমসের গান গাইতাম। আমরা তখন পান্জাবী পড়তাম। জেমসের কাছ থেকেই মূলত আমাদের পুরুষ হতে শেখা। একজন পুরুষ মানুষের কত যে বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে।

ঝামেলা যা করার করলেন সুবল স্যার। তিনি আমাদেরকে কিছুতেই পেছনে বসতে দিবেন না। আমাদের উপর আদেশ হলো যেন সামনের বেঞ্চে বসি। এটা আমার আর সজলের জন্য কারাবাসের মত ছিল। আমরা যেটা করলাম সেটা হলো সুবল স্যারের ক্লাসটা শুধু সামনের বেঞ্চে বসতাম। বাকী ক্লাসগুলো পেছনের সিটে। ও হ্যাঁ আরেকটা ক্লাস বাধ্য হয়ে সামনের বেঞ্চে করতে হতো। সেটা হলো বাবার ক্লাস। ইংরেজি প্রথম পত্র।

সুবল স্যার যে বাজে কাজটা করতেন তা হলো ক্লাসে ঢুকেই কোন কারণ ছাড়াই কয়েকজনকে বেত দিয়ে মারতেন। এদের মধ্যে আমি ও ছিলাম। সজল আমার কাছেই সবসময় বসতো তারপরও তাকে কখনো মারা হতো না। এর কারণটা একসময় বের করে ফেললাম। দেখলাম যারা যারা স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায় না তাদেরকেই পেটানো হচ্ছে। ক্যালকুলেশন মেলানোর দুইসপ্তাহ পর্যন্ত কোন প্রতিবাদ করিনি। শিওর হয়েছি। শিওর হবার পর ভাবছিলাম এই নির্যাতন বন্ধ করতেই হবে। শরীরে আগুণ জ্বলছিল। তারপর এক শনিবার। প্রথম ক্লাস সুবল স্যারের। স্যার এসেই আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। এই ব্যাটা পান্জাবী পরে আসছিস ক্যান? বলেই বেত উঁচু করে মারবেন। এর মধ্যে আমি দাঁড়িয়েছি। উনিও বেত মারলেন আমি ধরে ফেললাম। তারপর একটা হ্যাঁচকা টান। পান্জাবী পরে আসছি তো কী হইছে? এই তো প্রথম না। দৈনিকই তো পান্জাবী পড়ি। তো সমস্যা কী? স্কুলে কোন ড্রেসকোড আছে? নাই তো।
আপনি ক্যান দৈনিক আমাদের মারেন খুব ভালো করে জানি। খবরদার। আবার যদি মারেন তো আপনার খবর আছে।
চিৎকার করে বলছিলাম কথাগুলো। তারপর বেত ছুঁড়ে ফেলে দিলাম ক্লাসের ভেতরেই দুরে একটা জায়গায়।
স্যার চুপ।
আমি ভেবেছিলাম স্যার ক্লাস থেকে বের হয়ে যাবেন। তারপর আব্বাকে ডেকে নিয়ে আসবেন। কারন আব্বা সুবল স্যারেরও স্যার। অথবা হেডস্যারকে ডেকে এনে আমার শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। আমি প্রস্তত ছিলাম। প্ল্যানটা একদিনে করিনি। ডেকে আনলে সবকথা বলে দেবো। কাকে মারা হয় আর কাকে মারা হয় না একটা তালিকা সাদা কাগজে লেখা ছিলো আমার কাছে।

কিন্তু সেইদিন চুপচাপ কোন মতো ক্লাস শেষে হয়েছে। কোন এ্যাকশন নেয়া হয়নি। এমনকি তিনি তাঁর কোন সহকর্মীর সাথে এই ঘটনা শেয়ার পর্যন্ত করেন নি।

বহুবার স্কুলে আসার আগে আব্বার সাথে ভাত খেতে খেতে ইচ্ছে করেছে আব্বাকে বলি এই ঘটনা। কিন্তু বলিনি।

সুবল কুমার পাল। আপনি হয়তো সেইদিন থেকে আমাকে অপছন্দ করেন কিন্তু আমি আপনাকে অবশ্যই অসম্ভবরকম শ্রদ্ধা করি। একজন মহান শিক্ষক হিসেবে। এই শ্রদ্ধা কখনোই ম্লান হবে না। আর কেউ না জানুক ১১০ নাম্বার কক্ষ জানে আপনার জন্য আমার কোন ঘৃনা কিংবা অশ্রদ্ধা নেই। ক্লাসরুমের পুরনো ভাঁজপত্রকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। যদি সেসব রোদের ভেতর আরো একবার যাওয়া যায়।


কাগুজে রঙের বাহাদুরি
**************

ছোটবেলায় একধরনের ছবি পাওয়া যেতো একপাশে ক্যালেন্ডার অন্যপাশে কোন তারকার ছবি।[এর নাম জানিনা] জেমসের ছবি আমার খুব প্রিয় ছিল। পরে হাসান আর আইয়ুব বাচ্চুর ছবিও কিনতাম। অদ্ভুত সুন্দর এই জিনিসের দাম ছিল মাত্র এক টাকা। ডাবল সাইজ দুই টাকা।

তাছাড়া বিভিন্ন সাইজের পোস্টার পাওয়া যেত সেগুলোও কিনতাম। বড়গুলো কিনতে পারতাম না। কারন বাড়িতে পোস্টার ঝোলানো হলে কেয়ামত হয়ে যাবে। এবং অবধারিত ভাবেই সেই কেয়ামত নিয়ে কোন সিনেমা নির্মিত হবে না। তাই পোস্টার কেনা হতো তবে ম্যাপ ছাড়া অন্য কোন পোস্টার ঝোলাতে পারিনি। তৌকির আহমেদ এর ছবিওয়ালা একটা পোস্টার খুব বেশী প্রিয় ছিল্ উনি ওখানে হলুদ রঙের বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বিপাশা শমী মিমি ও প্রিয় হয়ে ওঠেন। শমীর একটা পোস্টার ছিল সেখানে তিনি ফোর হানড্রেড টাইপ একটা ক্যামেরায় চোখ রাখছেন।

ছবি টানানোর ব্যাপারটা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ভেদে বিভিন্ন রকমের হয়। যেমন নাপিতের দোকানে বিভিন্ন নায়ক-নায়িকার ছবি রাখা হয়। তবে সেখানে দেশী নায়ক-নায়িকাদের রাজত্বটা বেশী। সাথে দুএকজন হিন্দু দেব-দেবীর ছবি অবশ্যই থাকে। কারন বেশীরভাগ নাপিতই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। থাকে বলছি এই কারনে যে এখনো এটা দেখি। বদলায়নি দেখে ভালো লাগে।
স্টুডিওর দোকানে গরম গরম সব ছবি ঝোলানো থাকতো। এখানে অবশ্য ইন্ডিয়ান নায়িকাদের রাজত্ব। আর কেউ নাই। এখন আর খুব একটা দেখিনা।

স্কুলের লাইব্রেরীতে শত শত মহামনীষিদের ছবি টানানো থাকতো। ক্যালেন্ডার থাকতো, সাইন্সের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ছবি থাকতো নাক কান এসব। আমি প্রাইমারীতে স্কুলে ভর্তি হবার আগেই আব্বার সাথে আব্বার স্কুলে যেতাম মুলত এসব বিচিত্র ছবি দেখার লোভে। অন্যান্য স্যারদেরকে প্রশ্ন করতাম উনি কে? এটা কী সেটা কি?! উনারা তখনো আমার শিক্ষক হননি। তাই নির্দ্বিধায় আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেন আর একে একে আমার মনের ভেতর গেঁথে যেতে থাকেন আর আমারই অংশ হতে থাকেন জীবনানন্দ দাশ, জন ডান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জেমস ওয়াট, টমাস হারডী, টমাস আলভা এডিসন, রবার্ট ফ্রস্ট, আলেকজান্দার ডুমো, আইনস্টাইন, হ্যান্স ক্রিশ্চান অ্যান্ডারসন সহ আরও অনেকে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×