জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর মুখে একটি কথা প্রায়ই শুনছি। মাইনাস ওয়ান। অর্থাৎ তিনি রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়াকে বিতাড়িত করার হুমকি দিয়েছেন । তিনি বলেন, মাইনাস টু বলে যে কথা বলা হয়, তার মানে যুদ্ধাপরাধীদের প্লাস করা। যুদ্ধাপরাধীকে রক্ষা করতেই এ ফর্মুলা। এখন হবে মাইনাস ওয়ান, মাইনাস যুদ্ধাপরাধী, মাইনাস খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ‘সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন’ অভিযোগ করে জাসদ সভাপতি আরো বলেন, বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দেশের দুই প্রধান দলের নেতা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার পর ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ আলোচনায় আসে। দুই নেত্রীকে দেশের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়াই ছিল কথিত সেই ফর্মুলার উদ্দেশ্য। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া ও তার দল শুরু থেকেই এ বিচারের বিরোধিতা করে আসছে। বিএনপির এই অবস্থানের সমালোচনা করে জাসদ সভাপতি বলেন, যুদ্ধাপরাধী, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে, তাতে সফল হতে হলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালাতে হবে। তাদের (যুদ্ধাপরাধী) সঙ্গ ত্যাগ না করলে তাকে (খালেদা) রাজনীতির মঞ্চ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
পেছনের কথা-"যানজট, বিদ্যুৎ-গ্যাস সমস্যা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বহুলাংশে গত বিএনপি-জামায়াত সরকারই দায়ী। বিএনপি তাদের দুই টার্মের শাসনামলে খাম্বা বিক্রিতে যত গুরুত্ব দিত, গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের বেলায় এর ক্ষণাংশ গুরুত্বও দিত না। বিএনপির ১৯৯১-৯৬ সালের শাসনামলে জাপান ঢাকা শহরে ১১টা ফ্লাইওভার নির্মাণ করে দিতে চেয়েছিল নিজের অর্থে ও কারিগরি ব্যবস্থাপনার আওতায়। বিএনপি সরকার সেই অফার প্রত্যাখ্যান করেছিল। বিএনপি সরকার চেয়েছিল ১১টা ফ্লাইওভারের কাজে তাদের পছন্দসই একজন কমিশন এজেন্টের নিয়োগ। তদুত্তরে জাপান সরকারের বক্তব্য ছিল ১১টা ফ্লাইওভার দেওয়ার প্রস্তাবটা তো ব্যবসা না, জাপান সরকার মিনি-মাগনায় সেটা করে দিচ্ছে-এখানে কমিশন দেওয়ার কিংবা কমিশন এজেন্ট নিয়োগের প্রশ্ন আসে না। বিএনপি সরকারের প্রথম টার্মে বিনে পয়সায় সাবমেরিন কেবলও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেখানেও বিএনপি সরকারের তরফ থেকে কমিশন এজেন্ট নিয়োগের শর্ত দেওয়া হয়। ফলে সে সময় সাবমেরিন কেবলের কানেকটিভিটি পায়নি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টার্মে (বিএনপির) সাবমেরিন কেবলের সংযোগ দেওয়া হয় বটে, তবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে। এই কর্মকাণ্ডে অবশ্যই কমিশন এজেন্ট ছিল।
তাদের ২০০১-২০০৬ এর শাসনামলটা কি কোনো স্বর্ণযুগ ছিল? হ্যাঁ, তা বলাও যেতে পারে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সেই আমলটা দুর্নীতি, অনুত্পাদনশীলতা এবং জঙ্গিবাদ উত্থানের স্বর্ণযুগ ছিল। কেউ কেউ বলে, তখন আজান দিয়ে দুর্নীতি হত। দুর্নীতি দমন কমিশন নামে একটা সংস্থা ছিল; সাংবিধানিক পদে দু-দুবার কাজ করার পরও তৃতীয়বারের মতো একজন বৃদ্ধ বিচারপতিকে প্রধান দুর্নীতি দমন কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কমিশনের বাকি দুজন কমিশনারও ছিলেন বিভিন্ন চাকরি থেকে দুবার-তিনবার অবসর নেওয়া এবং প্রায় লোলচর্ম বৃদ্ধ। এদের লোকবল বা ক্ষমতা কোনোটাই ছিল না। অনেকে বলে, কাজ না থাকায় এই তিন বৃদ্ধ অফিসে কে কত কাপ চা বা কফি বেশি খেয়েছেন তা নিয়ে বাহাস করতেন। এটা একটা রস-মধুর গল্পও হতে পারে। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কমিশনের যে কোনো ক্ষমতাই ছিল না এবং ঐ আমলে দুর্নীতি যে অপ্রতিরোধ্য এবং প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে উঠেছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আর জঙ্গিবাদ; সব সরকারের আমলে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের দৌরাত্ম্য ছিল কম বা বেশি। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জঙ্গিবাদ শুধু যে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল তাই নয়, বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তান বানাবার চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না সে সময়। বাংলাদেশের দুটি জেলা ছাড়া বাকি সব জেলা সদরে একই সময়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটাবার ঘটনা মানুষ নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি। এই জঙ্গিবাদী মহড়া যারা করেছিল, সেই জঙ্গিদের রাষ্ট্রীয় কর্তব্য হিসাবে ধরা, কারাবন্দি করা, শাস্তিদান দূরের কথা, বোমা বিস্ফোরণের এই ঘটনাকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি বিএনপি-জামায়াত সরকার।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ছিল সরকারি ছত্রছায়ায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। শাহ কিবরিয়া হত্যাকাণ্ড, আহসানউল্লাহ মাস্টারের হত্যাকাণ্ড, মঞ্জুরুল ইমামসহ আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীর হত্যাকাণ্ড, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা, রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীকে গ্রেনেড চার্জ করে হত্যার চেষ্টা, দশ ট্রাক অস্ত্র পাচারের ঘটনা, হাওয়া ভবন, দাউদ ইব্রাহিমের সাথে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতার সাক্ষাত্, সেখানে সরকারের হয়ে এনএসআই প্রধান রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর উপস্থিতি, হত্যা ও গ্রেনেড চার্জের মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, জজ মিয়ার নাটক, বিএনপি-জামায়াত সবই কি বিস্মৃত হয়েছে? মানুষ কিন্তু ভুলে নাই সেসব দানবীয় কাণ্ডের কথা। সন্ত্রাস-জঙ্গি কবলিত পাকিস্তানি স্টাইলে বাংলাদেশকে তারা দ্বিতীয় পাকিস্তান করে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা (অপচেষ্টা) চালিয়েছিল। সে কথা মানুষ ভোলেনি। ওরা ক্ষমতায় গেলে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের কৌশলই গ্রহণ করবে। একদিকে পশ্চিমা শক্তিকে ‘দৃঢ়’ আশ্বাস দেবে যে জঙ্গি দমনে তারা হবে আপসহীন-এই বলে উন্নয়ন সাহায্য আদায় করবে পশ্চিমা শক্তির কাছ থেকে, অন্যদিকে ভারতের বিরুদ্ধে, পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে জঙ্গি উত্থান এবং জঙ্গি তত্পরতায় সব রকমের সাহায্য বা পৃষ্ঠপোষকতা যুগিয়ে যাবে।
বিএনপি-জামায়াতের অতীত কার্যাবলি এত কলঙ্ক-লিপ্ত। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা দুর্নীতি এবং প্রতারণা ছাড়া জাতিকে বিশেষ কিছু দিতে পারেনি। সেই বিএনপি-জামায়াত এমন বড় গলায় বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ সরকার বলে, গণঅভ্যুত্থানের ভয় দেখায়, মধ্যবর্তী নির্বাচন চায়। সেই সাথে যুদ্ধপারাধীদের বিচার বাঁধাগ্রস্থ করার জন্য নানা ফন্দি ফিকির করছেন খালেদা। "তবে সবকথার মূলকথা-
খালেদার যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়া। ইনুর কথার যথাযর্থতা সেখানেই। খালেদা জিয়া প্রায়ই বলেন- দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। মুজাহিদ-নিজামীরা যুদ্ধাপরাধী নয়। যখন যুদ্ধাপরাধী ট্রাইবুনালে বিচার চলছে যুদ্ধাপরাধীদের, ঠিক তখন খালেদার এহেন মন্তব্য যুদ্ধাপরাধীদের প্রমোট করা ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশের রাজনীতিতে খালেদার এই মন্তব্য তাকে রাজনীতিতে অযোগ্যতাই প্রমাণ করে। ইনুর মাইনাস ওয়ান যথার্থতা দাবি করে।
মাইনাস ওয়ান থিওরি, পেছনের কথা ও খালেদার যুদ্ধাপরাধীতত্ত্ব
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব
সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
সততা হলে প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে
বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। ক্রেতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো থাকা উচিত:
(১) ওজন মাপার যন্ত্র কী ঠিক আছে?
(২) মিষ্টির মান কেমন?
(৩) মিষ্টি পূর্বের দামের সাথে এখনের দামের পার্থক্য কত?
(৪) এই দোকানে এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন
=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন
পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!
আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!
কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
কাঁচা আম পাড়ার অভিযান
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন